এস এম সামছুর রহমান , বাগেরহাটঃ

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার খলিশাখালী বধ্যভূমি এখনো অরক্ষিত রয়েছে। একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা হচ্ছে মাত্র। স্মৃতিস্তম্ভ এবং সীমানা প্রাচীর না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীরা। দিনের বেলায় গরু ছাগল আর রাতের বেলায় বখাটেদের আড্ডা থাকে এই বধ্যভূমিতে। মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও ১ মিনিট নিরাবতা পালনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় সেদিনের সেই নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালীদের প্রতি, যারা পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

এলাকাবাসি জানান, ২০১৭ সালে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার খলিশাখালী গ্রামে বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া যায়। ৭১’র পাকবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের নানা কাহিনী উঠে এসেছে এখানে। সেদিন যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের অনেকের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। তখন থেকে প্রতি বছর এখানে শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

স্থানীয় প্রবীনদের তথ্যমতে, ১৯৭১ সালের বাংলা ৫ আষাঢ় রোববার সকাল ১১টার দিকে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরা মিলে এই এলাকায় হামলা চালায়। বলেশ্বর নদী দিয়ে গানবোট যোগে বাবুগঞ্জ বাজারে এসে তারা খলিশাখালী গ্রামে প্রবেশ করে। প্রবেশ পথে তারা এলাকায় নির্বিচারে গুলি চালায় এবং বাড়ী ঘরে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ঘটায়। চিতলমারীর দশমহল এলাকাকে নিরাপদ আশ্রয় মনে করে যারা পিরোজপুর, নাজিরপুর, উজিরপুর ও কচুয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে আশ্রয় নিয়েছিল তারা এবং গ্রামবাসী গুলির শব্দে প্রাণভয়ে এদিক ওদিক পালাতে থাকে। পাকবাহিনীর গুলির শব্দে তারা উপজেলার চরবানিয়ারী ইউনিয়নের খলিশাখালী ও পূর্বখড়মখালী গ্রামের একটি মাঠের মধ্যে হোগলা ও নলবনে লুকিয়ে থাকার জন্য আশ্রয় নেয়। এসময় পাকবাহিনী তাদের উপরে নির্বিচারে গুলি চালায়। সেদিন এখানে অর্ধশতাধিক লোক নিহত হয়।

চিতলমারী উপজেলার পূর্ব খড়মখালী গ্রামের প্রবীণ গৌর চন্দ্র মজুমদার সেদিনের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালের ৫ আষাঢ় দিনটি ছিলো রোববার। সেদিন বলেশ্বর নদী দিয়ে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরা বাবুগঞ্জ এলাকা থেকে আক্রমণ শুরু করে। গুলি শব্দে লোকজন খলিশাখালী ও পূর্বখড়মখালী গ্রামের মাঠের হোগলা ও নলবনে লুকিয়ে থাকে। এ সময় পাকবাহিনী তাদের উপর গুলি চালায়। এতে খড়মখালী গ্রামের বিমল কান্তি হীরা, ভদ্র কান্ত হীরা, রাজদেব হীরা, যোগেন্দ্র নাথ মজুমদার, মহেন্দ্র নাথ মন্ডল, আদিত্য মজুমদার, নীল কমল মন্ডল, জিতেন মজুমদার, খগেন মন্ডল (খোকা), অমীয় চৌকিদারের ভাইসহ আশপাশের এলাকা থেকে আশ্রয় নেওয়া অসংখ্য লোক সেখানে নিহত হয়।

খড়মখালী গ্রামের প্রবীন মুক্তিযোদ্ধা বিমল রাণা ও মনিমোহন হীরা বলেন, সেদিনের নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে ৪ বছরেও এখানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়নি। নেই কোন স্থায়ী আলোর ব্যবস্থা। বধ্যভূমির পবিত্রতা রক্ষার্থে গরু-ছাগল ও বখাটেদের অনুপ্রবেশ বন্ধের জন্য একটি বাউন্ডারী হওয়া আবশ্যক।

চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মারুফুল আলম জানান, আগামী ২৫ মার্চ তারিখে রাতে খলিশাখালী বধ্যভূমিতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হবে। প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা ও সর্বস্তরের জনগণ শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। ওখানে একটা স্থায়ী আলো ও সীমানা প্রচীর নির্মানের জন্য দ্রæত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here