ঢাকা ১২:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বুলবুল ঝড়ের তিনটন চাল চুরি করেন চেয়ারম্যান

Reporter Name

সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ

বুলবুল ঝড়ে আঘাত হানে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায়। ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি ও অসহায় মানুষদের জন্য সরকার জেলার তালা সদর ইউনিয়নে বরাদ্দ দেয় তিন মেট্রিকটন চাউল। চাউলগুলো তাৎক্ষণিক এসব মানুষদের মাঝে বিতরণ করার কথা ছিল। তবে তিন টন চাউলের পুরোটাই আত্নসাত করেন চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেন।

বুলবুল ঝড়ের পর ২০১৯ সালের ৩১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক উপজেলার পাটকেলঘাটা খাদ্য গুদাম থেকে তিন মেট্রিকটন চাল উত্তোলন করেন বলে জানান গুদাম কর্তৃপক্ষ।

তালা সদর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওকেল মোড়ল জানান, চেয়ারম্যান বলেছিল দেড় টন চাল বুলবুলের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। এরপর চালগুলো গুদাম থেকে এনে ইউনিয়ন পরিষদের আনসার ভিডিপি রুমের মধ্যে রাখা হয়। আমাদের কাছ থেকে তালিকা নিয়েছিলেন চেয়ারম্যান তবে চালগুলো বিতরণ করেননি।

এই ইউপি সদস্য বলেন, এরপর সেই চালগুলো কোথায় কি করেছে আমরা জানি না। দুই দিন আগে চেয়ারম্যান সরদার জাকিরের কাছে জানতে চাইলে বলেছে, সে চাল বিলি করে দিয়েছি। কাদের মধ্যে বিলি করেছেন তার কোন উত্তর দেননি।

এদিকে, প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ও অপর এক ইউপি সদস্যের চারদিন আগের ফোনালাপের রেকর্ড রয়েছে প্রতিনিধির কাছে।

সেখানে দুইজনের আলাপচারিতায়, বুলবুল ঝড়ের চাউল উত্তোলন করে বিলি না করে রেখে দেওয়া ও করোনা চাল বিতরণে অনিয়ম, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পে ২০-৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করার বিষয়টি আলোচনা করতে শোনা যায়। ইউপি সদস্যের প্রশ্নে, প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক উত্তরে বলেন, টাকা নিয়েছে ঘটনা সত্যি তবে এখন কি করবা। এছাড়া গত ১৪ এপ্রিল বুলবুল ঝড়ের ক্ষতিগ্রস্থদের সেই চালের কিছু চাল যুবলীগের কিছু নেতাকর্মীদের মাঝে বিলি করা হয়েছে বলেও জানা যায়।

এছাড়া দুইদিন আগে তালা সদর চেয়ারম্যান সরদার জাকিরের সঙ্গে ফোনে কথা বলা এক ইউপি সদস্যের ফোন রেকর্ডও পাওয়া যায়। সেই রেকর্ডে, বুলবুল ঝড়ের চাল বিতরণ না করার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন। সে চাল সেদিন বিলি করলাম তো। তবে বুলবুল ঝড়ের তিন টন চাল বিতরণ না করার বিষয়ে তালা সদর চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেন বলেন, মাস্টাররোলের মাধ্যমে চাল বিতরণ করে মাস্টাররোল উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার নিকট জমা দেওয়া হয়েছে।

তবে ইউপি সদস্য ওকেল জানান, চাল বিতরণ না করে এলাকাবাসীর ভূয়া নাম দিয়ে মাস্টাররোল তৈরী করা হয়েছে। ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইয়াছিন সরদার জানান, বুলবুল ঝড়ের তিন মেট্রিক টনের এক কেজি চাউল চেয়ারম্যান কাউকে দেয়নি। পুরোটাই বিক্রি করে আত্নাসাত করেছেন। বর্তমানে করোনার চাউল আমার ওয়ার্ডে কাকে দিচ্ছে মেম্বর হিসেবে আমি জানি না। অন্য মেম্বরদেরও একই অবস্থা।

১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য রেহেনা বেগম বলেন, বুলবুল ঝড়ের তিন মেট্রিকটন চাল ইউনিয়ন পরিষদের একটি রুমে ছিল জানি। অনেকবার চেয়ারম্যান বিতরণের কথা জানালেও বিতরণ করেনি। এখন চাউলটা কোথায় কি অবস্থায় আছে আমি জানি না।

৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন, করোনা দূর্যোগের চাল চেয়ারম্যান নিজের খুশিমত লোকদের দিচ্ছেন। বাড়িতে খাবার না থাকা প্রকৃত অসহায় মানুষদের বঞ্চিত করছেন। বুলবুল ঝড়ের চালটা বিতরণ করেছে কিনা আমার জানা নেই।

বুলবুল ঝড়ের চাল বিতরণ না করার বিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.ইকবাল হোসেন বলেন, বুলবুল ঝড়ের চাল বিতরণ করা হয়নি। এ বিষয়ে কেউ আমাকে কখনো বলেনি। তবে এ ঘটনার বিষয়ে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

About Author Information
আপডেট সময় : ১১:০৫:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০
৭৯০ Time View

বুলবুল ঝড়ের তিনটন চাল চুরি করেন চেয়ারম্যান

আপডেট সময় : ১১:০৫:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২০

সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ

বুলবুল ঝড়ে আঘাত হানে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায়। ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি ও অসহায় মানুষদের জন্য সরকার জেলার তালা সদর ইউনিয়নে বরাদ্দ দেয় তিন মেট্রিকটন চাউল। চাউলগুলো তাৎক্ষণিক এসব মানুষদের মাঝে বিতরণ করার কথা ছিল। তবে তিন টন চাউলের পুরোটাই আত্নসাত করেন চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেন।

বুলবুল ঝড়ের পর ২০১৯ সালের ৩১ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক উপজেলার পাটকেলঘাটা খাদ্য গুদাম থেকে তিন মেট্রিকটন চাল উত্তোলন করেন বলে জানান গুদাম কর্তৃপক্ষ।

তালা সদর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ওকেল মোড়ল জানান, চেয়ারম্যান বলেছিল দেড় টন চাল বুলবুলের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। এরপর চালগুলো গুদাম থেকে এনে ইউনিয়ন পরিষদের আনসার ভিডিপি রুমের মধ্যে রাখা হয়। আমাদের কাছ থেকে তালিকা নিয়েছিলেন চেয়ারম্যান তবে চালগুলো বিতরণ করেননি।

এই ইউপি সদস্য বলেন, এরপর সেই চালগুলো কোথায় কি করেছে আমরা জানি না। দুই দিন আগে চেয়ারম্যান সরদার জাকিরের কাছে জানতে চাইলে বলেছে, সে চাল বিলি করে দিয়েছি। কাদের মধ্যে বিলি করেছেন তার কোন উত্তর দেননি।

এদিকে, প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ও অপর এক ইউপি সদস্যের চারদিন আগের ফোনালাপের রেকর্ড রয়েছে প্রতিনিধির কাছে।

সেখানে দুইজনের আলাপচারিতায়, বুলবুল ঝড়ের চাউল উত্তোলন করে বিলি না করে রেখে দেওয়া ও করোনা চাল বিতরণে অনিয়ম, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পে ২০-৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করার বিষয়টি আলোচনা করতে শোনা যায়। ইউপি সদস্যের প্রশ্নে, প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক উত্তরে বলেন, টাকা নিয়েছে ঘটনা সত্যি তবে এখন কি করবা। এছাড়া গত ১৪ এপ্রিল বুলবুল ঝড়ের ক্ষতিগ্রস্থদের সেই চালের কিছু চাল যুবলীগের কিছু নেতাকর্মীদের মাঝে বিলি করা হয়েছে বলেও জানা যায়।

এছাড়া দুইদিন আগে তালা সদর চেয়ারম্যান সরদার জাকিরের সঙ্গে ফোনে কথা বলা এক ইউপি সদস্যের ফোন রেকর্ডও পাওয়া যায়। সেই রেকর্ডে, বুলবুল ঝড়ের চাল বিতরণ না করার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন। সে চাল সেদিন বিলি করলাম তো। তবে বুলবুল ঝড়ের তিন টন চাল বিতরণ না করার বিষয়ে তালা সদর চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেন বলেন, মাস্টাররোলের মাধ্যমে চাল বিতরণ করে মাস্টাররোল উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার নিকট জমা দেওয়া হয়েছে।

তবে ইউপি সদস্য ওকেল জানান, চাল বিতরণ না করে এলাকাবাসীর ভূয়া নাম দিয়ে মাস্টাররোল তৈরী করা হয়েছে। ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইয়াছিন সরদার জানান, বুলবুল ঝড়ের তিন মেট্রিক টনের এক কেজি চাউল চেয়ারম্যান কাউকে দেয়নি। পুরোটাই বিক্রি করে আত্নাসাত করেছেন। বর্তমানে করোনার চাউল আমার ওয়ার্ডে কাকে দিচ্ছে মেম্বর হিসেবে আমি জানি না। অন্য মেম্বরদেরও একই অবস্থা।

১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য রেহেনা বেগম বলেন, বুলবুল ঝড়ের তিন মেট্রিকটন চাল ইউনিয়ন পরিষদের একটি রুমে ছিল জানি। অনেকবার চেয়ারম্যান বিতরণের কথা জানালেও বিতরণ করেনি। এখন চাউলটা কোথায় কি অবস্থায় আছে আমি জানি না।

৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাফিজুর রহমান বলেন, করোনা দূর্যোগের চাল চেয়ারম্যান নিজের খুশিমত লোকদের দিচ্ছেন। বাড়িতে খাবার না থাকা প্রকৃত অসহায় মানুষদের বঞ্চিত করছেন। বুলবুল ঝড়ের চালটা বিতরণ করেছে কিনা আমার জানা নেই।

বুলবুল ঝড়ের চাল বিতরণ না করার বিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.ইকবাল হোসেন বলেন, বুলবুল ঝড়ের চাল বিতরণ করা হয়নি। এ বিষয়ে কেউ আমাকে কখনো বলেনি। তবে এ ঘটনার বিষয়ে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।