সবুজদেশ ডেক্সঃ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি নেতাদের ভুলের জন্যই নির্বাচনে তাঁদের ভরাডুবি হয়েছে। মনোনয়ন বাণিজ্য, এজেন্ট দিতে না পারা ও নির্বাচনী প্রচারে অংশ না নেওয়া এই ভরাডুবির প্রধান কারণ। তাঁরা নির্বাচনের নামে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানা নাটক করেছেন।

সেতুমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে নির্বাচন–পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় বিএনপির পরাজয়ের বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেন তিনি।

মন্ত্রী কাদের বলেন, বিএনপির প্রার্থীরা কোথাও তাঁদের পোস্টার-ব্যানার লাগাননি। তাঁরা নির্বাচনে পরাজয়ের আগেই হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। বাস্তবে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো তাঁদের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। তাই এ নির্বাচনে তাঁদের পরাজয় ছিল অবধারিত। উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ নিজের কেন্দ্রে তাঁর ভোট দিতে যাননি। তাঁর বাড়ি থেকে মাত্র ৭০ গজের মধ্যে ভোটকেন্দ্র। যদিও তিনি তাঁর কেন্দ্রে জয়লাভ করেছেন।

ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে আসা ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি অবাক হয়েছি যে বিএনপির মতো বড় একটি দলের সাংগঠনিক কোনো কাঠামো নেই। তারা সাংগঠনিকভাবে যে কতটা দুর্বল তা এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে বিএনপির ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীরাও এজেন্ট দিতে পারেননি। এ কারণে নির্বাচনে তাঁদের ভোটের এমন ফলাফল হয়েছে।

কবে নাগাদ নতুন সরকার গঠিত হতে পারে জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করি, আগামী ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগেই সংসদ সদস্যগণ ও নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেবেন। নতুন বছরে আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন বছরের অঙ্গীকার হচ্ছে এ নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের যে, ভুল-ভ্রান্তি ও সাংগঠনিক দুর্বলতা বুঝতে পেরেছি তা কাটিয়ে ওঠা।’

আওয়ামী লীগের বিজয়ের কারণ সম্পর্কে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে গণজোয়ারের প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর তা আর কখনো দেখা যায়নি। এ নির্বাচনের রায়ে ’৭০ ও ’৫৪ সালের মতো গণজোয়ারের প্রতিফলন ঘটেছে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঐকমত্যের সরকার হবে নাকি তারা বিরোধী দল হিসেবে থাকবে, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সরকার গঠনের সময় বিষয়টি দেখবেন। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এ বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।

বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সাংসদদের শপথ না নেওয়া ও তাঁদের আন্দোলন কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, বিএনপির আন্দোলনের মতো অবজেকটিভ কন্ডিশন দেশে নেই। আর আন্দোলনে অংশ নেওয়ার মতো সাবজেক্টিভ প্রিপারেশনও তাদের নেই। আন্দোলনের সব সূত্র তাদের বিপক্ষে। তিনি বলেন, বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নেতাদের এত হতাশ ও বিমর্ষ দেখাচ্ছিল যে মনে হয় যেন তাঁরা নির্বাচনের ভরাডুবিতে ভেঙে পড়েছেন। এ অবস্থায় তাঁদের কর্মীরা কীভাবে আন্দোলন করতে আশাবাদী হবেন?

কাদের বলেন, আন্দোলন করতে হলে চেতনার দরকার হয়, আর তার সঙ্গে থাকতে হয় সাংগঠনিক প্রস্তুতি। তার কোনোটিই বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেই। এ ধরনের সামর্থ্য থাকলে তাঁরা নির্বাচনের ফলাফলের বিরুদ্ধে অন্তত একটি মিছিল হলেও করত। বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরও তাঁরা কোনো ধরনের আন্দোলন করতে পারেননি। তিনি বলেন, বিএনপি তাদের ভাঙা হাট নিয়ে আন্দোলনের সক্ষমতা অর্জন করবে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করাই বড় চ্যালেঞ্জ।

বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা আশা করি তাঁরা জনগণের রায়কে অসম্মান করবেন না। কারণ যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন তাঁরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।’ তিনি বলেন, বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট সব সময় গণতন্ত্রবিরোধী ভূমিকা পালন করবে তা দেশের মানুষ যেমন মেনে নেবে না, তেমনি বিশ্বের অন্য নেতারাও তা মেনে নেবেন না। আর তারা (বিএনপি) গণতন্ত্র থেকে পিছিয়ে পড়লে দেশ পিছিয়ে যাবে।

নেতা-কর্মীদের প্রতি দলের কী আহ্বান থাকবে জানতে চাইলে কাদের বলেন, ধৈর্য ধরে বিজয়কে ধরে রাখতে হবে। কেউ যাতে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি না করে ও প্রতিপক্ষের ওপর কোনো ধরনের প্রতিহিংসামূলক কোনো কিছু না করে, সে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ সময় কাদের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এদিন সকাল সাতটায় রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। একই দিন বেলা তিনটায় ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here