যশোরঃ
সালিস মীমাংসায় সিদ্ধান্ত ছিল, ‘শিশুটির জন্মের পর বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হবে।’ স্বাভাবিক প্রসবে পৃথিবীর আলো দেখলেও জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই শিশুটির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। তবে এই মৃত্যু নিয়ে নবজাতকটির পিতা-মাতার পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
শিশুটির পিতা নাসির উদ্দিন রাব্বির অভিযোগ, ‘তার নবজাতক মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে।’ আর মেয়েটির মা উম্মে সালমা মলির দাবি, ‘জন্মের পর জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টে তার মৃত্যু হয়েছে।’ চিকিৎসকরা বলছেন, অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ওই নবজাতকের।
শিশুর পিতা নাসির উদ্দিন রাব্বি (২৮) চৌগাছা উপজেলার বড়খানপুর গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে। আর মা উম্মে সালমা মলির বাবা বাড়ি যশোর শহরের ষষ্ঠিতলাপাড়া এলাকায়। রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে শিশুটির জন্ম হয় (নরমাল ডেলিভারি)। সোমবার বিকেলে শিশুটি মারা যায়।
নাসির উদ্দিন রাব্বি অভিযোগ করেন, আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে আমার স্ত্রী স্বাভাবিকভাবে কন্যা সন্তান প্রসব করে। পরদিন (সোমবার) দুপর ১২টার দিকে স্ত্রী আমাকে কোনো কিছু না বলে মেয়েকে নিয়ে তড়িঘড়ি হাসপাতাল থেকে চলে যায়।
বেলা দুইটার দিকে আমাকে ফোনে বলে, আমি কারবালা এলাকায় মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, মেয়েকে নিয়ে যাও। বিকেল পাঁচটার দিকে পুলিশ মোবাইল ফোনে জানায়, তোমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে; লাশ এখন হাসপাতাল মর্গে আছে। আমাকে সেখানে যেতে বলা হয়।
রাব্বির দাবি, প্রেমের সম্পর্কে তাদের বিয়ে হয় ১১ মাস আগে। কিন্তু খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে তার (মলি) পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। সে কারণে সে বাবার বাড়ি ষষ্ঠিতলায় থাকত। বহু চেষ্টা করেও মলিকে চৌগাছায় নিয়ে রাখতে পারেননি।
এই নিয়ে থানা পুলিশ, স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বাররা একাধিক সালিস বৈঠকও করেছে। সালিসের সিদ্ধান্ত ছিল, পেটের বাচ্চা ভূমিষ্ট হওয়ার পরে তাদের ছাড়াছাড়ি (ডিভোর্স) হবে। কিন্তু মলি তার সুখের জন্য শিশুটিকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেন রাব্বি।
কিন্তু উম্মে সালমা মলির দাবি, ‘সন্তান গর্ভে আসার পর রাব্বি খাওয়া-পরা দিত না। অপুষ্টি, চিকিৎসা সেবা না দেয়া আর অবহেলা করা হয় আমাকে। মেয়ের জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল; হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। সিদ্ধান্ত আগেই ছিল, তার সাথে আর থাকব না।
তার অভিযোগ, রাব্বির তিনজন বান্ধবী আছে। এছাড়া আরও দুই নারীর সঙ্গে তার পরকীয়া সম্পর্ক। চৌগাছা উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জানিয়েছেন, শালিস-বিচারে সিদ্ধান্ত ছিল, মলির গর্ভের শিশুটি জন্ম নেয়ার পরে স্বামী-স্ত্রীর আলাদা হয়ে যাবে। কিন্তু শিশুটির জন্মের পর এমন মৃত্যু খুবই রহস্যজনক।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক এম আব্দুর রশিদ ও আহম্মেদ তারেক শামস জানিয়েছেন, শিশুটির মৃত্যু অস্বাভাবিক। বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তারদের বোর্ড বসিয়ে ময়নাতদন্ত করতে হবে।
যশোর কোতোয়ালী থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।ময়নাতদন্তের জন্য শিশুটির মরদেহ হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে।