এই খবরটি গণমাধ্যমে কেন গেল- সংসদীয় কমিটি সেই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও সাবধান হতে বলেছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক অনুসন্ধানের তথ্যের ভিত্তিতে দৈনিক প্রথম আলোতে সম্প্রতি প্রকাশিত এক সংবাদ প্রতিবেদনে ভল্টের সোনা নিয়ে অভিযোগটি সামনে আসে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের ৯৬৩ কেজি সোনা পরীক্ষা করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনিয়ম ধরা পড়েছে। ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের সোনার চাকতি ও আংটি জমা দেওয়ার সময় যা ৮০ শতাংশ বিশুদ্ধ সোনা হিসেবে গ্রহণ করে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, দুই বছর পর তা পরীক্ষা করে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ সোনা পাওয়া গেছে। আর ২২ ক্যারেটের সোনা হয়ে গেছে ১৮ ক্যারেট।
জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শহিদুল ইসলাম তখন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, এক বছরের বেশি সময় অনুসন্ধান করে তারা ওই অনিয়ম পেয়েছেন।
তবে পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভল্টে রাখা সোনায় কোনো ধরনের হেরফের হয়নি; স্বর্ণকারের ভুলে ভাষার গণ্ডগোলে ৪০ হয়ে গিয়েছিল ‘এইটি’।
পরে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষেই অবস্থা ন নিয়ে জানায়, সোনায় কোনো হেরফের হয়নি।
বহুল আলোচিত বিষয়টি নিয়ে বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ভল্টে রাখা সোনা ঠিক আছে। ভল্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই উন্নত। ৪২টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। তবে কষ্টি পাথর আর আধুনিক যন্ত্রের মাপে কিছু তারতম্য হয়েছে।
“এ ধরনের তথ্য গণমাধ্যমে এল কেন- এমন প্রশ্ন রেখে কমিটি বলেছে, এতে দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবধান হওয়া উচিত।”
রাজ্জাকের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, মো. আব্দুল ওয়াদুদ, ফরহাদ হোসেন ও শওকত চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধিও অংশ নেন।
বৈঠকে থাকা একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আলোচ্য সূচিতে না থাকলেও আলোচনায় আসে সোনায় গরমিলের বিষয়টি।
“বাংলাদেশ ব্যাংক দাবি করে, ভল্টের সোনা ঠিক আছে, গণমাধ্যমে অতিরঞ্জিত তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলেও তারা এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি।”
রাজস্ব না বাড়ায় ক্ষোভ
বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, জিডিপি অনুপাতে দেশে মোট রাজস্ব আদায় দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ সবার নিচে। এ বিষয়ে গত ১০ বছরেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
গত ১০ বছরে দেশে জিডিপি অনুপাতে রাজস্ব আহরণ গড়ে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। তা ভারতে ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ, নেপালে ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১৩ দশমিক ১ শতাংশ। উন্নত অর্থনীতির দেশে জিডিপি অনুপাতে রাজস্ব আহরণ গড়ে ৩৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, “রাজস্ব আদায়ে অগ্রগতি না থাকায় কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এনবিআর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থমন্ত্রীও এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।”
অন্যান্য দেশের রাজস্ব আয় সংগ্রহ পদ্ধতি থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রয়োজনে পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়ে ভ্যাট–ট্যাক্সের আওতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।