ঢাকা ১২:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বোরো আবাদে পাতাব্লাস্টের আক্রমণে দিশেহারা কৃষক

Reporter Name

জাহিদ হাসান, যশোরঃ

করোনা আতংকে মাঠভরা ফসল দেখে আশায় বুক বেঁধেছিলো যশোরের চাষীরা। কিন্তু ধানের শীষ বের হওয়ার আগ মুহর্তেই যেন ওলটপালট। দেখা দিয়েছে বোরোইরি ধানে পাতাব্লাস্টের আক্রমণ। বিবর্ণ হয়ে গেছে সবুজ ধানের মাঠ।

যশোর জেলার আট উপজেলার শত শত হেক্টর জমির ধানের শীর্ষ মরে যাচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানীর ঔষুধ ছিটিয়েও কোন কাজ না হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পরেছেন কৃষকরা। এখনই এ ছত্রাক দমন করতে না পারলে ধান সম্পূর্ণ চিটা হলে চলতি মৌসুমে ফলন বিপর্যয়ের আশংকা করেছে এ অঞ্চলের চাষীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, চলতি বোরো মৌসুমে আবহাওয়া ভালো হওয়ায় ধানের আবাদ ভালো হয়েছে। যশোর জেলার আট উপজেলায় এক লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদ হয়েছে। তার মধ্যে সদর উপজেলায় ২৬ হাজার হেক্টর, শার্শা উপজেলায় ২১ হাজার হেক্টর, ঝিকরগাছা উপজেলায় ১৯ হাজার হেক্টর, চৌগাছা উপজেলায় ১৮ হাজার হেক্টর, অভয়নগর উপজেলায় ১৪ হাজার হেক্টর, বাঘারপাড়া উপজেলায় ১৭ হাজার হেক্টর, মণিরামপুর উপজেলায় ২৮ হাজার হেক্টর, কেশবপুর উপজেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।

সরেজমিনে যশোরের ঝিকরগাছার বল্লা, বোধখানা মাঠে কমবেশি প্রায় ধানক্ষেতে এ ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে ছত্রাকনাশক ওষুধ ছিটানোর ফলে ক্ষেতের অবস্থা তেমন ভালো হচ্ছে না। সবচেয়ে ব্রি-৮১, ব্রি ২৮, ভারতীয় হাইব্রিড জাতের শুভলতা ধানের এ ছত্রাকের আক্রমণ বেশি দেখা দিয়েছে। ফলে বোরো ধান নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা।

মণিরামপুর উপজেলার সরসকাঠি গ্রামের কৃষক আতিয়ার জানান, এবার আড়াই বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছেন। এর মধ্যে একবিঘা জমিতে ধানে ব্লাস্ট রোগে আক্রমন করেছে। অনেক ঔষুধ ছিটিয়েও তেমন লাভ হচ্ছেনা। তার পরেও জমিতে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করছি নিয়মিতো।

ঝিকরগাছা উপজেলার বল্লা গ্রামের চাষি আব্দুস সালাম জানান, চলতি মৌসুমে ২৪ শতক জমির বোরো ধানক্ষেত এ ছত্রাক আক্রান্ত হয়েছে। কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে ছত্রাকনাশক ওষুধ ছিটানোর ফলে ক্ষেতের অবস্থা কিছুটা ভালো মনে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সাধারণত এবার ব্রি-৮১, ব্রি-২৮ ও ভারতীয় হাইব্রিড জাতের শুভলতা ধানে এ ছত্রাকের আক্রমণ বেশি দেখা দিয়েছে। সময় মতো চিকিৎসা না করালে জমির প্রায় ৪০-৪৫% ধানের শীর্ষ মারা যায়।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, উচ্চতাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বেশি হলে এটা দেখা দিতে পারে। তবে ছত্রাকনাশক প্রয়োগে এটা রোধ করা সম্ভব। তিনি আরো জানান, ঝিকরগাছাতে আক্রান্ত এখনও সহনীয় পর্যায়ে আছে। বিষয়টি নিয়ে কৃষি কর্মকর্তারা সচেতনতামূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান জানান, যশোরে চলতি মৌসুমে এবার বোরো আবাদ ভালো হয়েছে। ধানের আবাদের শুরতে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় তেমন রোগ বালায় দেখা না দিলেও ধানের শীষ বের হওয়ার সাথে সাথে শীষে পাতাব্লাস্টের আক্রমণ দেখা দিয়েছিলো। তবে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে। আবহাওয়াজনিত কারনে কিছু কিছু জমিতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ক্ষতির কোন সম্ভবনা নেই বলে দাবি এ কৃষি কর্মকর্তার।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৭:৫৭:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ এপ্রিল ২০২০
৩৪৪ Time View

বোরো আবাদে পাতাব্লাস্টের আক্রমণে দিশেহারা কৃষক

আপডেট সময় : ০৭:৫৭:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ এপ্রিল ২০২০

জাহিদ হাসান, যশোরঃ

করোনা আতংকে মাঠভরা ফসল দেখে আশায় বুক বেঁধেছিলো যশোরের চাষীরা। কিন্তু ধানের শীষ বের হওয়ার আগ মুহর্তেই যেন ওলটপালট। দেখা দিয়েছে বোরোইরি ধানে পাতাব্লাস্টের আক্রমণ। বিবর্ণ হয়ে গেছে সবুজ ধানের মাঠ।

যশোর জেলার আট উপজেলার শত শত হেক্টর জমির ধানের শীর্ষ মরে যাচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানীর ঔষুধ ছিটিয়েও কোন কাজ না হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পরেছেন কৃষকরা। এখনই এ ছত্রাক দমন করতে না পারলে ধান সম্পূর্ণ চিটা হলে চলতি মৌসুমে ফলন বিপর্যয়ের আশংকা করেছে এ অঞ্চলের চাষীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, চলতি বোরো মৌসুমে আবহাওয়া ভালো হওয়ায় ধানের আবাদ ভালো হয়েছে। যশোর জেলার আট উপজেলায় এক লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদ হয়েছে। তার মধ্যে সদর উপজেলায় ২৬ হাজার হেক্টর, শার্শা উপজেলায় ২১ হাজার হেক্টর, ঝিকরগাছা উপজেলায় ১৯ হাজার হেক্টর, চৌগাছা উপজেলায় ১৮ হাজার হেক্টর, অভয়নগর উপজেলায় ১৪ হাজার হেক্টর, বাঘারপাড়া উপজেলায় ১৭ হাজার হেক্টর, মণিরামপুর উপজেলায় ২৮ হাজার হেক্টর, কেশবপুর উপজেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।

সরেজমিনে যশোরের ঝিকরগাছার বল্লা, বোধখানা মাঠে কমবেশি প্রায় ধানক্ষেতে এ ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে ছত্রাকনাশক ওষুধ ছিটানোর ফলে ক্ষেতের অবস্থা তেমন ভালো হচ্ছে না। সবচেয়ে ব্রি-৮১, ব্রি ২৮, ভারতীয় হাইব্রিড জাতের শুভলতা ধানের এ ছত্রাকের আক্রমণ বেশি দেখা দিয়েছে। ফলে বোরো ধান নিয়ে চিন্তিত কৃষকরা।

মণিরামপুর উপজেলার সরসকাঠি গ্রামের কৃষক আতিয়ার জানান, এবার আড়াই বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছেন। এর মধ্যে একবিঘা জমিতে ধানে ব্লাস্ট রোগে আক্রমন করেছে। অনেক ঔষুধ ছিটিয়েও তেমন লাভ হচ্ছেনা। তার পরেও জমিতে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করছি নিয়মিতো।

ঝিকরগাছা উপজেলার বল্লা গ্রামের চাষি আব্দুস সালাম জানান, চলতি মৌসুমে ২৪ শতক জমির বোরো ধানক্ষেত এ ছত্রাক আক্রান্ত হয়েছে। কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে ছত্রাকনাশক ওষুধ ছিটানোর ফলে ক্ষেতের অবস্থা কিছুটা ভালো মনে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সাধারণত এবার ব্রি-৮১, ব্রি-২৮ ও ভারতীয় হাইব্রিড জাতের শুভলতা ধানে এ ছত্রাকের আক্রমণ বেশি দেখা দিয়েছে। সময় মতো চিকিৎসা না করালে জমির প্রায় ৪০-৪৫% ধানের শীর্ষ মারা যায়।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, উচ্চতাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বেশি হলে এটা দেখা দিতে পারে। তবে ছত্রাকনাশক প্রয়োগে এটা রোধ করা সম্ভব। তিনি আরো জানান, ঝিকরগাছাতে আক্রান্ত এখনও সহনীয় পর্যায়ে আছে। বিষয়টি নিয়ে কৃষি কর্মকর্তারা সচেতনতামূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. আখতারুজ্জামান জানান, যশোরে চলতি মৌসুমে এবার বোরো আবাদ ভালো হয়েছে। ধানের আবাদের শুরতে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় তেমন রোগ বালায় দেখা না দিলেও ধানের শীষ বের হওয়ার সাথে সাথে শীষে পাতাব্লাস্টের আক্রমণ দেখা দিয়েছিলো। তবে কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে। আবহাওয়াজনিত কারনে কিছু কিছু জমিতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ক্ষতির কোন সম্ভবনা নেই বলে দাবি এ কৃষি কর্মকর্তার।