বেয়াইকে সভাপতি বানানোর জন্য মাঠে নেমেছেন শিক্ষা কর্মকর্তা!
কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ধর্মদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিতে দূর সম্পর্কের আত্মীয় কথিত বেয়াই ইলিয়াস হোসেনকে সভাপতি বানানোর জন্য উঠে পড়ে মাঠে নেমেছেন দৌলতপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সর্দার মোহাম্মদ আবু সালেক ।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, ধর্মদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.রুস্তম আলীর সঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সর্দার মোহাম্মদ আবু সালেকের দ্বন্দের কারনেই এর সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সর্দার মোহাম্মদ আবু সালেক বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটিতে তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় কথিত বেয়াই ইলিয়াস হোসেনকে তার নিজের ক্ষমতায় সভাপতি বানাতে এ যেনো মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রশাসন নিবর, দেখার বুঝি কেউ নেই।
শুধু তাই নয়, তিন মাস ধরে প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়টির শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা বন্ধ করেও রেখেছেন এই শিক্ষা কর্মকর্তা। এর আগেও এই উপজেলায় শিক্ষা অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সর্দার মোহাম্মদ আবু সালেক। ওই সময় একই ভাবে এই প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে বিভিন্ন ঝামেলা সৃষ্টি করেন তিনি। আবারও শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই পুনরায় বিদ্যালয়টিতে বি-শৃঙ্খলা সৃষ্টি করে চলেছেন তিনি।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমপিও ভুক্তির ১৯বছর পেরিয়ে গেলেও বিদ্যালয়টির জ্বরাজীর্ন অবস্থা। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই এ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে ধর্মদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ২০০২ সালে বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্তি হয়। বর্তমান ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা ২৬৫ জন। যে সময় স্কুল উন্নয়নের ভাবনা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা ছিল প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের ঠিক সেই সময় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সর্দার মোহাম্মদ আবু সালেক স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটিতে তার দূর সম্পর্কের বিয়াইকে সভাপতি বানাতেই ব্যস্ত তিনি।
ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত অভিভাবক সদস্যদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এ বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মানউন্নয়নের কথা বিবেচনায় আমরা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে ডাক্তার ওবাইদুল হককে সমর্থন দিয়ে সাক্ষর করেছি। এতে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সমস্যাটা কোথায়? আমাদের এলাকার প্রতিষ্ঠান আমরা ঠিক করবো কে সভাপতি হবে। কিন্তু এখন দেখছি শিক্ষা অফিসারই এ কমিটির বাঁধা হয়ে দাঁরিয়েছেন। তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় বেয়াইকে সভাপতি বানাতে ব্যস্ত তিনি এটা সত্যি দুঃখজনক। একজন অফিসার এমন কাজ করতে পারেন না। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
ধর্মদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.রুস্তুম আলী বলেন, ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত অভিভাবক সদস্যরা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে ডাক্তার ওবাইদুল হককে সমর্থন দিলেও তা মানতে রাজি নন শিক্ষা অফিসার সর্দার মোহাম্মদ আবু সালেক। আমার চাকরী খেয়ে নেওয়ার হুমকিও দিয়ে চলেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে ইলিয়াস হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,ওই বিদ্যালয়ের প্রধান একজন দূর্নীতিবাজ শিক্ষক। আমি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হলে সে কোনো ধরনের অনিয়ম দূর্নীতি করতে পারবে না বলেই বিভিন্ন মহলে মিথ্যা কথা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে সে। শিক্ষা অফিসার সর্দার মোহাম্মদ আবু সালেক আমার বেয়াই ঠিকই শুনেছেন। সে আমাকে এলাকার ভালো লোক জানেন বলেই আমাকে সভাপতি হিসেবে চাচ্ছেন।
এবিষয়ে ডাক্তার ওবাইদুল হক বলেন,আমার এলাকার প্রতিষ্ঠান ধর্মদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এটি ভালো ভাবে চললেই হবে। সে ক্ষেত্রে আমার সভাপতি হওয়া জরুরী নয়, গ্রামবাসী ও ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত অভিভাবক সদস্যরা আমাকে সমর্থন দিলেও তা মানতে রাজি নন শিক্ষা অফিসার সর্দার মোহাম্মদ আবু সালেক।
দৌলতপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সর্দার মোহাম্মদ আবু সালেক সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ইলিয়াস হোসেন আমার বিয়াই এটা ঠিক। তাকে সভাপতি হিসেবে অনেকেই চাচ্ছেন। তবে ওই স্কুল প্রধান আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছে। আমি উনাকে কমিটি নিয়ে আলোচনা করতে বার বার ডেকেছি। উনি আমার কাছে আসেননি। এলাকাবাসী বলছে আপনার বেয়াই ইলিয়াস হোসেনকে আপনি সভাপতি বানাতে মাঠে নেমেছেন? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এদিকে বিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা বিদ্যালয়টির সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।