ঢাকা ০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাগেরহাট পিসি কলেজে নির্মিত হয় জেলার প্রথম শহীদ মিনার

Reporter Name

এস এম সামছুর রহমান, বাগেরহাটঃ

বাগেরহাটের আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজে ( পিসি কলেজ) নির্মিত হয় জেলার প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার। কলেজ ভবনের ঠিক সামনে প্রতিষ্ঠাতার মুর্তির পাশে নির্মত এই শহীদ মিনারটির স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনী ভেঙ্গে ফেলে। স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে আবরো কলেজের প্রধান ফটকের কাছে নতুন ভাবে শহীদ মিনার নির্মান করা হয়।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৫২ সালের ২১ ফেরুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিলের সময় পাক সেনাদের নির্বিচারে গুলিতে ঢাকার রাজপথে ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনার পর থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে তৎকালিন বাগেরহাট মহাকুমা। মহাকুমা সদর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে ভাষার দাবী উঠা এই আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ। আর এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল তৎকালিন বাগেরহাট সরকারী পিসি কলেজ। প্রগতিশীল ছাত্রদের নেতৃত্বে এই আন্দোলনে শরিক হয় বাগেরহাটের সর্বস্থরের জনতা। ভাষা আন্দোলনের পরবর্তি বছরগুলোতে তৎকালিন শাসক গোষ্ঠির চাপের মুখে বাগেরহাটে গোপনীয় ভাবে পালন করা হতো দিবসটি। তাই ১৯৬৫ সালের আগ পর্যন্ত তৎকালিন মহাকুমার কোথাও স্থায়ী ভাবে গড়ে ওঠেনি পাকা শহীদ মিনার।

১৯৬৫ সালে পিসি কলেজ ছাত্র সংসদের উদ্যোগে নির্মিত হয় জেলার প্রথম স্থায়ী পাকা শহীদ মিনার। পরে শহীদ মিনারটি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনী ভেঙ্গে ফেলে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর আবরো কলেজের প্রধান ফটকের কাছে নতুন ভাবে শহীদ মিনার নির্মান করা হয়। এটিই ছিল ১৯৯৪ সালের আগ পর্যন্ত বাগেরহাট জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। বাগেরহাটের সর্বস্তরের জনতার অংশগ্রহনে ১৯৯৪ সালে বর্তমান বাগেরহাট বহুমূখি কলেজের সামনে নির্মান করা হয় বর্তমান কেন্দ্রী শহীদ মিনার।

এবিষয়ে তৎকালিন পিসি কলেজের ছাত্র সংসদের জিএস (৬৫-৬৬) এ্যাড. জাহাঙ্গীর আলী বাবু বলেন, ১৯৫২ পরবর্তী সময়ে তৎকালিন শাসকগোষ্ঠি ভাষা আন্দোলনের কর্মসূচীকে প্রতিহত করার চেষ্টা করতো। একপ্রকার লুকোচুরি মাধ্যমে বাগেরহাটে ভাষা সৈনিকদের স্মরণ করা হতো। তখন স্থায়ী কোন শহীদ মিনার তৈরি হয়নি। দোকান থেকে কাঠের বাক্স এনে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে সেখানে ফুল দেয়া হতো। ১৯৬৫ সালে পিসি কলেজ ছাত্র সংসদের উদ্যোগে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের মুর্তির সামনেই নির্মিত হয় জেলার প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শহীদ মিনারটির পাকহানাদার বাহিনী ভেঙ্গে ফেলে।

পিসি কলেজের ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস (১৯৬৬-৭৬) মোবারেক আলী বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন বাগেরহাটের দুই কৃতি সন্তান ড. হালিমা খাতুন ও এ্যাড. আনোয়ার হোসেন। একারনে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব পড়ে তৎকালিন বাগেরহাট মহাকুমায়। ১৯৬৫ সাল থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের আগ পর্যন্ত পিসি রায়ের মুর্তির কাছে নির্মিত শহীদ মিনারটিতে ছাত্র জনতা শ্রদ্ধা নিবেদন করতো। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ছাত্র, শিক্ষক ও সাধারণ জনগন মিলে পিসি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মান করে।

সরকারী পিসি কলেজ সাবেক সাবেক ভিপি (১৯৭৭-৭৮) শেখ আজমল হোসেন জানান, স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে পিসি কলেজের প্রধান ফটকে নির্মিত শহীদ মিনারটিতে সর্বস্তরের জনগন শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতো। পরবর্তিতে স্থান সংকুলন না হওয়ায় সর্বস্তরের জনগনের চাঁদার টাকায় ১৯৯৪ সালে বাগেরহাট বহুমূখি কলেজের সামনে বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মান করা হয়। এই শহীদ মিনারেই এখন বাগেরহাটবাসী সকল কর্মসূচী পালন করে।

সরকারী পিসি কলেজের অধ্যক্ষমোঃ সাখিলুর রহমান বলেন, তিনি যোগাদের পর কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও স্থানীয়দের কাছে শুনেছেন এই কলেজেই বাগেরহাটের প্রথম শহীদ নির্মিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধকালীন খুলনা অঞ্চলের মুজিব বাহিনীর প্রধান ও বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু বলেন, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের পর বাগেরহাট আন্দোলন সংগ্রামে এগিয়ে ছিল। এই আন্দোলন গ্রামগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ে। বাগেরহাট পিসি কলেজেই নির্মিত হয় জেলার প্রথম শহীদ মিনার।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৫:৫৫:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০
৮১৫ Time View

বাগেরহাট পিসি কলেজে নির্মিত হয় জেলার প্রথম শহীদ মিনার

আপডেট সময় : ০৫:৫৫:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০

এস এম সামছুর রহমান, বাগেরহাটঃ

বাগেরহাটের আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজে ( পিসি কলেজ) নির্মিত হয় জেলার প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার। কলেজ ভবনের ঠিক সামনে প্রতিষ্ঠাতার মুর্তির পাশে নির্মত এই শহীদ মিনারটির স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনী ভেঙ্গে ফেলে। স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে আবরো কলেজের প্রধান ফটকের কাছে নতুন ভাবে শহীদ মিনার নির্মান করা হয়।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৫২ সালের ২১ ফেরুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিলের সময় পাক সেনাদের নির্বিচারে গুলিতে ঢাকার রাজপথে ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনার পর থেকেই উত্তাল হয়ে ওঠে তৎকালিন বাগেরহাট মহাকুমা। মহাকুমা সদর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে ভাষার দাবী উঠা এই আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ। আর এই আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল তৎকালিন বাগেরহাট সরকারী পিসি কলেজ। প্রগতিশীল ছাত্রদের নেতৃত্বে এই আন্দোলনে শরিক হয় বাগেরহাটের সর্বস্থরের জনতা। ভাষা আন্দোলনের পরবর্তি বছরগুলোতে তৎকালিন শাসক গোষ্ঠির চাপের মুখে বাগেরহাটে গোপনীয় ভাবে পালন করা হতো দিবসটি। তাই ১৯৬৫ সালের আগ পর্যন্ত তৎকালিন মহাকুমার কোথাও স্থায়ী ভাবে গড়ে ওঠেনি পাকা শহীদ মিনার।

১৯৬৫ সালে পিসি কলেজ ছাত্র সংসদের উদ্যোগে নির্মিত হয় জেলার প্রথম স্থায়ী পাকা শহীদ মিনার। পরে শহীদ মিনারটি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনী ভেঙ্গে ফেলে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর আবরো কলেজের প্রধান ফটকের কাছে নতুন ভাবে শহীদ মিনার নির্মান করা হয়। এটিই ছিল ১৯৯৪ সালের আগ পর্যন্ত বাগেরহাট জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। বাগেরহাটের সর্বস্তরের জনতার অংশগ্রহনে ১৯৯৪ সালে বর্তমান বাগেরহাট বহুমূখি কলেজের সামনে নির্মান করা হয় বর্তমান কেন্দ্রী শহীদ মিনার।

এবিষয়ে তৎকালিন পিসি কলেজের ছাত্র সংসদের জিএস (৬৫-৬৬) এ্যাড. জাহাঙ্গীর আলী বাবু বলেন, ১৯৫২ পরবর্তী সময়ে তৎকালিন শাসকগোষ্ঠি ভাষা আন্দোলনের কর্মসূচীকে প্রতিহত করার চেষ্টা করতো। একপ্রকার লুকোচুরি মাধ্যমে বাগেরহাটে ভাষা সৈনিকদের স্মরণ করা হতো। তখন স্থায়ী কোন শহীদ মিনার তৈরি হয়নি। দোকান থেকে কাঠের বাক্স এনে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে সেখানে ফুল দেয়া হতো। ১৯৬৫ সালে পিসি কলেজ ছাত্র সংসদের উদ্যোগে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের মুর্তির সামনেই নির্মিত হয় জেলার প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শহীদ মিনারটির পাকহানাদার বাহিনী ভেঙ্গে ফেলে।

পিসি কলেজের ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস (১৯৬৬-৭৬) মোবারেক আলী বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন বাগেরহাটের দুই কৃতি সন্তান ড. হালিমা খাতুন ও এ্যাড. আনোয়ার হোসেন। একারনে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব পড়ে তৎকালিন বাগেরহাট মহাকুমায়। ১৯৬৫ সাল থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের আগ পর্যন্ত পিসি রায়ের মুর্তির কাছে নির্মিত শহীদ মিনারটিতে ছাত্র জনতা শ্রদ্ধা নিবেদন করতো। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে ছাত্র, শিক্ষক ও সাধারণ জনগন মিলে পিসি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মান করে।

সরকারী পিসি কলেজ সাবেক সাবেক ভিপি (১৯৭৭-৭৮) শেখ আজমল হোসেন জানান, স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে পিসি কলেজের প্রধান ফটকে নির্মিত শহীদ মিনারটিতে সর্বস্তরের জনগন শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতো। পরবর্তিতে স্থান সংকুলন না হওয়ায় সর্বস্তরের জনগনের চাঁদার টাকায় ১৯৯৪ সালে বাগেরহাট বহুমূখি কলেজের সামনে বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মান করা হয়। এই শহীদ মিনারেই এখন বাগেরহাটবাসী সকল কর্মসূচী পালন করে।

সরকারী পিসি কলেজের অধ্যক্ষমোঃ সাখিলুর রহমান বলেন, তিনি যোগাদের পর কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও স্থানীয়দের কাছে শুনেছেন এই কলেজেই বাগেরহাটের প্রথম শহীদ নির্মিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধকালীন খুলনা অঞ্চলের মুজিব বাহিনীর প্রধান ও বাগেরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু বলেন, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের পর বাগেরহাট আন্দোলন সংগ্রামে এগিয়ে ছিল। এই আন্দোলন গ্রামগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ে। বাগেরহাট পিসি কলেজেই নির্মিত হয় জেলার প্রথম শহীদ মিনার।