ঢাকা ১২:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা

Reporter Name

ফাইল ফটো

ঢাকাঃ

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া না হলে তার জন্য যে পরিস্থিতি উদ্ভব হবে, সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। খালেদা জিয়া জামিনের দাবি যৌক্তিক এবং তিনি জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন বলে মনে করে এই রাজনৈতিক জোট।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) ড. কামাল হোসেনের মতিঝিল চেম্বারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলা হয়।

হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার মামলা শুনানির একদিন আগে এই বৈঠক করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি। বিকেল সোয়া ৪টায় শুরু হয়ে বৈঠকটি শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায়।

বৈঠক শেষে লিখিত একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

তিনি বলেন, ‘আজ প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়া। যে মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে, সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিশেষ করে তার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় আমরা তার আশু মুক্তি দাবি করছি। আমাদের  আজকের এই সভার প্রধান দাবি এটাই।’

মান্না বলেন, ‘আমরা মনে করি এই দাবি (খালেদা জিয়ার জামিন) মানবিক এবং তিনি জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন। যদি কোনো কারণে তার প্রতি সুবিচার না করা হয়, জামিন দেওয়া না হয়, মুক্তি দেওয়া না হয়, তাহলে যে পরিস্থতির উদ্ভব হতে পারে, তার জন্য এই সরকার সর্বোতভাবে দায়ী থাকবে। এ বিষয়ে আমরা সরকারকে সতর্ক করছি।’

খালেদা জিয়ার মামলা জামিনযোগ্য কি না— ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক তা জানতে চান ড. কামাল হোসেনের কাছে। জবাবে ড. কামাল বলেন, ‘এই মামলায় জামিন পাওয়ার সুযোগ অবশ্যই আছে।’ বিষয়টি একটু বিস্তারিতভাবে বলার অনুরোধ করলে তিনি বলেন, ‘এর চেয়ে পরিষ্কার করে আর কীভাবে বলব?’

খালেদা জিয়াকে জামিন না দিলে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কি না— জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘এটা আমাদের আলোচনার বিষয় আজকে ছিল না। আলোচনার বিষয় যা ছিল, তা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।’

খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। তার কোনো আপডেট আছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আমরা ২২ তারিখে (২২ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করি। উনি অত্যন্ত সরল মনে আমাদের বললেন, উনার (খালেদা জিয়া) আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের সবাই দেখা করছেন, আপনারা দেখা করতে পারবেন না কেন? আপনরা অবশ্যই দেখা করবেন।’

‘অর্থাৎ নীতিগতভাবে তিনি আমাদের দেখা করার অনুমতি দিয়ে দিলেন। শুধু আইজি প্রিজনের কাছে দায়িত্বটা দিলেন, যেন অফিশিয়াল ফর্মালিটিজটা মেইনটেইন করতে পারেন। এরপর আমি বহুবার ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি পাঠিয়েছি আইজি প্রিজনের কাছে। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাইনি। বুঝতে পারছি, তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমাদের দেখা করার সুযোগ দিচ্ছেন না,’— বলেন আ স ম আবদুর রব।

খালেদা জিয়ার জামিন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ‘কমনসেন্স থেকে একটা কথা বলতে চাই। এ ধরনের মামলায় সহস্র সহস্র জামিন দেওয়া হয়েছে আইনের ইতিহাসে। সাধারণ জ্ঞানে আমরা যতটুকু বুঝতে পারি, তাতে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় লাগে না এ ধরনের মামলায় জামিন দেওয়ার জন্য।’

এবার জামিন না হলে বিএনপির আন্দোলনে যাবে কি— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পাঁচ তারিখের পরিস্থিতি অবলোকন করার পর আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তটা নেব।’

খালেদা জিয়ার জামিন প্রসঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘জামিনের ব্যাপারে একটা তথ্য দিতে চাই। হাইকোর্টে একজন খুনের আসামি, যেখানে তার নিম্ন আদালতে ফাঁসি হয়েছে, হাইকোর্টে ফাঁসি হয়েছে, কনফার্মেশন যেটা হয়েছে, তাতে তার ফাঁসি কার্যকর করতে দুই থেকে তিন মাস লাগবে। সেই মামলায় ফুল বেঞ্চ আসামিকে জামিন দিয়েছিল। যতদিন পর্যন্ত ফাঁসি না হয়, ততদিন পর্যন্ত সে পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারবে। এ জাতীয় অসংখ্য উদাহরণ এ দেশের আইনে আছে। সেই তুলনায় খালেদা জিয়াকে জামিন না দেওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। যেটা আমরা বলেছি, মানবিক কারণে, নৈতিক কারণে এবং সংবিধান মতে উনাকে জামিন দেওয়া, মুক্তি দেওয়া উচিত’— বলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ ও অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৯:০২:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯
৩০৪ Time View

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে যা বললেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা

আপডেট সময় : ০৯:০২:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

ঢাকাঃ

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া না হলে তার জন্য যে পরিস্থিতি উদ্ভব হবে, সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করে দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। খালেদা জিয়া জামিনের দাবি যৌক্তিক এবং তিনি জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন বলে মনে করে এই রাজনৈতিক জোট।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) ড. কামাল হোসেনের মতিঝিল চেম্বারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলা হয়।

হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার মামলা শুনানির একদিন আগে এই বৈঠক করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি। বিকেল সোয়া ৪টায় শুরু হয়ে বৈঠকটি শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায়।

বৈঠক শেষে লিখিত একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য মিডিয়ার সামনে তুলে ধরেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

তিনি বলেন, ‘আজ প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়া। যে মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে, সেটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিশেষ করে তার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় আমরা তার আশু মুক্তি দাবি করছি। আমাদের  আজকের এই সভার প্রধান দাবি এটাই।’

মান্না বলেন, ‘আমরা মনে করি এই দাবি (খালেদা জিয়ার জামিন) মানবিক এবং তিনি জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন। যদি কোনো কারণে তার প্রতি সুবিচার না করা হয়, জামিন দেওয়া না হয়, মুক্তি দেওয়া না হয়, তাহলে যে পরিস্থতির উদ্ভব হতে পারে, তার জন্য এই সরকার সর্বোতভাবে দায়ী থাকবে। এ বিষয়ে আমরা সরকারকে সতর্ক করছি।’

খালেদা জিয়ার মামলা জামিনযোগ্য কি না— ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক তা জানতে চান ড. কামাল হোসেনের কাছে। জবাবে ড. কামাল বলেন, ‘এই মামলায় জামিন পাওয়ার সুযোগ অবশ্যই আছে।’ বিষয়টি একটু বিস্তারিতভাবে বলার অনুরোধ করলে তিনি বলেন, ‘এর চেয়ে পরিষ্কার করে আর কীভাবে বলব?’

খালেদা জিয়াকে জামিন না দিলে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কি না— জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘এটা আমাদের আলোচনার বিষয় আজকে ছিল না। আলোচনার বিষয় যা ছিল, তা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।’

খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। তার কোনো আপডেট আছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘আমরা ২২ তারিখে (২২ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করি। উনি অত্যন্ত সরল মনে আমাদের বললেন, উনার (খালেদা জিয়া) আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের সবাই দেখা করছেন, আপনারা দেখা করতে পারবেন না কেন? আপনরা অবশ্যই দেখা করবেন।’

‘অর্থাৎ নীতিগতভাবে তিনি আমাদের দেখা করার অনুমতি দিয়ে দিলেন। শুধু আইজি প্রিজনের কাছে দায়িত্বটা দিলেন, যেন অফিশিয়াল ফর্মালিটিজটা মেইনটেইন করতে পারেন। এরপর আমি বহুবার ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি পাঠিয়েছি আইজি প্রিজনের কাছে। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাইনি। বুঝতে পারছি, তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমাদের দেখা করার সুযোগ দিচ্ছেন না,’— বলেন আ স ম আবদুর রব।

খালেদা জিয়ার জামিন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ‘কমনসেন্স থেকে একটা কথা বলতে চাই। এ ধরনের মামলায় সহস্র সহস্র জামিন দেওয়া হয়েছে আইনের ইতিহাসে। সাধারণ জ্ঞানে আমরা যতটুকু বুঝতে পারি, তাতে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় লাগে না এ ধরনের মামলায় জামিন দেওয়ার জন্য।’

এবার জামিন না হলে বিএনপির আন্দোলনে যাবে কি— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পাঁচ তারিখের পরিস্থিতি অবলোকন করার পর আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তটা নেব।’

খালেদা জিয়ার জামিন প্রসঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘জামিনের ব্যাপারে একটা তথ্য দিতে চাই। হাইকোর্টে একজন খুনের আসামি, যেখানে তার নিম্ন আদালতে ফাঁসি হয়েছে, হাইকোর্টে ফাঁসি হয়েছে, কনফার্মেশন যেটা হয়েছে, তাতে তার ফাঁসি কার্যকর করতে দুই থেকে তিন মাস লাগবে। সেই মামলায় ফুল বেঞ্চ আসামিকে জামিন দিয়েছিল। যতদিন পর্যন্ত ফাঁসি না হয়, ততদিন পর্যন্ত সে পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারবে। এ জাতীয় অসংখ্য উদাহরণ এ দেশের আইনে আছে। সেই তুলনায় খালেদা জিয়াকে জামিন না দেওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। যেটা আমরা বলেছি, মানবিক কারণে, নৈতিক কারণে এবং সংবিধান মতে উনাকে জামিন দেওয়া, মুক্তি দেওয়া উচিত’— বলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ ও অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।