বাংলাদেশে দুই যুগ ধরে আছে এইচএমপিভি ভাইরাস, আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ
দ্য হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাসের (এইচএমপিভি) প্রাদুর্ভাব বেড়েছে চীন-জাপানে। এছাড়া ভারতেও এইচএমপিভি আক্রান্ত মোট চার শিশুর খোঁজ মিলেছে। তবে বাংলাদেশে এ ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, বাংলাদেশে প্রায় দুই যুগ আগে থেকেই সদ্য আলোচিত এইচএমপিভি ভাইরাস রয়েছে।
তারা বলছেন, ভাইরাসটির মূল লক্ষণ শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা। রোগটি আগেও এ দেশে ছিল, এখনো আছে। এতে মৃত্যুর ঘটনা নেই বললেই চলে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরীন বলেন, শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়—এমন অন্যান্য ভাইরাসের মতোই এটি।
অনেকটা ইনফ্লুয়েঞ্জা ধরনের ভাইরাস। যার উপসর্গ হলো জ্বর-সর্দি-কাশি-ঠাণ্ডা।
তিনি বলেন, কভিড-১৯ একেবারে ভিন্ন ও নতুন আবহের ভাইরাস হওয়ায় এর প্রাদুর্ভাব বা মহামারির রেশ এতটা বিস্তৃত হয়েছিল। তবে এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
এটি নতুন কোনো ভাইরাস নয়। এমনকি এ নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘বেশির ভাগ ভাইরাসেরই সরাসরি কোনো ওষুধ নেই, তবে লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা রয়েছে। এটির ক্ষেত্রেও তাই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি এইচএমপিভি ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে কি না, সে বিষয়ে চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘এশিয়ার চীন, ভারতসহ বেশ কিছু দেশে এইচএমপিভি বা হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস ভাইরাসের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দেওয়ার অবস্থা তৈরি হতে পারে। অনেকে কভিড ১৯-এর কথা মনে করছে।
রোগটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এইচএমপিভি সংক্রমণে ঠাণ্ডা জ্বর বা ফ্লুর মতো অসুস্থতা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা ইত্যাদি হয়। তবে তীব্র কাশি, শ্বাসের অসুবিধা, শ্বাসটান বৃদ্ধি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু এবং ৬৫ বছরের বেশি ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অসুস্থতা তীব্র হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে এইচএমপিভি একটি সাধারণ রোগ। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যা নগণ্য।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. আরিফা আকরাম বলেন, ‘গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনায় প্রায় দুই দশক আগেই রেসপিরেটরি প্যানেলে এই ভাইরাসের উপস্থিতি আমরা নিয়মিতভাবে পেয়েছি। আমাদের দেশে মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং বেসিক সায়েন্স ও প্যারাক্লিনিক্যাল সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, এই ভাইরাস মানুষ ছাড়াও অন্য প্রাণীতেও রয়েছে। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা নেই। সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের ঝুঁকি তেমন নেই বললেই চলে। তবে বয়স্ক ও শিশুরা ঝুঁকিতে রয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৭ সালের পর ২০২০ সালে এইচএমপি ভাইরাসের উপস্থিতি বাংলাদেশে ছিল। ধারণা করা হয়, এখনো আছে। যেহেতু এর প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার হয়নি। সুতরাং করোনা মোকাবেলায় যেসব সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল, একই পদক্ষেপে এই ভাইরাস থেকে নিরাপদে থাকা সম্ভব।
সবুজদেশ/এসইউ