ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলেছেন, সেই একটি নির্দিষ্ট দেশ যদি আমার কোনো প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে, তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়াই স্বাভাবিক। গতকাল শনিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের অনুষ্ঠান ‘ইন্ডিয়া টুডে কনক্লেভে’ এ কথা বলেন।
এ সময় উপেন্দ্র দ্বিবেদী চীন-পাকিস্তানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে উচ্চমাত্রার সহযোগিতা আছে, যা আমাদের মেনে নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘যা আমার কাছে অর্থবহ, তা হলো দ্বিমুখী হুমকির বাস্তবতা।
জেনারেল দ্বিবেদী ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি ও চলমান সংঘাত থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশ পরিস্থিতি এবং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) ও নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আপনি যে দ্বিতীয় বিষয়টি উত্থাপন করেছেন তা হলো, আমাদের পশ্চিম প্রতিবেশী ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক।
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার দৃষ্টিতে, যেহেতু আমি বলেছি যে সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রবিন্দু একটি নির্দিষ্ট দেশ, সে দেশ যদি আমার কোনো প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে, তাহলে উদ্বিগ্ন হওয়া স্বাভাবিক। কারণ, আমার প্রধান উদ্বেগ হলো, সেই দেশের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদের পথ ব্যবহার করা হতে পারে।
বাংলাদেশ-ভারত প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে জেনারেল দ্বিবেদী বলেন, ঢাকায় সরকার পরিবর্তনের ফলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক পরিবর্তিত হতে পারে, তাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এখনো ‘খুব তাড়াতাড়ি’ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে জেনারেল দ্বিবেদী আরও বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলতে পারি, বর্তমানে দুই দেশের সেনাবাহিনীর সম্পর্ক অত্যন্ত দৃঢ়। আমরা নিয়মিত তথ্য আদান-প্রদান করি, যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ না থাকে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তান-চীন সম্পর্ককে কীভাবে দেখে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে যে, (দুই দেশের মধ্যে) উচ্চমাত্রার সহযোগিতা রয়েছে, যা আমাদের মেনে নেওয়া উচিত। ভার্চুয়াল ক্ষেত্রে এটি প্রায় শতভাগ; আর বাস্তব ক্ষেত্রে পাকিস্তানের অধিকাংশ সামরিক সরঞ্জাম চীনের তৈরি। অতএব, সহযোগিতার এই পরিস্থিতি আমাদের সামনে বিদ্যমান। এর অর্থ আমার দৃষ্টিতে দ্বিমুখী হুমকির বাস্তবতা।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এম এম নারাভানেও বলেছিলেন, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে সহযোগিতার হুমকি উপেক্ষা করা যাবে না। লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার (এলএসি) পরিস্থিতি নিয়ে জেনারেল দ্বিবেদী বলেন, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বিশেষ প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকের পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
চীনের উন্নত সমরসজ্জা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি “অ্যাসাসিন’স মেস” (প্রায়ই ফ্রন্ট লাইনে নতুন উন্নত অস্ত্র এনে প্রতিপক্ষকে ভড়কে দেওয়ার কৌশল)-এর সময় ফুরিয়েছে। এটি আজ আর ততটা প্রাসঙ্গিক নয়। হিমালয়ের ভূ-প্রকৃতি ভারতের পক্ষে সুবিধাজনক।
ভারতীয় সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘যে কোনো বিষয়ে যে কারও শ্রেষ্ঠত্ব থাকতে পারে, তবে আসল বিষয় হলো প্রয়োগের সময় প্রয়োজনীয় সম্পদ ও শক্তি কেন্দ্রীভূত করা যাচ্ছে কি না। আমি মনে করি, ভারতীয় সেনাবাহিনী সেই দিক থেকে যথেষ্ট প্রস্তুত।
যুদ্ধ এড়ানোর পক্ষে মত দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘সহাবস্থান, সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করা উচিত। যুদ্ধ কি উভয় দেশের স্বার্থে? উত্তর হলো—না। তাই আমরা চাই, কীভাবে পরিস্থিতি সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখা যায় এবং কূটনৈতিক সমাধান পর্যন্ত এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে নিহত সন্ত্রাসীদের ৬০ শতাংশ পাকিস্তানের নাগরিক। উপত্যকা ও পীর পাঞ্জালের দক্ষিণে বেঁচে থাকা সন্ত্রাসীদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ পাকিস্তানি। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পশ্চিমা শত্রুর ক্ষেত্রে কোনো শিথিলতা নেই।
তবে তিনি প্রতিবেশীর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও শান্তি বজায় রাখার পক্ষে মত দেন এবং পাকিস্তানের প্রতি ‘সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রবিন্দু’ থেকে একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্রে রূপান্তরের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় বলি, আমরা সব সময় প্রস্তুত। আমরা দৃঢ় থাকব, তবে আক্রমণাত্মক হব কেবল তখনই, যখন আমাদের বাধ্য করা হবে।
সবুজদেশ/এসইউ