বাগেরহাটে বিমানবন্দরের জন্য আরও ৫২৯ একর জমি
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় খানজাহান আলী বিমান বন্দরের জন্য নতুন করে অধিগ্রহণ করা ৫২৯ একর জমি সিভিল অ্যাভিয়েশন অথোরিটি অব বাংলাদেশের (সিএএবি) কাছে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। গত শুক্রবার দুপুরে নির্মাণাধীন খানজাহান আলী বিমান বন্দর এলাকায় এক অনুষ্ঠানে সিএএবির কাছে জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা এই বিমান বন্দরটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হবে। শুধু রামপাল-বাগেরহাটবাসীর নয় খুলনা অঞ্চলের বিমান বন্দর হবে এটি। খানজাহান আলী বিমান বন্দর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প। পিপিপির আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সরকার চেষ্টা করছে। তা না হলে পদ্মা সেতুর মতো নিজস্ব অর্থায়নেই দ্রুত সময়ের মধ্যে খানজাহান আলী বিমান বন্দরটি নির্মাণ করা হবে।’
এ সময় অধিগ্রহণ করা জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানে কোনো ধরনের অনিয়ম রোধে জেলা প্রশাসককে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘অধিগ্রহণ করা জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানে বিভিন্ন সময় অনিয়মের অভিযোগে পাওয়া যায়। আমি ডিসি সাহেবকে বলব, আপনার অফিসের কিছু লোকজন আছে, কথাটি অপ্রিয় হলেও এলএ শাখার কিছু লোকের বিরুদ্ধে অনিয়মের কানাঘুষা শোনা যায়। আমার একটাই কথা, কোথাও যেন কেউ টাক-পয়সা আনতে গিয়ে কোনো ধরনের জটিলতায় না পড়ে।’
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাগেরহাট-৩ আসনের সাংসদ হাবিবুর নাহার, সিএএবির সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) মো. হেমায়েত হোসেন, পরিচালক (প্রশাসক) মো. সাইফুল ইসলাম, সিএএবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও খানজাহান আলী বিমান বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. শহীদুল আফরোজ, বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শাহীন হোসেন।
অনুষ্ঠানে জমির ২০ জন মালিককে ক্ষতিপূরণের চেক হস্তান্তর করা হয়।
খানজাহান আলী বিমান বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. শহীদুল আফরোজ প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৯৬ সালে খানজাহান আলী বিমান বন্দর নির্মাণ প্রকল্পটি শুরু হয়। তখন একটি শর্ট টেক অফ ল্যান্ডিং বন্দর হিসেবে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রায় ৯৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয় এবং মাটি ভরাটের কিছু কাজ হয়। তবে পর বর্তিতে দীর্ঘ সময় এই বিমান বন্দর নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। শর্ট টেক অফ ল্যান্ডিং এর ছোট বিমানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। সে জন্য আরও ৫২৯ একর জমির দরকার ছিল। যা আজ আমরা পেয়ে গেলাম। এখন আমাদের মোট ৬৩০ একরের মতো জায়গা পেয়েছি। বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা নকশা তৈরি করছেন।
তিনি বলেন, খানজাহান আলী বিমান বন্দর নির্মাণের জন্য বিদেশি দাতা খুঁজছি। এ বিষয়েও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হচ্ছে। পিপিপির আওতায় না হলে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এর কাজ শুরু হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলতি বছরেই বিমান বন্দরের জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। আশা করছি চার বছরের মধ্যে বিমান বন্দরের নির্মাণকাজ শেষ হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, খুলনা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার খুলনা-মোংলা মহাসড়কের পাশে ফয়লা এলাকায় বিমান বন্দরটির জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমে এর জন্য ৪১ দশমিক ৩০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৯৬ সালের ২৭ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু ১৯৯৭ সালে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কিছু মাটি ভরাট কাজের পর নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়।
২০১১ সালের ৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটিকে পূর্ণাঙ্গ বিমান বন্দরে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১৩ সালের এপ্রিলে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে (কুয়েট) সম্ভাব্যতা যাচাই করার দায়িত্ব দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর কুয়েটের বিশেষজ্ঞরা তাদের প্রতিবেদন জমা দেন।
বিমান বন্দরটির নির্মাণকাজ শেষ হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।