সবুজদেম ডেক্সঃ আজ শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার অনুমতি পায়নি বিএনপি। কাল রোববার জনসভার অনুমতি পাবে—এমনটা ধরে নিয়ে বড় জনসমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। অন্যদিকে মহানগর নাট্যমঞ্চে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোট আজকের সমাবেশে বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েছে।

 বিএনপি আজ জনসভা করার অনুমতি না পাওয়ায় পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির উত্তেজনা আর থাকছে না। তবে ১৪ দলের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, আজকের সমাবেশের বক্তৃতায় আক্রমণের মূল লক্ষ্যবস্তু থাকবেন বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা। বিশেষ করে ড. কামাল হোসেনের সমালোচনায় মুখর থাকবেন নেতারা। পাশাপাশি বিএনপির সমালোচনাও করা হবে।

এর আগে ড. কামালের নেতৃত্বাধীন ঐক্য প্রক্রিয়া মহানগর নাট্যমঞ্চে নাগরিক সমাবেশ করেছিল। তাতে বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও বামপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে ১৪ দলের আজকের সমাবেশটি ছিল মূলত যৌথ কর্মিসভা। ঐক্য প্রক্রিয়ার ওই সমাবেশের পর কর্মিসভাকে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয় ১৪ দল। আজ বিএনপির সমাবেশ যেহেতু হচ্ছে না, তাই ১৪ দলের সমাবেশটিকে ঐক্য প্রক্রিয়ার পাল্টা হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে।

১৪ দল সূত্রে জানা গেছে, মহানগর নাট্যমঞ্চের ভেতরে ৪০০-৫০০ মানুষ বসতে পারে। এখন আশপাশের খোলা জায়গা ও সড়কেও জমায়েত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য শরিক দলের নেতারা গতকাল শুক্রবার রাতেও নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতি বৈঠক করেছেন। এতে উপস্থিতি বাড়াতে নৌমন্ত্রী ও শ্রমিকনেতা শাজাহান খানকে অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

নেতৃত্বের লড়াই
আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সূত্র জানায়, আজকের সমাবেশে কারা থাকবেন—এ নিয়ে জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের ভেতরে কিছুটা নেতৃত্বের লড়াই আছে। ১৪ দলের কর্মসূচিতে সাধারণত নেতৃত্ব দেন জোটের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের সমাবেশে উ​পস্থিতি নিশ্চিত করার তৎপরতা আছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের থাকবেন কি না, এটা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে পাল্টাপাল্টি না গিয়ে মহানগর নাট্যমঞ্চে আজকের সমাবেশ বাতিল করা ​অথবা বড় জমায়েত না করে কর্মিসভা করা হবে কি না, এমন সম্ভাবনা নিয়েও ১৪ দলে আলোচনা হয়। এই দুই সম্ভাবনার পক্ষে ছিল ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান। তিনি পাল্টাপাল্টি সমাবেশ না করার বিষয়ে টানা দুই দিন বক্তব্যও দেন। তবে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় থাকেন। জোটের শরিকেরাও সমাবেশ করার পক্ষে অবস্থান নেন।

এই অবস্থায় আজকের কর্মসূচি কর্মিসভা নাকি সমাবেশ—এই বিষয়ে জানতে চাইলে জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, পেশাজীবীদের উপস্থিতি ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি এখন সমাবেশই। সমাবেশের মূল লক্ষ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে নানা ষড়যন্ত্রমূলক তৎপরতা চলছে। তা জনগণকে জানানো এবং সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরাই মূল লক্ষ্য।

বিএনপির জনসভা রোববার
কাল রোববার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার অনুমতি পাবে বলে আশা করছে বিএনপি। এ জন্য তারা বড় জনসমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঢাকা মহানগরী ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকেও নেতা-কর্মীদের আসতে বলা হয়েছে। ঢাকার এই জনসভা থেকে নির্বাচনী দাবি, নির্বাচন–পরবর্তী লক্ষ্য উপস্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে আন্দোলন কর্মসূচিরও ঘোষণা আসতে পারে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইতিমধ্যেই ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট যৌথভাবে ৫ দফা দাবি ও ৯ লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। একই লক্ষ্যে আটটি দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোটও জাতীয় সনদ প্রকাশ করেছে। বিএনপি এখনো দলীয়ভাবে সুনির্দিষ্ট দাবি জানায়নি। রোববারের জনসভায় বিএনপি নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে।

গতকাল পর্যন্ত বিএনপি জনসভা করার অনুমতি পায়নি। দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী জনসভার অনুমতির বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এ বিষয়ে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনসভার অনুমতির বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কমিশনার শাহাবুদ্দিন কোরেশীর সঙ্গে শুক্রবার বেলা তিনটায় একবার কথা হয়েছে। তিনি সন্ধ্যার পর ফোন করতে বলেন। সন্ধ্যায় যোগাযোগ করলে তিনি শনিবার (আজ) সকালে যেতে বলেছেন। এই অবস্থায় এখন শনিবারে তো জনসভা করা সম্ভব নয়। দেখা যাক, রোববারে করার অনুমতি দেয় কি না।’ প্রসঙ্গত, ডিএমপির কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া দেশের বাইরে থাকায় ভারপ্রাপ্ত কমিশনারের দায়িত্বে আছেন শাহাবুদ্দিন কোরেশী।

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ ৩০ তারিখ রোববার জনসভা হবে। বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন ইত্যাদি দাবি নিয়ে এই জনসভার জন্য আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি।’

বিএনপির সাত দফা
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, জনসভায় ঘোষণার লক্ষ্যে বিএনপি ৭ দফা দাবি ও ১২ দফা লক্ষ্য ঠিক করেছে। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে দাবিগুলো মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবে তারা।

সাত দফা দাবির মধ্যে আছে এক. (ক) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই জাতীয় সংসদ বাতিল, (খ) খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তাঁর বিরুদ্ধে করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। দুই. (ক) সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, (খ) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেওয়া, (গ) পুরোনো মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার না করা, (ঘ) কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি। তিন. সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা। চার. ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা। পাঁচ. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে তাদের ওপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ না করা। ছয়. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ। সাত. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here