বাজারে আসছে কেরু এন্ড কোম্পানির হ্যান্ড স্যানিটাইজার
সবুজদেশ রিপোর্টঃ
করোনাভাইরাস আতঙ্কে বাজারে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তবে প্রয়োজন বিবেচনা করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন রাষ্ট্রায়ত্ত কেরু এন্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন শুরু করেছে।
‘কেরুজ হ্যান্ড স্যানিটাইজার (Carew’s Hand Sanitizer)’ নামে এই জীবাণুনাশক আগামীকাল (সোমবার) থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বাজারজাত করা হবে। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কয়েক দিন পর থেকে এটি পুরোদমে বাজারেও পাওয়া যাবে বলে জানাচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় প্রশাসন ও কেরু এন্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে এটি বিতরণ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১৬টি বিপণন কেন্দ্র, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের সামনে এ স্যানিটাইজার পাওয়া যাবে।
এছাড়া, চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এটি সরবরাহ করা হবে। প্রতি ১০০ মিলিলিটার বোতলের স্যানিটাইজারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হবে ৬০ টাকা। যা বাজারের যে কোনো স্যানিটাইজারের চেয়ে অনেক কম মূল্য।
যুগান্তরের দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি ইকরামুল হক পিপুল জানাচ্ছেন, কেরু এন্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনায় অবস্থিত বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের অধিভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৩৮ সালে স্থাপিত এ কারখানাটি উন্নতমানের স্পিরিট উৎপাদন করে আসছে।
দর্শনা কেরু এন্ড কোম্পানি। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের আওতায় এটি পরিচালিত হয়ে থাকে। এখানে প্রধানত চিনি ও গুণগত মানসম্পন্ন স্পিরিট তৈরি হয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। যা থেকে বাঁচতে সচেতন হওয়া এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা বিশেষ প্রয়োজন।
প্রতিদিন হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মাধ্যমে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে বাজারে এর চাহিদা প্রচুর পরিমাণ বেড়ে গেছে। তাই মানব সেবা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ দ্রুততম সময়ের মধ্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন এবং সুলভ মূল্যে বাজারজাত শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
দর্শনা কেরু এন্ড কোম্পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদ আলী আনছারী বলেন, করোনা ভাইরাস ঠেকাতে দেশের এই পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার উৎপাদন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বোতলজাতও শুরু করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, ব্যবসায়িক দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে এ উদ্যোগ নেয়া হয়নি। মানব সেবা ও সামাজিক দায়বদ্ধাতার বিষয়টি মাথায় রেখেই এটি করা হয়েছে। কারণ এখানে যে মানের স্পিরিট তৈরি করা হয় এত উন্নত মানের স্পিরিট কোথাও তৈরি হয় না।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সনৎ কুমার সাহা বলেন, কেরু এন্ড কোম্পানি উৎপাদিত স্যানিটাইজারের গুণগতমান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট (বিএসটিআই) এর ছাড়পত্র পাওয়া গেছে। আগামীকাল সোমবার থেকেই স্বল্প পরিসরে এই স্যানিটাইজার বাজারজাত শুরু হবে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল হালিম জানান, কেরু এন্ড কোম্পানির এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটি দেশের সর্বত্র বাজারজাত করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
শিল্প মন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ন বলেন , করোনা ভাইরাস ঠেকাতে দেশের এই পরিস্থিতিতে দর্শনা কেরু এন্ড কোম্পানি হ্যান্ড স্যানিটাইজার বাজার জাতকরণ দ্রুত করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। দেশে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব রোধে কেরুজ হ্যান্ড স্যানিটাইজার এই পণ্য বড় ভূমিকা রাখবেন বলে আশা করছেন তিনি।
এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে কর্মক্ষেত্রের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।
এর অংশ হিসেবে নিয়মিত বিরতিতে হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার, আইইডিসিআর কর্তৃক নির্দেশিত পন্থায় হাঁচি-কাশি দেয়া, করমর্দন বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকা এবং জনসমাগম পরিহার করতে মন্ত্রণালয় ও এর আওতাধীন দপ্তর ও সংস্থা, মাঠ পর্যায়ের আঞ্চলিক অফিস, জেলা অফিস, শিল্পনগরি কার্যালয়, শিল্প-কারখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি সকল কার্যালয়, শিল্প-কারখানা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিজ নিজ প্রাঙ্গণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে বলা হয়েছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে সাময়িকভাবে বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি স্থগিত করা হয়েছে।
এর অংশ হিসেবে বিসিক শিল্পনগরিগুলোতে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া, শিল্পনগরিগুলোর মূল ফটক এবং দর্শনযোগ্য স্থানে করোনার ঝুঁকি মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ক সচেতনতামূলক ব্যানার সাঁটানো হয়েছে।