ঢাকা ০৭:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপিতে প্রার্থিতার দ্বন্দ্ব প্রকট

Reporter Name

সবুজদেশ ডেক্সঃ জয়পুরহাট জেলা সভাপতি মোজাহার আলী প্রধান মারা যাওয়ার পর সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় মমতাজ উদ্দিন মণ্ডলকে। এরপর পুরনো কোন্দল শুরু হয় নতুন রূপে। একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। ওই জেলায় নেতা-কর্মীরাও কয়েক ভাগে বিভক্ত। মমতাজ উদ্দিন মণ্ডল নির্বাচন না করলেও তাকে নিজের পক্ষে টানাহেঁচড়া করছেন জয়পুরহাট-১ আসনে নির্বাচনে লড়তে প্রস্তুত চার প্রার্থী। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন সাবেক মন্ত্রী যুদ্ধাপরাধী আবদুল আলিমের ছেলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল আলিম, জয়পুরহাট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাফিজুর রহমান পলাশ ও যুগ্মসম্পাদক মাসুদ রানা প্রধান। তারা নিজেদের মতো করে নেতা-কর্মীদের নিয়ে বলয় তৈরি করেছেন। পুরো এলাকায় এখন  নেতা-কর্মীরা বিভক্ত। জয়পুরহাট-২ আসনেও একই অবস্থা। সেখানে বিএনপির জেলা সহসভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা ছাড়াও মনোনয়ন চাইবেন সাবেক হুইপ আবু ইউসুফ মো. খলিলুর রহমান। সেখানেও দলীয় সব কর্মসূচি পালিত হচ্ছে দুই ভাগে। শুধু জয়পুরহাটেই নয়, ৩০০ সংসদীয় আসনের বড় অংশজুড়েই একাধিক প্রার্থী মাঠের নেতা-কর্মীদের নিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরি করছেন। অনেক জেলায় কর্মসূচিও হয় পৃথকভাবে। কোন্দলে বিপর্যস্ত এখন সংসদীয় এলাকাগুলো। কোথাও কোথাও বহুধাবিভক্ত নেতা-কর্মীরা। আবার কোথাও সুযোগসন্ধানী নেতা-কর্মীরা। প্রতীক যার, তার পক্ষেই থাকবেন মাঠের নেতা-কর্মীরা— এমন চিত্র আছে অনেক সংসদীয় আসনে। এ ছাড়া বিএনপির প্রায় ৫০টি সাংগঠনিক জেলায় নতুন করে কমিটি দেওয়া হয়েছে। সেখানে যারা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন তাদের সমর্থকরা মাঠে সক্রিয়। পদবঞ্চিতদের বড় একটি অংশ এখনো নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন। তবে একে কোন্দল হিসেবে দেখছেন না বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিটি আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। বিএনপির মতো একটি বড় দলে এটাই স্বাভাবিক। একে কোন্দল বা অন্তর্দ্বন্দ্ব বলা যাবে না। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।’

নাটোর-১ আসনে নির্বাচন করতে পারেন বিএনপি জোট সরকার আমলের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান পটলের সহধর্মিণী অধ্যক্ষ শিরিন সুলতানা। তবে ওই আসনে ছাড় দিতে নারাজ বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু। মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে তিনিও মাঠে সক্রিয়। এ ছাড়া সেখানে ছাত্রদলের সহসভাপতি তরিকুল ইসলাম টিটুও মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে নিজের মতো করে বলয় তৈরি করেছেন। দুই প্রার্থীকে ঘিরে সেখানে নেতা-কর্মীরাও দুই ভাগে বিভক্ত।

মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের দুই ছেলে খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু ও খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলু। প্রয়াত খোন্দকার দেলোয়ারের সময় ওই আসনে নেতা-কর্মীরা ছিলেন ঐক্যবদ্ধ। এখন দুই ভাইয়ে বিভক্ত হয়ে গেছেন নেতা-কর্মীরা।

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তিনজন। সেখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এ এম বদরুজ্জামান খান খসরু মারা যাওয়ায় তার ছেলে মাহমুদুর রহমান সুমন আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। এ ছাড়া খসরুর ভাই সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুরও আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিন নেতাকে ঘিরে সেখানে বিএনপি নেতা-কর্মীরাও তিন ধারায় বিভক্ত। দলীয় কর্মসূচিও পালিত হয় তিন ভাগে। ফরিদপুর-৪ আসনেও বিএনপি নেতা-কর্মীরা নানাভাবে বিভক্ত হয়ে কর্মসূচি পালন করছেন। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাদা মিয়া। এ ছাড়া আরও কয়েকজন নেতা নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে নিজেদের মতো করে বলয় তৈরি করেছেন তারা। মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যরা হলেন সাবেক এমপি মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী ইয়াসমিন আরা হক, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলী আশরাফ নাননু, জাসাসের কেন্দ্রীয় নেতা শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা, ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইকবাল হোসেন সেলিম, চরভদ্রাসন উপজেলা চেয়ারম্যান এ জি এম বাদল আমিন। দিনাজপুর-৪ আসনে দুই প্রার্থী বিএনপি নেতা আখতারুজ্জামান মিয়া ও হাফিজুর রহমান নিজেদের মতো করে বলয় তৈরি করে ভোটযুদ্ধে মাঠে নেমেছেন।

নীলফামারী-৪ আসনে আমজাদ হোসেন সরকার, কণ্ঠশিল্পী বেবি নাজনীন ও বিলকিস ইসলামে বিভক্ত বিএনপি। রংপুর-৩-এ বিএনপি নেতা মোজাফফর হোসেন, রইচ আহমেদ, আবদুল কাইয়ুম মণ্ডল ও মরহুম মশিউর রহমান জাদু মিয়ার কন্যা রিটা রহমানও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাদের ঘিরে সেখানে নেতা-কর্মীরাও কয়েকভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বগুড়া-২ আসনে বিএনপির দুই প্রার্থী অধ্যক্ষ মীর শাহে আলম ও এ কে এম হাফিজুর রহমানকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া হলে ওই আসনে লড়তে পারেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তাকে ঘিরেও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একটি অংশ পৃথক বলয় তৈরি করেছেন এরই মধ্যে।

রাজশাহীর অধিকাংশ আসনেই প্রার্থী নিয়ে নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। রাজশাহী-৩ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রবীণ নেতা কবির হোসেন নির্বাচন করতে পারেন। এ ছাড়া ওই আসনে রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু, মহানগরী বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন ও বিএনপি নেতা রায়হানুল আলম মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিএনপির কর্মসূচিতে পৃথকভাবে শোডাউন দেন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। তাদের ঘিরেও সেখানে বিএনপিতে মেরুকরণ তৈরি হয়েছে। রাজশাহী-৪ আসনেও বিএনপির তিন প্রার্থী। সেখানে বিএনপির সাবেক এমপি আবু হেনা মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের একটি বলয় তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি নেতা তোফাজ্জল হোসেন তপু ও আবদুল গফুরও নেতা-কর্মীদের নিয়ে পৃথকভাবে শোডাউন দিচ্ছেন। রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা নাদিম মোস্তফার পক্ষেই নেতা-কর্মীর বড় একটি অংশ কাজ করছে। এ ছাড়া বিএনপি নেতা সিরাজুল হক, নজরুল ইসলাম ও মাহমুদা হাবিবার নেতৃত্বেও নেতা-কর্মীরা বিভক্ত। একই অবস্থা রাজশাহী-৬ আসনেও। সেখানে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ পেয়েছে। বিএনপি নেতা আবু সাইদ চাঁদ, দেবাশীষ রায় মধু ও আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাদের ঘিরেও নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কর্মসূচিও পালিত হয় পৃথকভাবে।

সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। সেখানে আরও দুজন প্রার্থী মনোনয়ন চান। তারা হলেন মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদের ও রফিকুল ইসলাম খান পাপ্পু। এর মধ্যে পৃথকভাবে আলিম ও পাপ্পু কর্মসূচি পালন করেন। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে প্রয়াত ডা. আবদুল মতিনের ছেলে এম এ মুহিত মনোনয়ন চান। সেখানে আরও দুই প্রার্থী নিজেদের মতো করে বলয় তৈরি করে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। তারা হলেন বিএনপির অঙ্গসংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা গোলাম সারোয়ার ও কামরুদ্দিন ইয়াহিয়া খান মজলিস। পাবনা-১ আসনে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন জোটগতভাবে মনোনয়ন চাইতে পারেন। সেখানে ছাড় দিতে চায় না বিএনপি। সাবেক ছাত্রনেত্রী বদরুন্নেসা কলেজ ছাত্রদল থেকে প্রথম নির্বাচিত ভিপি খায়রুন্নাহার ও মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদেরও মনোনয়ন চাইতে পারেন।

পাবনা-২ আসন থেকে বিএনপির দুই নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। তারা হলেন বিএনপি নেতা কৃষিবিদ হাসান জাফরি তুহিন ও সেলিম রেজা হাবিব। এ ছাড়া ২০-দলীয় জোটের শরিক এনডিপি চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজাও ওই আসনে লড়বেন। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই চলছে। একই অবস্থা পাবনা-৩ আসনেও। সেখানে বিএনপির দুই নেতা আনোয়ারুল ইসলাম ও সাইফুল আজম সুজার পাশাপাশি বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান ফখরুল আযমও মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে। এ নিয়ে নেতা-কর্মীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। পাবনা-৫ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী কারাবন্দী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস মনোনয়নপ্রত্যাশী। কিন্তু সেখানে বাদ সেধেছেন পৌর মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু। সেখানে নেতা-কর্মীরা ও দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তবে ২০-দলীয় জোটের পক্ষে জামায়াত নেতা আবু তালেব মণ্ডলও মনোনয়ন চাইবেন।

কুষ্টিয়া-২ আসনে বিএনপির দুই প্রার্থী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রাগীব রব চৌধুরীর পাশাপাশি জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিঙ্কনও মনোনয়নপ্রত্যাশী। ঝিনাইদহ-১ আসনে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডুর পাশাপাশি বিএনপি নেতা আবদুল ওয়াহাব ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী আসাদুজ্জামান আসাদ মনোনয়নপ্রত্যাশী। ঝিনাইদহ-৩ আসনেও নেতা-কর্মীরা ত্রিমুখী অবস্থানে রয়েছেন। সেখানে বিএনপি নেতা কণ্ঠশিল্পী মনির খানের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুজ্জামান খান শিমুল ও প্রয়াত শহীদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে মেহেদী হাসান রনিও মনোনয়নপ্রত্যাশী। যশোর-১ আসনে বিএনপির সংস্কারপন্থি নেতা মফিকুল হাসান তৃপ্তি ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মহসীন কবীরও মনোনয়নপ্রত্যাশী। সেখানে জামায়াত নেতা মাওলানা আজিজুর রহমানও মনোনয়নপ্রত্যাশী। একই অবস্থা যশোর-২ আসনেও। সেখানে মনোনয়ন নিয়ে ত্রিমুখী লড়াই চলছে। বিএনপির দুই নেতা মিজানুর রহমান খান ও সাবিরা নাজমুল মুন্নি মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে জামায়াতও সেখানে প্রার্থী দিতে পারে বলে জানা গেছে।

মাগুরা-১ আসনে লড়তে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর সহধর্মিণী শর্মিলা রহমান। তবে সেখানে জিয়া পরিবারের কেউ নির্বাচন না করলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবীর মুরাদ, বিএনপি নেত্রী নেওয়াজ হালিমা আরলী ও মনোয়ার হোসেন খান মনোনয়ন চাইবেন। এ নিয়ে ওই আসনে ত্রিমুখী লড়াই চলছে। বাগেরহাট-১ আসনে বিএনপি তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সেখানে বিএনপি নেতা শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ রবিউল আলম পৃথক তিন বলয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বাগেরহাট-৩ আসনেও বিএনপির দুই নেতায় বিভক্ত কর্মী-সমর্থকরা। সেখানে বিএনপির দুই নেতা কেন্দ্রীয় সহপ্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম ও জেলা সহসভাপতি ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তবে সেখানে জামায়াতও প্রার্থী দিতে পারে বলে জানা গেছে। খুলনা-৩ আসনে বিএনপির তিন প্রার্থী। নেতা-কর্মীরাও তিন ভাগে বিভক্ত। সেখানে বিএনপি নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল, কাজী শাহ সেকান্দার আলী ও আরিফুর রহমান মিঠু দলের প্রতীকপ্রত্যাশী। খুলনা-৬ আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা, ছাত্রদলের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক ও বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান মন্টুর নেতৃত্বে ত্রিমুখী লড়াই চলছে। আবার সেখানে জামায়াতের প্রার্থীও দেওয়া হতে পারে।

পটুয়াখালী-১ আসনেও বিএনপিতে মনোনয়নযুদ্ধ শুরু হয়েছে। সেখানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন বিএনপি নেতা আবদুর রব মিয়া ও স্নেহাংশু সরকার কুট্টি। ভোলা-৪ আসনে বিএনপির দুই সাবেক ছাত্রনেতার লড়াই শুরু হয়েছে। দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা পৃথক কর্মসূচি পালন করেন। তারা হলেন সাবেক ছাত্রনেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম ও যুবদলের ১ নম্বর যুগ্মসম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন। ওই এলাকায় দুই বলয়ে বিভক্ত নেতা-কর্মীরা। বরিশাল-৪ আসনেও মনোনয়ন নিয়ে ত্রিমুখী লড়াই শুরু হয়েছে। ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি রাজিব আহসান ছাড়াও বিএনপির সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ ও শাহ মো. আবুল হোসাইনও মাঠে রয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, ‘বিএনপি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। এ দলে অনেক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। তাই প্রার্থীদের ঘিরে নেতা-কর্মীরাও মাঠে সক্রিয়। এটা নির্বাচন ও আন্দোলনের জন্য খুবই ইতিবাচক দিক। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সবাই কাজ করবে। একে কোন্দল বা অন্তর্দ্বন্দ্ব বলা ঠিক হবে না।’

About Author Information
আপডেট সময় : ০৯:২৭:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ অক্টোবর ২০১৮
৮৪৫ Time View

বিএনপিতে প্রার্থিতার দ্বন্দ্ব প্রকট

আপডেট সময় : ০৯:২৭:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ অক্টোবর ২০১৮

সবুজদেশ ডেক্সঃ জয়পুরহাট জেলা সভাপতি মোজাহার আলী প্রধান মারা যাওয়ার পর সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় মমতাজ উদ্দিন মণ্ডলকে। এরপর পুরনো কোন্দল শুরু হয় নতুন রূপে। একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। ওই জেলায় নেতা-কর্মীরাও কয়েক ভাগে বিভক্ত। মমতাজ উদ্দিন মণ্ডল নির্বাচন না করলেও তাকে নিজের পক্ষে টানাহেঁচড়া করছেন জয়পুরহাট-১ আসনে নির্বাচনে লড়তে প্রস্তুত চার প্রার্থী। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন সাবেক মন্ত্রী যুদ্ধাপরাধী আবদুল আলিমের ছেলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল আলিম, জয়পুরহাট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাফিজুর রহমান পলাশ ও যুগ্মসম্পাদক মাসুদ রানা প্রধান। তারা নিজেদের মতো করে নেতা-কর্মীদের নিয়ে বলয় তৈরি করেছেন। পুরো এলাকায় এখন  নেতা-কর্মীরা বিভক্ত। জয়পুরহাট-২ আসনেও একই অবস্থা। সেখানে বিএনপির জেলা সহসভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা ছাড়াও মনোনয়ন চাইবেন সাবেক হুইপ আবু ইউসুফ মো. খলিলুর রহমান। সেখানেও দলীয় সব কর্মসূচি পালিত হচ্ছে দুই ভাগে। শুধু জয়পুরহাটেই নয়, ৩০০ সংসদীয় আসনের বড় অংশজুড়েই একাধিক প্রার্থী মাঠের নেতা-কর্মীদের নিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরি করছেন। অনেক জেলায় কর্মসূচিও হয় পৃথকভাবে। কোন্দলে বিপর্যস্ত এখন সংসদীয় এলাকাগুলো। কোথাও কোথাও বহুধাবিভক্ত নেতা-কর্মীরা। আবার কোথাও সুযোগসন্ধানী নেতা-কর্মীরা। প্রতীক যার, তার পক্ষেই থাকবেন মাঠের নেতা-কর্মীরা— এমন চিত্র আছে অনেক সংসদীয় আসনে। এ ছাড়া বিএনপির প্রায় ৫০টি সাংগঠনিক জেলায় নতুন করে কমিটি দেওয়া হয়েছে। সেখানে যারা কমিটিতে স্থান পেয়েছেন তাদের সমর্থকরা মাঠে সক্রিয়। পদবঞ্চিতদের বড় একটি অংশ এখনো নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন। তবে একে কোন্দল হিসেবে দেখছেন না বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিটি আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। বিএনপির মতো একটি বড় দলে এটাই স্বাভাবিক। একে কোন্দল বা অন্তর্দ্বন্দ্ব বলা যাবে না। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।’

নাটোর-১ আসনে নির্বাচন করতে পারেন বিএনপি জোট সরকার আমলের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত ফজলুর রহমান পটলের সহধর্মিণী অধ্যক্ষ শিরিন সুলতানা। তবে ওই আসনে ছাড় দিতে নারাজ বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু। মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে তিনিও মাঠে সক্রিয়। এ ছাড়া সেখানে ছাত্রদলের সহসভাপতি তরিকুল ইসলাম টিটুও মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে নিজের মতো করে বলয় তৈরি করেছেন। দুই প্রার্থীকে ঘিরে সেখানে নেতা-কর্মীরাও দুই ভাগে বিভক্ত।

মানিকগঞ্জ-১ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের দুই ছেলে খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু ও খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলু। প্রয়াত খোন্দকার দেলোয়ারের সময় ওই আসনে নেতা-কর্মীরা ছিলেন ঐক্যবদ্ধ। এখন দুই ভাইয়ে বিভক্ত হয়ে গেছেন নেতা-কর্মীরা।

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তিনজন। সেখানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এ এম বদরুজ্জামান খান খসরু মারা যাওয়ায় তার ছেলে মাহমুদুর রহমান সুমন আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। এ ছাড়া খসরুর ভাই সাবেক এমপি আতাউর রহমান আঙ্গুরও আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিন নেতাকে ঘিরে সেখানে বিএনপি নেতা-কর্মীরাও তিন ধারায় বিভক্ত। দলীয় কর্মসূচিও পালিত হয় তিন ভাগে। ফরিদপুর-৪ আসনেও বিএনপি নেতা-কর্মীরা নানাভাবে বিভক্ত হয়ে কর্মসূচি পালন করছেন। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাদা মিয়া। এ ছাড়া আরও কয়েকজন নেতা নিজেকে প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে নিজেদের মতো করে বলয় তৈরি করেছেন তারা। মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যরা হলেন সাবেক এমপি মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী ইয়াসমিন আরা হক, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলী আশরাফ নাননু, জাসাসের কেন্দ্রীয় নেতা শাহরিয়ার ইসলাম শায়লা, ভাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইকবাল হোসেন সেলিম, চরভদ্রাসন উপজেলা চেয়ারম্যান এ জি এম বাদল আমিন। দিনাজপুর-৪ আসনে দুই প্রার্থী বিএনপি নেতা আখতারুজ্জামান মিয়া ও হাফিজুর রহমান নিজেদের মতো করে বলয় তৈরি করে ভোটযুদ্ধে মাঠে নেমেছেন।

নীলফামারী-৪ আসনে আমজাদ হোসেন সরকার, কণ্ঠশিল্পী বেবি নাজনীন ও বিলকিস ইসলামে বিভক্ত বিএনপি। রংপুর-৩-এ বিএনপি নেতা মোজাফফর হোসেন, রইচ আহমেদ, আবদুল কাইয়ুম মণ্ডল ও মরহুম মশিউর রহমান জাদু মিয়ার কন্যা রিটা রহমানও মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাদের ঘিরে সেখানে নেতা-কর্মীরাও কয়েকভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বগুড়া-২ আসনে বিএনপির দুই প্রার্থী অধ্যক্ষ মীর শাহে আলম ও এ কে এম হাফিজুর রহমানকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া হলে ওই আসনে লড়তে পারেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তাকে ঘিরেও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একটি অংশ পৃথক বলয় তৈরি করেছেন এরই মধ্যে।

রাজশাহীর অধিকাংশ আসনেই প্রার্থী নিয়ে নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। রাজশাহী-৩ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রবীণ নেতা কবির হোসেন নির্বাচন করতে পারেন। এ ছাড়া ওই আসনে রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু, মহানগরী বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন ও বিএনপি নেতা রায়হানুল আলম মনোনয়নপ্রত্যাশী। বিএনপির কর্মসূচিতে পৃথকভাবে শোডাউন দেন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। তাদের ঘিরেও সেখানে বিএনপিতে মেরুকরণ তৈরি হয়েছে। রাজশাহী-৪ আসনেও বিএনপির তিন প্রার্থী। সেখানে বিএনপির সাবেক এমপি আবু হেনা মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের একটি বলয় তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি নেতা তোফাজ্জল হোসেন তপু ও আবদুল গফুরও নেতা-কর্মীদের নিয়ে পৃথকভাবে শোডাউন দিচ্ছেন। রাজশাহী-৫ আসনে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা নাদিম মোস্তফার পক্ষেই নেতা-কর্মীর বড় একটি অংশ কাজ করছে। এ ছাড়া বিএনপি নেতা সিরাজুল হক, নজরুল ইসলাম ও মাহমুদা হাবিবার নেতৃত্বেও নেতা-কর্মীরা বিভক্ত। একই অবস্থা রাজশাহী-৬ আসনেও। সেখানে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ পেয়েছে। বিএনপি নেতা আবু সাইদ চাঁদ, দেবাশীষ রায় মধু ও আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাদের ঘিরেও নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কর্মসূচিও পালিত হয় পৃথকভাবে।

সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। সেখানে আরও দুজন প্রার্থী মনোনয়ন চান। তারা হলেন মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদের ও রফিকুল ইসলাম খান পাপ্পু। এর মধ্যে পৃথকভাবে আলিম ও পাপ্পু কর্মসূচি পালন করেন। সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে প্রয়াত ডা. আবদুল মতিনের ছেলে এম এ মুহিত মনোনয়ন চান। সেখানে আরও দুই প্রার্থী নিজেদের মতো করে বলয় তৈরি করে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন। তারা হলেন বিএনপির অঙ্গসংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা গোলাম সারোয়ার ও কামরুদ্দিন ইয়াহিয়া খান মজলিস। পাবনা-১ আসনে যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন জোটগতভাবে মনোনয়ন চাইতে পারেন। সেখানে ছাড় দিতে চায় না বিএনপি। সাবেক ছাত্রনেত্রী বদরুন্নেসা কলেজ ছাত্রদল থেকে প্রথম নির্বাচিত ভিপি খায়রুন্নাহার ও মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদেরও মনোনয়ন চাইতে পারেন।

পাবনা-২ আসন থেকে বিএনপির দুই নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী। তারা হলেন বিএনপি নেতা কৃষিবিদ হাসান জাফরি তুহিন ও সেলিম রেজা হাবিব। এ ছাড়া ২০-দলীয় জোটের শরিক এনডিপি চেয়ারম্যান গোলাম মর্তুজাও ওই আসনে লড়বেন। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই চলছে। একই অবস্থা পাবনা-৩ আসনেও। সেখানে বিএনপির দুই নেতা আনোয়ারুল ইসলাম ও সাইফুল আজম সুজার পাশাপাশি বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান ফখরুল আযমও মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে। এ নিয়ে নেতা-কর্মীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। পাবনা-৫ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী কারাবন্দী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস মনোনয়নপ্রত্যাশী। কিন্তু সেখানে বাদ সেধেছেন পৌর মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু। সেখানে নেতা-কর্মীরা ও দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তবে ২০-দলীয় জোটের পক্ষে জামায়াত নেতা আবু তালেব মণ্ডলও মনোনয়ন চাইবেন।

কুষ্টিয়া-২ আসনে বিএনপির দুই প্রার্থী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রাগীব রব চৌধুরীর পাশাপাশি জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিঙ্কনও মনোনয়নপ্রত্যাশী। ঝিনাইদহ-১ আসনে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডুর পাশাপাশি বিএনপি নেতা আবদুল ওয়াহাব ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী আসাদুজ্জামান আসাদ মনোনয়নপ্রত্যাশী। ঝিনাইদহ-৩ আসনেও নেতা-কর্মীরা ত্রিমুখী অবস্থানে রয়েছেন। সেখানে বিএনপি নেতা কণ্ঠশিল্পী মনির খানের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুজ্জামান খান শিমুল ও প্রয়াত শহীদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে মেহেদী হাসান রনিও মনোনয়নপ্রত্যাশী। যশোর-১ আসনে বিএনপির সংস্কারপন্থি নেতা মফিকুল হাসান তৃপ্তি ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা মহসীন কবীরও মনোনয়নপ্রত্যাশী। সেখানে জামায়াত নেতা মাওলানা আজিজুর রহমানও মনোনয়নপ্রত্যাশী। একই অবস্থা যশোর-২ আসনেও। সেখানে মনোনয়ন নিয়ে ত্রিমুখী লড়াই চলছে। বিএনপির দুই নেতা মিজানুর রহমান খান ও সাবিরা নাজমুল মুন্নি মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে জামায়াতও সেখানে প্রার্থী দিতে পারে বলে জানা গেছে।

মাগুরা-১ আসনে লড়তে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর সহধর্মিণী শর্মিলা রহমান। তবে সেখানে জিয়া পরিবারের কেউ নির্বাচন না করলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবীর মুরাদ, বিএনপি নেত্রী নেওয়াজ হালিমা আরলী ও মনোয়ার হোসেন খান মনোনয়ন চাইবেন। এ নিয়ে ওই আসনে ত্রিমুখী লড়াই চলছে। বাগেরহাট-১ আসনে বিএনপি তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সেখানে বিএনপি নেতা শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ রবিউল আলম পৃথক তিন বলয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বাগেরহাট-৩ আসনেও বিএনপির দুই নেতায় বিভক্ত কর্মী-সমর্থকরা। সেখানে বিএনপির দুই নেতা কেন্দ্রীয় সহপ্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম ও জেলা সহসভাপতি ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তবে সেখানে জামায়াতও প্রার্থী দিতে পারে বলে জানা গেছে। খুলনা-৩ আসনে বিএনপির তিন প্রার্থী। নেতা-কর্মীরাও তিন ভাগে বিভক্ত। সেখানে বিএনপি নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল, কাজী শাহ সেকান্দার আলী ও আরিফুর রহমান মিঠু দলের প্রতীকপ্রত্যাশী। খুলনা-৬ আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা, ছাত্রদলের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক ও বিএনপি নেতা মনিরুজ্জামান মন্টুর নেতৃত্বে ত্রিমুখী লড়াই চলছে। আবার সেখানে জামায়াতের প্রার্থীও দেওয়া হতে পারে।

পটুয়াখালী-১ আসনেও বিএনপিতে মনোনয়নযুদ্ধ শুরু হয়েছে। সেখানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরীকে ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন বিএনপি নেতা আবদুর রব মিয়া ও স্নেহাংশু সরকার কুট্টি। ভোলা-৪ আসনে বিএনপির দুই সাবেক ছাত্রনেতার লড়াই শুরু হয়েছে। দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা পৃথক কর্মসূচি পালন করেন। তারা হলেন সাবেক ছাত্রনেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম ও যুবদলের ১ নম্বর যুগ্মসম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন। ওই এলাকায় দুই বলয়ে বিভক্ত নেতা-কর্মীরা। বরিশাল-৪ আসনেও মনোনয়ন নিয়ে ত্রিমুখী লড়াই শুরু হয়েছে। ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি রাজিব আহসান ছাড়াও বিএনপির সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ ও শাহ মো. আবুল হোসাইনও মাঠে রয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, ‘বিএনপি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। এ দলে অনেক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। তাই প্রার্থীদের ঘিরে নেতা-কর্মীরাও মাঠে সক্রিয়। এটা নির্বাচন ও আন্দোলনের জন্য খুবই ইতিবাচক দিক। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সবাই কাজ করবে। একে কোন্দল বা অন্তর্দ্বন্দ্ব বলা ঠিক হবে না।’