ঢাকা ০১:০১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেনাপোল দিয়ে পাথর আমদানি-রফতানি বন্ধ করলেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৫২:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১
  • ১৯৪ বার পড়া হয়েছে।

ফাইল ছবি-

যশোরঃ

ফের বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পাথর আমদানি-রফতানি বন্ধ করেছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।

করোনা সংক্রমণ রোধে ভারত থেকে আমদানিকৃত পাথরের ট্রাক সীমিত সংখ্যায় গ্রহণ করায় শনিবার (১০ জুলাই) সকাল থেকে আমদানি-রফতানি বন্ধ করে ভারতের পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ট্রাক শ্রমিক ও ট্রাক মালিক সমিতি।

তবে চেকপোস্ট কার্গো শাখায় অন্যান্য আমদানি-রফতানি পণ্যের গেটপাস (আইজিএম) চলছে। নতুন করে কোনো পণ্য আসা যাওয়া বন্ধ রয়েছে।

ভারতীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, বেনাপোলে পাথর আমদানি কমিয়ে দেয়ায় ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রায় ৮শ’ পাথরবাহী ট্রাক আটকা পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সব ট্রাকের গেটপাস (আইজিএম) এক সঙ্গে করতে হবে।

তবে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ভারত থেকে যে সব পাথরের ট্রাক আসে সেগুলো বন্দরের বাইরে আনলোড হতো। পাথর আনলোড করার সময় ভারতীয় চালক ও হেলপাররা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতো। ভারতে করোনার প্রভাব বেশি হওয়ায় দেশটির ট্রাক ড্রাইভার-হেলপারদের মাধ্যমে করোনার ভ্যারিয়েন্ট এসব এলাকায় ছড়াতে পারে। তাই এলাকাবাসীর অভিযোগের কারণে পাথরের গাড়ি বেনাপোল বন্দরে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছিল।’

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনার এই মুহূর্তে বন্দরের বাইরে কোনো পাথর রাখা যাবে না। বন্দর কর্তৃপক্ষ পাথর রাখার জায়গা তৈরি করে পাথর আমদানি করতে হবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমিত সংখ্যক ট্রাক গ্রহণ করা হবে।

পাথর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রুপালী এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি রাজিব জানান, পদ্মা সেতুর কাজে এ পাথর ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরে পাথর খালাস করতে দিচ্ছে না। আবার কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পাথর আমদানি সীমিত করে আনার প্রতিবাদে ভারতীয় বন্দর ব্যবহারকারীরা আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের দাবি ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে প্রায় ৮শ’ পাথর বোঝাই ট্রাক আটকা পড়ে রয়েছে।

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, ‘প্রতিদিন দেড়শ’ থেকে দুইশ’ ট্রাক পাথর রাখার জায়গা নেই বন্দরে। এসব পাথর বন্দরে নামালে অন্য মালামাল উঠা-নামায় বিঘ্ন ঘটবে। জায়গা সঙ্কটের কারণে ভারত থেকে আমদানি করা পাথর বন্দর এলাকার পাশে আমদানিকারকের নিজস্ব জায়গায় আনলোড করা হচ্ছিল। ভারতীয় ড্রাইভার-হেলপারদের মাধ্যমে করোনা ছড়াতে পারে এজন্য, এখন থেকে বন্দর এলাকা হতে ভারতীয় পাথর বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশি ড্রাইভাররা নিয়ে আমদানিকারকের জায়গায় আনলোড করবে এ শর্তে পাথর আমদানি শুরু হয়েছিল। আবারও ভারতীয় ব্যবসায়ীরা একই দাবিতে আমদানি-রফতানি বন্ধ রেখেছে।’

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বন্দরে জায়গা সঙ্কটের কারণে প্রতিনিয়ত আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিবছর এ বন্দর থেকে সরকারকে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দেয়া হয়। কিন্তু বন্দরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় মারাত্মকভাবে বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। জায়গার অভাবে কখনো বাণিজ্য বন্ধ থাকছে, আবার কখনো খোলা আকাশের নিচে পণ্য রাখায় রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে পণ্যের মান নষ্ট হচ্ছে। এতে অনেক ব্যবসায়ী সুবিধা বঞ্চিত হয়ে এ বন্দর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য বন্দরে। ফলে গত চার বছর ধরে এ বন্দরে আমদানি পণ্য থেকে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা হারে রাজস্ব আসছে না।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার ড. মো. নেয়ামুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি সীমান্তে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রতিদিন আক্রান্তের হার বাড়ছে। এ অবস্থায় বন্দরের বাইরে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে লোকালয়ে ভারতীয় ট্রাকচালকরা পাথর খালি করায় এ ঝুঁকি আরও বাড়ছিল। ফলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বন্দর দিয়ে আপাতত পাথরবাহী ট্রাক সীমিত আকারে আমদানির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সচলের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।

এর আগে একই দাবিতে ভারতীয় বন্দর ব্যবহারকারীরা ২২ জুন আমদানি-রফতানি বন্ধ রাখে। পরে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রতিদিন ৩০টি করে পাথরের ট্রাক গ্রহণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হলে আমদানি-রফতানি চালু হয়।

Tag :

বেনাপোল দিয়ে পাথর আমদানি-রফতানি বন্ধ করলেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা

Update Time : ০৫:৫২:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ জুলাই ২০২১

যশোরঃ

ফের বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পাথর আমদানি-রফতানি বন্ধ করেছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।

করোনা সংক্রমণ রোধে ভারত থেকে আমদানিকৃত পাথরের ট্রাক সীমিত সংখ্যায় গ্রহণ করায় শনিবার (১০ জুলাই) সকাল থেকে আমদানি-রফতানি বন্ধ করে ভারতের পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ট্রাক শ্রমিক ও ট্রাক মালিক সমিতি।

তবে চেকপোস্ট কার্গো শাখায় অন্যান্য আমদানি-রফতানি পণ্যের গেটপাস (আইজিএম) চলছে। নতুন করে কোনো পণ্য আসা যাওয়া বন্ধ রয়েছে।

ভারতীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, বেনাপোলে পাথর আমদানি কমিয়ে দেয়ায় ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রায় ৮শ’ পাথরবাহী ট্রাক আটকা পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সব ট্রাকের গেটপাস (আইজিএম) এক সঙ্গে করতে হবে।

তবে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ভারত থেকে যে সব পাথরের ট্রাক আসে সেগুলো বন্দরের বাইরে আনলোড হতো। পাথর আনলোড করার সময় ভারতীয় চালক ও হেলপাররা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতো। ভারতে করোনার প্রভাব বেশি হওয়ায় দেশটির ট্রাক ড্রাইভার-হেলপারদের মাধ্যমে করোনার ভ্যারিয়েন্ট এসব এলাকায় ছড়াতে পারে। তাই এলাকাবাসীর অভিযোগের কারণে পাথরের গাড়ি বেনাপোল বন্দরে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছিল।’

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনার এই মুহূর্তে বন্দরের বাইরে কোনো পাথর রাখা যাবে না। বন্দর কর্তৃপক্ষ পাথর রাখার জায়গা তৈরি করে পাথর আমদানি করতে হবে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমিত সংখ্যক ট্রাক গ্রহণ করা হবে।

পাথর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রুপালী এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি রাজিব জানান, পদ্মা সেতুর কাজে এ পাথর ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরে পাথর খালাস করতে দিচ্ছে না। আবার কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পাথর আমদানি সীমিত করে আনার প্রতিবাদে ভারতীয় বন্দর ব্যবহারকারীরা আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের দাবি ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে প্রায় ৮শ’ পাথর বোঝাই ট্রাক আটকা পড়ে রয়েছে।

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, ‘প্রতিদিন দেড়শ’ থেকে দুইশ’ ট্রাক পাথর রাখার জায়গা নেই বন্দরে। এসব পাথর বন্দরে নামালে অন্য মালামাল উঠা-নামায় বিঘ্ন ঘটবে। জায়গা সঙ্কটের কারণে ভারত থেকে আমদানি করা পাথর বন্দর এলাকার পাশে আমদানিকারকের নিজস্ব জায়গায় আনলোড করা হচ্ছিল। ভারতীয় ড্রাইভার-হেলপারদের মাধ্যমে করোনা ছড়াতে পারে এজন্য, এখন থেকে বন্দর এলাকা হতে ভারতীয় পাথর বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশি ড্রাইভাররা নিয়ে আমদানিকারকের জায়গায় আনলোড করবে এ শর্তে পাথর আমদানি শুরু হয়েছিল। আবারও ভারতীয় ব্যবসায়ীরা একই দাবিতে আমদানি-রফতানি বন্ধ রেখেছে।’

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বন্দরে জায়গা সঙ্কটের কারণে প্রতিনিয়ত আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিবছর এ বন্দর থেকে সরকারকে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দেয়া হয়। কিন্তু বন্দরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় মারাত্মকভাবে বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে। জায়গার অভাবে কখনো বাণিজ্য বন্ধ থাকছে, আবার কখনো খোলা আকাশের নিচে পণ্য রাখায় রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে পণ্যের মান নষ্ট হচ্ছে। এতে অনেক ব্যবসায়ী সুবিধা বঞ্চিত হয়ে এ বন্দর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য বন্দরে। ফলে গত চার বছর ধরে এ বন্দরে আমদানি পণ্য থেকে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা হারে রাজস্ব আসছে না।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার ড. মো. নেয়ামুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি সীমান্তে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রতিদিন আক্রান্তের হার বাড়ছে। এ অবস্থায় বন্দরের বাইরে গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে লোকালয়ে ভারতীয় ট্রাকচালকরা পাথর খালি করায় এ ঝুঁকি আরও বাড়ছিল। ফলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বন্দর দিয়ে আপাতত পাথরবাহী ট্রাক সীমিত আকারে আমদানির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আমদানি-রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সচলের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।

এর আগে একই দাবিতে ভারতীয় বন্দর ব্যবহারকারীরা ২২ জুন আমদানি-রফতানি বন্ধ রাখে। পরে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রতিদিন ৩০টি করে পাথরের ট্রাক গ্রহণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হলে আমদানি-রফতানি চালু হয়।