ঢাকা ০৩:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন

বাংলাদেশে নিপীড়ন বন্ধে স্থায়ী সংস্কার প্রয়োজন

সবুজদেশ ডেস্ক:

 

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার-কেন্দ্রিক ভবিষ্যতের উদ্দেশে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভালো কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। কিন্তু ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও আন্তর্জাতিক সমর্থন ছাড়া এসব অগ্রগতি ম্লান হয়ে যেতে পারে বলেও মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটির।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ২০২৪ সালের বিশ্বের মানিবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদনের আলোকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের ডেপুটি ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) এইচআরডব্লিউ তাদের বৈশ্বিক প্রতিবেদন ২০২৫ প্রকাশ করে। শতাধিক দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রকাশ করা হয়েছে ৫৪৬ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার আমলের গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করেছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গে সংস্কার ও জবাবদিহিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত ও নির্বিচার হামলায় হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছে।

অধিকারকর্মীদের বরাত দিয়ে এই প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনী এখনো নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। বিরোধী সমর্থক এবং সাংবাদিকদের ইচ্ছামতো গ্রেপ্তার করছে এবং তাদের আইনি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গুম প্রসঙ্গে জাতিসংঘের কনভেনশনে যোগদান করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু অবৈধভাবে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে বা (গুমের ব্যাপারে) তাদের পরিবারকে জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এবং শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এই প্রতিবেদনে। বলা হয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা সশস্ত্র গোষ্ঠী ও গ্যাংয়ের সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে। অনিবন্ধিত শরণার্থীরা ক্ষুধার ঝুঁকিতে আছে। মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, এই ভয়ে তারা কোনো স্বাস্থ্যসেবাও নিচ্ছে না।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে এইচআরডব্লিউ বলে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করা উচিত। একাজে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের সাহায্য নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‍্যাব) বিলুপ্ত করা, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে পুনর্গঠন করে স্বাধীন তদারকি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, গুম হওয়া ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশাধিকার দেওয়া এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিবন্ধন নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয় এই প্রতিবেদনে।

সবুজদেশ/এসইউ

About Author Information
আপডেট সময় : ০৮:৩৪:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫
১১ Time View

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন

বাংলাদেশে নিপীড়ন বন্ধে স্থায়ী সংস্কার প্রয়োজন

আপডেট সময় : ০৮:৩৪:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫

 

গণতন্ত্র ও মানবাধিকার-কেন্দ্রিক ভবিষ্যতের উদ্দেশে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভালো কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। কিন্তু ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও আন্তর্জাতিক সমর্থন ছাড়া এসব অগ্রগতি ম্লান হয়ে যেতে পারে বলেও মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটির।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ২০২৪ সালের বিশ্বের মানিবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদনের আলোকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এসব কথা বলেন সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের ডেপুটি ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি।

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) এইচআরডব্লিউ তাদের বৈশ্বিক প্রতিবেদন ২০২৫ প্রকাশ করে। শতাধিক দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রকাশ করা হয়েছে ৫৪৬ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার আমলের গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করেছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গে সংস্কার ও জবাবদিহিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত ও নির্বিচার হামলায় হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছে।

অধিকারকর্মীদের বরাত দিয়ে এই প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনী এখনো নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। বিরোধী সমর্থক এবং সাংবাদিকদের ইচ্ছামতো গ্রেপ্তার করছে এবং তাদের আইনি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গুম প্রসঙ্গে জাতিসংঘের কনভেনশনে যোগদান করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু অবৈধভাবে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে বা (গুমের ব্যাপারে) তাদের পরিবারকে জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে দেশের নিরাপত্তা বাহিনী।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এবং শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এই প্রতিবেদনে। বলা হয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা সশস্ত্র গোষ্ঠী ও গ্যাংয়ের সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে। অনিবন্ধিত শরণার্থীরা ক্ষুধার ঝুঁকিতে আছে। মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, এই ভয়ে তারা কোনো স্বাস্থ্যসেবাও নিচ্ছে না।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উদ্দেশ্য করে এইচআরডব্লিউ বলে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড অনুযায়ী দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করা উচিত। একাজে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের সাহায্য নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‍্যাব) বিলুপ্ত করা, নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে পুনর্গঠন করে স্বাধীন তদারকি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, গুম হওয়া ব্যক্তিদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা, মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশাধিকার দেওয়া এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিবন্ধন নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয় এই প্রতিবেদনে।

সবুজদেশ/এসইউ