সবুজদেশ ডেস্কঃ

বাংলাদেশ সরকার প্রথমবারের মত ইসলামি বন্ড চালু করতে যাচ্ছে। ইসলামিক বন্ড বা সুকুক নামে এই বন্ড চালু করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রথম দফায় আট হাজার কোটি টাকার এই ইসলামি বন্ড ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই চালু করতে চায় সরকার। সেজন্য মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে।

ইসলামি বন্ড বা সুকুক কী?
বাংলাদেশে সরকারি বন্ড দুই ধরণের হয়-ট্রেজারি বিল এবং ট্রেজারি বন্ড। ট্রেজারি বিল হয় স্বল্প মেয়াদী, আর ট্রেজারি বন্ড হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী। যেমন- দুই থেকে দশ বছর।

বাংলাদেশে ব্যক্তি পর্যায়ে সঞ্চয়ের মাধ্যম হিসেবে বিভিন্ন সরকারি বন্ড, সঞ্চয়পত্র এবং প্রাইজবন্ড প্রচলিত ও জনপ্রিয়। বন্ডের মধ্যে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড এবং ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড চালু রয়েছে। এখন সাধারণভাবে বলা যায় ইসলামি বন্ড বা সুকুকও এক ধরণের সরকারি বন্ড।

প্রচলিত ট্রেজারি বন্ড সরকার ইস্যু করে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিলামের মাধ্যমে এর কেনা-বেচা ও সুদের হার নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত যেকোন প্রতিষ্ঠান এর নিলামে অংশ নিতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার রূপ রতন পাইন বলেছেন, অন্য ট্রেজারি বন্ডের মত একইভাবে ইসলামি বন্ড বা সুকুকও সরকার ইস্যু করবে।

কিভাবে এলো ইসলামি বন্ড?
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে দেশের মোট সঞ্চয় ও বিনিয়োগকারীদের ২৮ শতাংশ ইসলামি ধারায় বিনিয়োগ করতে চান। এর মানে হচ্ছে, তারা প্রচলিত ব্যবস্থার মত সুদ গ্রহণ বা প্রদান করতে আগ্রহী নন। সে কারণেই সরকার এই ইসলামি বন্ড চালুর ব্যাপারে আগ্রহী হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মি. পাইন বলেছেন, সাধারণত ঘাটতি বাজেট পূরণের জন্য সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থ ঋণ নেয়, সেটি মূলত নানা ধরণের বন্ড বিক্রির মাধ্যমে উত্তোলন করে। এখন ইসলামী বন্ড চালু হলে সেটি হবে সরকারের অর্থ সংগ্রহের নতুন একটি উৎস, যা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যয় করা হবে। বাংলাদেশের নাগরিক যেকোন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং ইসলামী ব্যাংকসমূহ সুকুক কিনতে পারবে। সাধারণ বন্ডে ইসলামি ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন একজন বিনিয়োগকারী। কিন্তু বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা নেই। সুকুক হবে পাঁচ বছর মেয়াদি এবং ছয় মাস অন্তর মুনাফা পাবেন একজন বিনিয়োগকারী। মুনাফার প্রাক্কলিত হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৪.৬৯ শতাংশ।

মি. পাইন বলেছেন, “দেশে প্রচলিত ইসলামী ব্যাংকগুলোর স্কিম যেমন ইসলামিক ইনভেস্টমেন্ট বন্ড চালু রয়েছে, তার মুনাফার হার ৩.৬৯ শতাংশ। এর সঙ্গে এক শতাংশ যোগ করে সুকুকের প্রাথমিক হার নির্ধারণ করা হয়েছে।”

সাধারণ বন্ডের সঙ্গে ইসলামি বন্ডের পার্থক্য কী?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক হাসিনা শেখ বলেছেন, সাধারণ বন্ডের সঙ্গে সুকুকের মূল পার্থক্য হচ্ছে এটি পুরোপুরি ইসলামি রীতি অনুযায়ী পরিচালিত হবে। এর মানে হচ্ছে এতে প্রচলিত বন্ড বা সঞ্চয় স্কিমের মত সুদের ব্যবহার থাকবে না। সুদের হার নির্দিষ্ট করা থাকে কিন্তু মুনাফার হার আগে থেকে নির্ধারণের উপায় নেই। সেটি বাৎসরিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের আয়-ব্যয়ের ওপর নির্ধারিত হয়।

অধ্যাপক হাসিনা শেখ বলেছেন, প্রচলিত বন্ড বা সঞ্চয়পত্রে সুদের হার নির্দিষ্ট থাকে, বিনিয়োগকারী যে অর্থ বিনিয়োগ করেন, তার ওপর একটি নির্দিষ্ট হারে অর্থ লাভ করেন। কিন্তু সুকুকের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী নির্দিষ্ট হারে কোন অর্থ পাবেন না। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ে ওই প্রতিষ্ঠানের আয় ও মুনাফা, যখন যেমন হবে, তার অংশীদারিত্ব লাভ করবেন।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের মি. পাইন বলেছেন, ইসলামি বন্ড হবে ইজারা ভিত্তিক মানে নির্দিষ্ট প্রকল্প ভিত্তিক, কিন্তু সাধারণ বন্ডের ক্ষেত্রে তা হয় না।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “যেমন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘সারা দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প’ এর সম্পদের বিপরীতে ছাড়া হচ্ছে এই সুকুক। যিনি এতে বিনিয়োগ করবেন, তিনি এই প্রকল্পের মালিকানার মানে ওই প্রকল্পের যাবতীয় সম্পত্তির অংশীদার হয়ে যাবেন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য।”

বাংলাদেশ ব্যাংক চার হাজার কোটি টাকা করে দুই দফায় বিনিয়োগকারীদের কাছে সুকুকের সার্টিফিকেট বিক্রি করবে। বিপরীতে তারা মুনাফা পাবে।এর ফলে সুকুকে বিনিয়োগকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কেবল কোন নির্দিষ্ট অংকের হারে সুদ পাবেন না। বরং তিনি ওই প্রকল্পের প্রাক্কলিত আয় এবং মুনাফার অংশীদার হবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here