বাগেরহাটের চিতলমারীতে বংশীয় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের সংঘর্ষে উপজেলা জিয়া মঞ্চের সভাপতি নিজাম কাজী (৪৫) নিহত এবং উভয় পক্ষের ৫ জন আহত হয়েছেন। বুধবার (১২ মার্চ) সকাল ১১ টার দিকে ঢাকার একটি হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিজাম কাজী মারা যান।
নিহত নিজাম কাজী হিজলা মাঠপাড়া গ্রামের মৃত নুরমোহাম্মদ কাজীর ছেলে।
এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই বিএনপি নেতা মো. জামাল কাজী বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ মামলার প্রধান আসামি মো. সাইফুল মোল্লাসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। নিজাম কাজীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দুপুরে উত্তেজিত জনতা আসামি পক্ষের ৩টি বাড়ি অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক যৌথ বাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফিন্সের সদস্যরা আগুন ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
পুলিশ ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, একটি ফেসবুক পোষ্টের জেরে এলাকায় বংশীয় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাত ৯ টায় উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মো. জামাল কাজী ও হিজলা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী মো. সাইফুল মোল্লার লোকজনের সাথে সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষে জামাল কাজীর ভাই উপজেলা জিয়া মঞ্চের সভাপতি নিজাম কাজী (৪৫), হিজলা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারন সম্পাদক নওশের কাজী (৪০) ও জামাল কাজীর ছেলে হিজলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক ছাব্বির কাজী (৩০) এবং সাইফুল পক্ষের হিটলু শেখ (৫৫), এনায়েত শেখ ও সুবিয়ান শেখ (৪০) আহত হয়।
রাতেই আহতদের চিতলমারী, টুংগিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিজাম কাজীর অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। সেখানে বুধবার সকাল ১১ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিজাম কাজী মারা যান। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে দুপুরে উত্তেজিত জনতা আসামি পক্ষের রফিক শেখ, রশিদ শেখ ও সাইফুল মোল্লার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক যৌথ বাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফিন্সের সদস্যরা আগুন ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
নিহত নিজাম কাজীর ভাই মো. জামাল কাজী জানান, মঙ্গলবার রাতে তাঁর ভাই নিজামসহ অন্যান্যরা বসেছিলেন। এ সময় পূর্বপরিকল্পিত ভাবে মো. সাইফুল মোল্লাসহ ৩০-৩৫ জন লোক তাদের উপর অতর্কিত হামলা করে। হামালায় তাঁর দুই ভাই ও ছেলে গুরুতর আহত হয়।
এ ঘটনায় সাইফুল মোল্লা পক্ষের কাউকে না পাওয়ায় তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাগেরহাট জেলা জিয়া মঞ্চের সভাপতি এ্যাড. শিকদার ইমরান বলেন, ‘নিহত নিজাম কাজী চিতলমারী উপজেলা জিয়া মঞ্চের সভাপতি ছিলেন। আমি এই ন্যাক্কারজনক হত্যার বিচার চাই।
চিতলমারী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মোমিনুল হক টুলু বিশ্বাস বলেন, ‘এ দলীয় বিষয় নিয়ে কোন ঘটনা নয়। এলাকায় বংশীয় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়কে শান্ত থাকতে বলেছি।
চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘নিহতের বড় ভাই জামাল কাজী বাদী হয়ে একটি থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আমরা মামলার প্রধান আসামি মো. সাইফুল মোল্লাসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক যৌথ বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফিন্স ও আমরা মিলে আগুন ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নিয়েছি।
নিহত নিজাম কাজীর তানভির আহম্মেদ নামে অনার্স পড়ুয়া এক ছেলে ও তাজিম আক্তার নামে দ্বাদশ শ্রেনীতে পড়ুয়া একটি মেয়ে আছে।
ঢাকায় তাঁর মরদেহের ময়না তদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ি হিজলা ঈদগাঁ মাঠ কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হবে।
সবুজদেশ/এসইউ