বাগেরহাটের শরণখোলায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট
বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ
করোনা আতঙ্ক ও রমজানের মধ্যে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে সুপেয় খাবার পানির তীব্র সংকট। এলাকার পুকুরগুলো শুকিয়ে গেছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পুকুরে বসানো পানি শোধনের বেশিরভাগ পিএসএফ অকেঁজো। কিছু কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পিএসএফ সচল থাকলেও করোনার ভয়ে অবাধে পানি নেওয়া সীমিত করা হয়েছে। তাছাড়া, উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় নলকুপের পানি লবণাক্ত হওয়ার কারণে সুপেয় পানির অভাবে উপজেলা জুড়েই হাহাকার পড়ে গেছে।
করোনার ভয় উপেক্ষা করে জীবন বাঁচাতে দূর-দূরান্ত থেকে পানির জন্য ছুঁটছে মানুষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যেসব পুকরে পিএসএফ সচল রয়েছে, সেখানে দিনরাত নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন পড়ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে এক কলস পানি নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের।
উপজেলা সদরের আর.কে.ডি.এস বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখাগেছে, ফিল্টারের পাশে সারি সারি কলস সাজানো। নারী-পুরুষেরা অপেক্ষায় রয়েছে এক কলস পানির জন্য।
এক কিলোমিটার দূরের উত্তর কদমতলা গ্রাম থেকে পানি নিতে আসেন শহিদুল ইসলামের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৪৫)। তিনি জানান, তাদের গ্রামে কোথাও একফোটা খাবার পানি নেই। আগে গ্রামের পুকুরের পানি ফুটিয়ে এবং ফিটকিরি দিয়ে পান করতেন। কিন্তু এখন সেসব পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন। তাই এখানে এসেছেন পানি নিতে। রমজানে ঘরে খাবার পানি না থাকলে মানুষের কষ্টের সীমা থাকবে না।
রায়েন্দা বাজারের পূর্ব মাথার ঋষিপাড়ার নিতাই ঋষির স্ত্রী ঝর্ণা রাণী জানান, প্রায় এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন পানির জন্য। করোনার কারণে ঘর থেকে বের হতেই ভয় লাগে। তার পরও পানির জন্য না এসে উপায় নেই।
বিগত ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর শরণখোলায় চরমভাবে সুপেয় পানির অভাব দেখা দেয়। ওই সময় সিডর বিধ্বস্ত এই উপজেলার সব ইউনিয়নের পানি সংকট নিরসণে প্রায় দুই হাজার পিএসএফ স্থাপন করে বিভিন্ন এনজিও। পরবর্তীতে রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং নির্মানকাজ নিম্নমানের হওয়ায় কয়েক বছর যেতে না যেতেই বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া, যে সকল পিএসএফ ব্যক্তি মালিকানাধীন ছোট পুকুরে বসানোর ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় তা অধিকাংশই ভেঙে ফেলা হয়।
শরণখোলা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, উপজেলার চারটি ইউনিয়নের সবকটিতেই বর্তমানে সরকারি এবং বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে স্থাপিত মোট ১১০০টি পিএসএফ রয়েছে। এর মধ্যে সচল আছে মাত্র ৪২০টি। বাকিগুলো পুকুরে পানি না থাকায় বন্ধ রয়েছে। সরকারিভাবে দুই হাজার পরিবারে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ট্যাংক (রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং) দেয়া হয়েছে। ১০টি সরকারী পুকুর পুনঃখনন করা হয়েছে। সেইসব পুকুরে সোলার পিএসএফের কাজ চলমান রয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে তা ব্যবহারের উপযোগী হবে। এসব সরকারী পুকুরে পিএসএফগুলো চালু হলে পানির সমস্যা অনেকটা লাঘব হবে।