ঢাকা ১১:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গণঅভ্যুত্থানের গাথা-

বয়স্ক নারীকে বাঁচাতে গিয়ে শহিদ হন ঝিনাইদহের রাকিব

বিশেষ প্রতিনিধি

 

এখনও ফ্রিজে জমানো রয়েছে দুধ, গুড়, নারকেল, পুলিপিঠার পুর। নিস্তব্ধ ঘরের প্রতিটি জিনিস পরিপাটি সাজানো। টান টান করা বিছানার এক পাশে বালিস। পড়ার টেবিলে তাকে তাকে সাজানো বই। ড্রয়িং রুমে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে প্রিয় মোটরসাইকেল। তার পাশেই কাপড় ধোয়ার মেশিন। পানিশূন্য পানির ফিল্টারের ভেতরটা শুষ্ক, হালকা আয়রনের আস্তর। একটা পরিপূর্ণ বাড়িতে তিনজনের বসবাস। কিন্তু কোথাও যেন কেউ নেই। নেই কোনো শব্দ। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে যে ঝরে গেছে সহস্র নক্ষত্র। তেমনই এক নক্ষত্র মো. রাকিবুল হোসেন। যে বাড়িতে বিপ্লবী নক্ষত্রের ঝরে পড়া স্মৃতি জমা থাকে, সেখানে কি আর কখনো শোরগোল জমে? জমে না।

বৈষম্যবিরোধী জুলাই বিপ্লবের অন্যতম শহিদ রাকিব। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো একালের খুদিরাম ঝিনাইদহের এই কৃতি বীর সন্তান। এখনো পরিবারে থামেনি শোকের মাতম।

সম্প্রতি সবুজদেশ নিউজের সঙ্গে কথা বলেন শহিদ রাকিবুল হোসেনের বাবা আবু বকর সিদ্দিক ও মা হাফিজা খাতুন। জুলাই ২৪ এর ভয়াল সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণের সময় রাকিবুলের মা বারবার ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন।

আমার ছেলে পরপারের যাত্রী হয়েছে আজ ৮৩ দিন। এই দিনগুলো কত কষ্টের তা আমরা ছাড়া আর কেউ জানে না। রাতে বিছানায় ঘুমাতে পারি না। আমার খোকার সখের মোটরসাইকেল, পড়ার টেবিল, হেলমেট, বই-পত্র দেখলেই বুক ফেটে কান্না আসে। কান্না ছাড়া আর কোনো কিছুই নেই আমাদের। ছেলে হারানোর বেদনা যে কত কষ্টের তা কেবল বাবা-মা বোঝে। চোখের পানি মুছতে মুছতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাকিবুল হোসেনের বাবা আবুবকর সিদ্দিক।

মোবাইলে ছেলে রাকিবের ছবি দেখছেন মা।

বিমান বাহিনীর সাবেক মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আন্দোলনের সময় আমরা রাকিবকে ফোন করলে সে লোকজনের ভিড় থেকে সরে গিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলত। সে যে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, এটা সে আমাদের বুঝতে দিতে চাইতো না। এসব কথা রাকিবুলের সহকর্মীরা পরে আমাদের জানিয়েছে।

শহিদ রাকিবুলের মা হাফিজা খাতুন বলেন, ১৮ জুলাই ঢাকায় যখন আন্দোলন শুরু হয়। তখন আমরা ভয়ে ছিলাম। শুধু ভাবতাম আমার রাকিব অফিসে যাবে কীভাবে? ১৯ জুলাই শুক্রবার রাকিবকে ফোন করে বললাম, আব্বু অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফেরা যাবে না? আমার আব্বুটা বলেছিল, ফেরা যাবে না।

হাফিজা খাতুন আরও বলেন, ১৮ জুলাই রাত সাড়ে নয়টার সময় রাকিব আন্দোলনে গিয়েছে। ওইদিন তার বুকে রাবার বুলেট লাগে। রাতে বাসায় ফিরে আমার সঙ্গে কথাও বলেছে। কিন্তু আমাকে কিছুই বুঝতে দেয়নি।

কথাগুলো বলতে বলতে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন শহিদ রাকিবুলের মমতাময়ী মা। নিজেকে সামলে নিয়ে বলছিলেন-‘শুক্রবার (১৯ জুলাই) বেলা আড়াইটার পরে আমার ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়। তখনও তার বুকে রাবার বুলেট ছিল। রুটি আর ডিম ভাজি দিয়ে সকালের নাস্তা করেছিল আমার আব্বুটা।’ একথা বলেই আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন হাফিজা খাতুন।

তিনি জানান- শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাত আটটার দিকে একমাত্র ভাতিজির (বড় ভাইয়ের মেয়ে) সঙ্গে রাকিবের শেষ কথা হয়। রাকিবকে তার ভাতিজী ছোট আব্বু বলে ডাকত। ফোনে কথা বলার সময় রাকিবের ভাতিজী তাকে বলেছিল-‘ছোট আব্বু তুমি বাড়ি চলে আসো। গাড়ি না পেলে তোমার বাইক নিয়ে চলে আসো। না হয় তুমি অ্যাম্বুলেন্সে বাড়ি চলে আসো।

কে জানতো অবুঝ ছোট্ট ভাতিজীর সেই অস্পষ্ট ইঙ্গিত বাস্তবে পরিণতি পেয়ে যাবে! রাকিব তার বাড়ি ফিরেছে ঠিকই। প্রিয় বাইক কিংবা গাড়িতে নয়, বরং নিথর দেহে অ্যাম্বুলেন্সে চেপে।

রাকিবের গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রসঙ্গে তার মা হাফিজা খাতুন বলেন, শুক্রবার (১৯ জুলাই) মিরপুর ১১ তে মেট্রোরেলের নিচে আন্দোলনকারীদের মাঝে আমার ছেলে পানি বিতরণ করছিল। শিক্ষার্থীদের মাঝে সে যতক্ষণ ছিল, ততক্ষণ নিরাপদই ছিল। যখনই সে পানি বিতরণ শেষে শিক্ষার্থীদের থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে যায়, তখনই তাকে টার্গেট করে গুলি করা হয়। মেট্রোরেলের ওপর থেকে তার গলায় গুলি করা হয়। পরে রক্তক্ষরণে আমার ছেলেটা মারা যায়।

রাকিবের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করতো না। সে শুধু আমাকে বলেছিল, মা ছোট ছোট ভাই-বোনেরা আন্দোলন করছে। আমরা যদি বড় ভাই হয়ে ওদের পাশে না দাঁড়াই, তাহলে ওরা সাহস পাবে কোথায়?

রাকিব ঝোল গুড়, নারকেল ও পুলিপিঠা পছন্দ করতো জানিয়ে তিনি বলেন-আমি ঢাকায় যাবো বলে আমার রাকিব নতুন বাসা নিয়েছিল। আমি দুধ, নারকেল, ঝোল গুড়, আটা গুছিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু সেই সবকিছু তেমনই আছে। আমার বাবাটা আর নেই। এই সব খাবার আমি কি আর কোনো দিন মুখে নিতে পারব?’ একথা বলেই হুহু করে কেঁদে উঠেন রাকিবের মা।

শহিদ রাকিবের বাবা আবু বকর সিদ্দিক বলেন-‘আমার ছেলের বন্ধু পিয়াস জানিয়েছে, একটা বয়স্ক মহিলা রাকিবের সামনে এসে পড়ে যায়। ওই সময় রাকিব তাকে টেনে তুলে আনতে এগিয়ে গিয়েছিল। আর তখনই মেট্রোরেলের ওপর থেকে নিখুঁত টার্গেটে আমার ছেলেকে গুলি করা হয়।’

বাড়িতে থাকা শহিদ রাকিবের বাইক দেখিয়ে তার বাবা বলেন, প্রতিদিন এই বাইক আমি যত্ন করে মুছে রাখি। বাইকটা হাত দিয়ে স্পর্শ করি। কখনো কান্নাকাটি করি। বাইকটা স্পর্শ করলে মনে হয়, আমার রাকিব বোধহয় আমার স্পর্শ টের পাচ্ছে।

রাকিবের ব্যবহৃত ওয়াশিং মেশিন স্বযত্নে রেখে দিয়েছেন মা হাফিজা খাতুন। ঘুরে ফিরে তিনি ওয়াশিং মেশিনের কাছে যান। ছেলের হাতের স্পর্শ অনুভব করার চেষ্টা করেন। ছেলের ব্যবহৃত হেলমেট হাতে নিয়ে আনমনে বসে থাকেন মা হাফিজা খাতুন। অঝোরে চোখ বেয়ে ঝরে পড়ে ছেলে হারানোর শোক।

শহিদ রাকিবুল হোসেনের বাবা-মা বলেন, আমাদের ছেলেরা একটা সুন্দর, মানবিক, সহিষ্ণু ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে রাজপথে আত্মদান করেছে। সরকারের কাছে অনুরোধ, যারা শহিদ হয়েছে তাদের যেন এই দেশ এই জাতি ভুলে না যায়। ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতনে হাজার হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। রাষ্ট্র যেন তাদের দায়িত্ব নেয়। এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন স্বাধীনতা যেন, মলিন না হয় সেই কামনা সরকার, রাষ্ট্র ও জাতির কাছে।

সবুজদেশ/এসএএস

About Author Information
আপডেট সময় : ০৬:৫২:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫
৮৪ Time View

গণঅভ্যুত্থানের গাথা-

বয়স্ক নারীকে বাঁচাতে গিয়ে শহিদ হন ঝিনাইদহের রাকিব

আপডেট সময় : ০৬:৫২:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫

 

এখনও ফ্রিজে জমানো রয়েছে দুধ, গুড়, নারকেল, পুলিপিঠার পুর। নিস্তব্ধ ঘরের প্রতিটি জিনিস পরিপাটি সাজানো। টান টান করা বিছানার এক পাশে বালিস। পড়ার টেবিলে তাকে তাকে সাজানো বই। ড্রয়িং রুমে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে প্রিয় মোটরসাইকেল। তার পাশেই কাপড় ধোয়ার মেশিন। পানিশূন্য পানির ফিল্টারের ভেতরটা শুষ্ক, হালকা আয়রনের আস্তর। একটা পরিপূর্ণ বাড়িতে তিনজনের বসবাস। কিন্তু কোথাও যেন কেউ নেই। নেই কোনো শব্দ। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে যে ঝরে গেছে সহস্র নক্ষত্র। তেমনই এক নক্ষত্র মো. রাকিবুল হোসেন। যে বাড়িতে বিপ্লবী নক্ষত্রের ঝরে পড়া স্মৃতি জমা থাকে, সেখানে কি আর কখনো শোরগোল জমে? জমে না।

বৈষম্যবিরোধী জুলাই বিপ্লবের অন্যতম শহিদ রাকিব। বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো একালের খুদিরাম ঝিনাইদহের এই কৃতি বীর সন্তান। এখনো পরিবারে থামেনি শোকের মাতম।

সম্প্রতি সবুজদেশ নিউজের সঙ্গে কথা বলেন শহিদ রাকিবুল হোসেনের বাবা আবু বকর সিদ্দিক ও মা হাফিজা খাতুন। জুলাই ২৪ এর ভয়াল সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণের সময় রাকিবুলের মা বারবার ডুকরে কেঁদে উঠছিলেন।

আমার ছেলে পরপারের যাত্রী হয়েছে আজ ৮৩ দিন। এই দিনগুলো কত কষ্টের তা আমরা ছাড়া আর কেউ জানে না। রাতে বিছানায় ঘুমাতে পারি না। আমার খোকার সখের মোটরসাইকেল, পড়ার টেবিল, হেলমেট, বই-পত্র দেখলেই বুক ফেটে কান্না আসে। কান্না ছাড়া আর কোনো কিছুই নেই আমাদের। ছেলে হারানোর বেদনা যে কত কষ্টের তা কেবল বাবা-মা বোঝে। চোখের পানি মুছতে মুছতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাকিবুল হোসেনের বাবা আবুবকর সিদ্দিক।

মোবাইলে ছেলে রাকিবের ছবি দেখছেন মা।

বিমান বাহিনীর সাবেক মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আন্দোলনের সময় আমরা রাকিবকে ফোন করলে সে লোকজনের ভিড় থেকে সরে গিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলত। সে যে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, এটা সে আমাদের বুঝতে দিতে চাইতো না। এসব কথা রাকিবুলের সহকর্মীরা পরে আমাদের জানিয়েছে।

শহিদ রাকিবুলের মা হাফিজা খাতুন বলেন, ১৮ জুলাই ঢাকায় যখন আন্দোলন শুরু হয়। তখন আমরা ভয়ে ছিলাম। শুধু ভাবতাম আমার রাকিব অফিসে যাবে কীভাবে? ১৯ জুলাই শুক্রবার রাকিবকে ফোন করে বললাম, আব্বু অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফেরা যাবে না? আমার আব্বুটা বলেছিল, ফেরা যাবে না।

হাফিজা খাতুন আরও বলেন, ১৮ জুলাই রাত সাড়ে নয়টার সময় রাকিব আন্দোলনে গিয়েছে। ওইদিন তার বুকে রাবার বুলেট লাগে। রাতে বাসায় ফিরে আমার সঙ্গে কথাও বলেছে। কিন্তু আমাকে কিছুই বুঝতে দেয়নি।

কথাগুলো বলতে বলতে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন শহিদ রাকিবুলের মমতাময়ী মা। নিজেকে সামলে নিয়ে বলছিলেন-‘শুক্রবার (১৯ জুলাই) বেলা আড়াইটার পরে আমার ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়। তখনও তার বুকে রাবার বুলেট ছিল। রুটি আর ডিম ভাজি দিয়ে সকালের নাস্তা করেছিল আমার আব্বুটা।’ একথা বলেই আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন হাফিজা খাতুন।

তিনি জানান- শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাত আটটার দিকে একমাত্র ভাতিজির (বড় ভাইয়ের মেয়ে) সঙ্গে রাকিবের শেষ কথা হয়। রাকিবকে তার ভাতিজী ছোট আব্বু বলে ডাকত। ফোনে কথা বলার সময় রাকিবের ভাতিজী তাকে বলেছিল-‘ছোট আব্বু তুমি বাড়ি চলে আসো। গাড়ি না পেলে তোমার বাইক নিয়ে চলে আসো। না হয় তুমি অ্যাম্বুলেন্সে বাড়ি চলে আসো।

কে জানতো অবুঝ ছোট্ট ভাতিজীর সেই অস্পষ্ট ইঙ্গিত বাস্তবে পরিণতি পেয়ে যাবে! রাকিব তার বাড়ি ফিরেছে ঠিকই। প্রিয় বাইক কিংবা গাড়িতে নয়, বরং নিথর দেহে অ্যাম্বুলেন্সে চেপে।

রাকিবের গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রসঙ্গে তার মা হাফিজা খাতুন বলেন, শুক্রবার (১৯ জুলাই) মিরপুর ১১ তে মেট্রোরেলের নিচে আন্দোলনকারীদের মাঝে আমার ছেলে পানি বিতরণ করছিল। শিক্ষার্থীদের মাঝে সে যতক্ষণ ছিল, ততক্ষণ নিরাপদই ছিল। যখনই সে পানি বিতরণ শেষে শিক্ষার্থীদের থেকে কিছুটা আলাদা হয়ে যায়, তখনই তাকে টার্গেট করে গুলি করা হয়। মেট্রোরেলের ওপর থেকে তার গলায় গুলি করা হয়। পরে রক্তক্ষরণে আমার ছেলেটা মারা যায়।

রাকিবের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করতো না। সে শুধু আমাকে বলেছিল, মা ছোট ছোট ভাই-বোনেরা আন্দোলন করছে। আমরা যদি বড় ভাই হয়ে ওদের পাশে না দাঁড়াই, তাহলে ওরা সাহস পাবে কোথায়?

রাকিব ঝোল গুড়, নারকেল ও পুলিপিঠা পছন্দ করতো জানিয়ে তিনি বলেন-আমি ঢাকায় যাবো বলে আমার রাকিব নতুন বাসা নিয়েছিল। আমি দুধ, নারকেল, ঝোল গুড়, আটা গুছিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু সেই সবকিছু তেমনই আছে। আমার বাবাটা আর নেই। এই সব খাবার আমি কি আর কোনো দিন মুখে নিতে পারব?’ একথা বলেই হুহু করে কেঁদে উঠেন রাকিবের মা।

শহিদ রাকিবের বাবা আবু বকর সিদ্দিক বলেন-‘আমার ছেলের বন্ধু পিয়াস জানিয়েছে, একটা বয়স্ক মহিলা রাকিবের সামনে এসে পড়ে যায়। ওই সময় রাকিব তাকে টেনে তুলে আনতে এগিয়ে গিয়েছিল। আর তখনই মেট্রোরেলের ওপর থেকে নিখুঁত টার্গেটে আমার ছেলেকে গুলি করা হয়।’

বাড়িতে থাকা শহিদ রাকিবের বাইক দেখিয়ে তার বাবা বলেন, প্রতিদিন এই বাইক আমি যত্ন করে মুছে রাখি। বাইকটা হাত দিয়ে স্পর্শ করি। কখনো কান্নাকাটি করি। বাইকটা স্পর্শ করলে মনে হয়, আমার রাকিব বোধহয় আমার স্পর্শ টের পাচ্ছে।

রাকিবের ব্যবহৃত ওয়াশিং মেশিন স্বযত্নে রেখে দিয়েছেন মা হাফিজা খাতুন। ঘুরে ফিরে তিনি ওয়াশিং মেশিনের কাছে যান। ছেলের হাতের স্পর্শ অনুভব করার চেষ্টা করেন। ছেলের ব্যবহৃত হেলমেট হাতে নিয়ে আনমনে বসে থাকেন মা হাফিজা খাতুন। অঝোরে চোখ বেয়ে ঝরে পড়ে ছেলে হারানোর শোক।

শহিদ রাকিবুল হোসেনের বাবা-মা বলেন, আমাদের ছেলেরা একটা সুন্দর, মানবিক, সহিষ্ণু ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে রাজপথে আত্মদান করেছে। সরকারের কাছে অনুরোধ, যারা শহিদ হয়েছে তাদের যেন এই দেশ এই জাতি ভুলে না যায়। ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতনে হাজার হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। রাষ্ট্র যেন তাদের দায়িত্ব নেয়। এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই নতুন স্বাধীনতা যেন, মলিন না হয় সেই কামনা সরকার, রাষ্ট্র ও জাতির কাছে।

সবুজদেশ/এসএএস