বিএনপির ওপর নজর আ.লীগের
সবুজদেশ ডেক্স: দেশে বৃহত্তর ঐক্যের অংশীদার হওয়ার চেষ্টা, জাতিসংঘের রাজনৈতিক বিভাগের সহকারী মহাসচিব ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক-বিএনপির এই দুই তৎপরতার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ।
সরকারি দলের কেউ কেউ বলছেন, জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক নিয়ে এখনো উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তবে যুক্তফ্রন্ট, গণফোরামসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপির ঐক্য গড়ে উঠলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারবিরোধীদের তৎপরতা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রের দাবি, বিএনপির নিযুক্ত লবিস্টের তৎপরতায় জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকার সঙ্গে বিএনপির নেতাদের বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠকের প্রভাব কতটুকু, সেদিকে নজর রাখছে আওয়ামী লীগ। আগামী সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে যাবেন। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে কোনো জানার বিষয় বা রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কোনো আগ্রহের জায়গা থাকলে, তা তখন প্রধানমন্ত্রী অবহিত হবেন। তখন অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, নির্বাচনের আগে বিএনপি ও সরকারবিরোধী বিভিন্ন শক্তি জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে নানা তৎপরতা চালাবে, এটা তাদের বিবেচনায় আছে। জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে বৃহস্পতিবারের বৈঠকটি এরই অংশ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো ঢাকায় এসে বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করেছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আবারও বিশেষ দূত আনার বিষয়ে বিএনপির চেষ্টা থাকতে পারে। তবে চাপে ফেলে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কিছু আদায় করতে পারবে না। বরং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে যে পরিস্থিতি ছিল, এখন তার চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে আওয়ামী লীগ।
আন্তর্জাতিক বিষয়াদি সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন, আওয়ামী লীগের এমন একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৪ সালে মূল বিষয় ছিল শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে কি না। এবার এই প্রশ্ন অতটা জোরালো নয়। এরই মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে কারাগারে আছেন। বরং আওয়ামী লীগ চাইছে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রভাবমুক্ত হয়ে নির্বাচনে আসুক বিএনপি। এমনটা হলে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আলোচনার সুযোগ হতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের সহযোগী মুখপাত্র অ্যারি কানোকো যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধিকে এক ই-মেইল বার্তায় বলেছেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন যাতে স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ হয়, সে জন্য জাতিসংঘ সব পক্ষের কাছে আবেদন করেছে।
গতকাল শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তারা (বিএনপি) লবিস্ট নিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে লবিং করবে আমাদের চাপ দেওয়ার জন্য, বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেওয়ার জন্য। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমাদের গণভিত এবং আমাদের শিকড় দুর্বল নয়। আমাদের শিকড় বাংলাদেশের মাটির অনেক গভীরে। আওয়ামী লীগকে চাপ দিতে পারে কেবল বাংলাদেশের জনগণ। অন্য কারও চাপে আওয়ামী লীগ নত হবে না। ’
এদিকে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ২২ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশ ডেকেছেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। এরই মধ্যে গণফোরামের সঙ্গে মতৈক্য হয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত জোট যুক্তফ্রন্ট। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিএনপিরও যোগাযোগ চলছে। ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র জানায়, ২২ সেপ্টেম্বরের সমাবেশে বিএনপিরও অংশগ্রহণ থাকতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, আজ শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টকে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঐক্য প্রক্রিয়ার বিষয়ে ঘোষণা আসবে। ২২ সেপ্টেম্বরের সমাবেশে বিএনপি থাকবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা এখনো ঠিক হয়নি।
এই বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে কিছুটা চিন্তিত আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ভোটের মাঠে কামাল হোসেন, বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অন্য নেতারা বড় নিয়ামক নন। তবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাঁদের একটা পরিচিতি আছে। বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিয়ে কোনো জোট হলে এবং বিএনপি এতে যুক্ত হলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এমন একটা বার্তা যাবে যে সরকারবিরোধী সবাই এককাট্টা। ২০০৪ সালে ১৪ দল গঠন করে এবং ২০০৬ সালে মহাজোট গঠনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগও এই কৌশল নিয়েছিল।