ভারতকে হারিয়ে সিরিজ জয় বাংলাদেশের
সবুজদেশ ডেস্কঃ
ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ ধরতে আঙুল ফেটে যাওয়ায় ওপেনিংয়ে নামতে পারেননি রোহিত শর্মা। তবে দলের বিপদে সাত উইকেট পড়লে বাধ্য হয়েই আঙুলে ব্যান্ডেজ নিয়েই মাঠে নামেন তিনি। শেষ দিকে ব্যাট হাতে ২৮ বলে ৫৭ রানের ইনিংস খেলে প্রায় বাংলাদেশের মুঠো থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন! তবে শেষ পর্যন্তগ তার বিধ্বংসী ইনিংসও পারেনি ভারতকে ম্যাচ জেতাতে।
সিরিজের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়েছিল বাংলাদেশ। ৬৯ রানেই ড্রেসিংরুমে ফিরে আসেন ছয় ব্যাটার। এরপর পাল্টা প্রতিরোধ গড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও প্রথম ম্যাচের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।
রিয়াদের ফিফটি ও মিরাজের সেঞ্চুরিতে ২৭১ রানের সংগ্রহ পেয়েছিল বাংলাদেশ। বোলিং শুরুতেই কোহলির উইকেট তুলে নিয়েছিলেন এবাদত। মাঝে শ্রেয়াশ আয়ার -অক্ষর ও শেষদিকে রোহিত শর্মা হুমকি হয়ে দাড়ালেও শেষ রক্ষা হয়নি ভারতের। শেষ পযর্ন্ত ৫ রানে জিতে এক ম্যাচে হাত রেখেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ।
এর আগে বুধবার (৭ নভেম্বর) টস জিতে ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে দুই চার হাঁকালেও ওই ওভারেই আউট হয়ে ফেরেন এনামুল হক বিজয়। শুরু থেকেই অস্বস্তিতে থাকা অধিনায়কও লিটন এদিন উইকেটে থিতু হতে পারেননি। ৩৯ রানেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
এরপর সাকিবকে নিয়ে প্রাথমিক চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন শান্ত। এরপর ইনিংসের ১২তম ওভারে উমরান মালিককে বোলিংয়ে আনেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। প্রথমবার বলে হাতে নিয়েই স্ট্রাইকে থাকা সাকিবকে একের পর এক বাউন্সারে রীতিমতো নাচিয়ে ছাড়েন উমরান।
এক ওভারেই সাকিবের হেলমেটে বল লেগেছে অন্তত দুইবার। একবার তো সাকিবের পিঠেও আঘাত করে উমরানের বাউন্সার। এছাড়া বাকি তিন বলেও মোটেও স্বস্তিতে ছিলেন না সাকিব।
আগুন ঝড়ানো প্রথম ওভারের পর ১৩তম ওভারে নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসেই প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পান উমরান। তার বুলেট গতির ডেলিভারি উপড়ে ফেলে নাজমুল হোসাইন শান্তর উইকেট।
শান্তর বিদায়ের পর সাকিবও বেশিক্ষণ টিকেননি! দলীয় ৬৬ রানে ইনিংসের ১৭তম ওভারের শেষ বলে বড় শট খেলতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ আউট হয়ে ফেরেন তিনি। যাওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র আট রান।
সাকিব ফেরার পর মাত্র তিন রানের ব্যবধানে জোড়া উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ৬৯ রানে টানা দুই বলেই আউট হয়ে ফেরেন মুশফিকুর রহিম ও আফিফ হোসাইন।
এরপর আগের ম্যাচের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দু’জনের মিলে অতি সতর্কতার সাথে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
আগের ম্যাচে একা হাতের ম্যাচ জেতানোর আত্মবিশ্বাস এ ম্যাচেও পাওয়া গেলো মিরাজের ব্যাটে। দারুণ সব বাউন্ডারি আর সিঙ্গেলে রিয়াদকে নিয়ে বাংলাদেশকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের হাত থেকে বাচালেন তিনি।
অন্যপ্রান্তে রিয়াদও দিয়েছেন ধৈর্যের পরীক্ষা। ধীরে-সুস্থে ব্যাটিং করে মিরাজকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন বাংলাদেশ দলের এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।
৫৫ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডে হাফসেঞ্চুরি করেন মিরাজ। অন্যদিকে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করেন রিয়াদ। পরবর্তীতেও রিয়াদও তুলে নিয়েছেন দুর্দান্ত হাফ সেঞ্চুরি।
দু’জনের ব্যাটিংয়ে প্রথমে দাপট দেখানো ভারতীয় বোলাররা একপর্যায়ে রীতিমতো খেই হারিয়ে ফেলে। রিয়াদ ও মিরাজ ভারতীয় বোলারদের বিপক্ষে একের পর এক বাউন্ডারিতে ভারতের বিপক্ষে যে কোনো জুটিতে সর্বোচ্চ রানের জুটিও গড়েন।
দলীয় ২১৭ রানে ব্যক্তিগত ৭৭ রানে রিয়াদ ফিরলে ভাঙে ১৪৮ রানের রেকর্ড জুটি। রিয়াদের ইনিংসে কোনো ছক্কা না থাকলেও ছিল সাত চার। তবে সঙ্গী হারালেও ভড়কে যাননি মিরাজ।
ব্যাট হাতে শেষদিকে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন মিরাজ। তার ব্যাটিং তোপে শেষদিকে ভারতীয় বোলারদের অসহায় চেহারা বারবার ভেসে উঠছিল টিভি পর্দায়।
ইনিংসের শেষ ওভারে মিরাজের সেঞ্চুরির জন্য প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। প্রথম বলে নাসুম সিঙ্গেল দিয়ে স্ট্রাইক দিলেই দ্বিতীয় বলে বড় ছক্কা হাঁকান মিরাজ। এরপরের বল ডট গেলেও তার পরের বল আবারও ছক্কা হাঁকিয়ে সেঞ্চুরির আরও কাছে পৌছে যান খুলনার এই ক্রিকেটার।
পঞ্চম বলে দুই ও শেষ বলে এক নিয়ে প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির উল্লাসে মেতে ওঠেন । তার এই উড়ন্ত সেঞ্চুরিতে সাত উইকেট হারিয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ২৭১ রানের বড় সংগ্রহ পেয়েছে স্বাগতিকরা।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই জোড়া উইকেট হারায় ভারত। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে এবাদত কোহলিকে তুলে নেওয়ার পর তৃতীয় ওভারে শিখর ধাওয়ানের উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজুর রহমান।
এরপর ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিয়ে প্রাথমিক চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন শ্রেয়াস আয়ার। কিন্তু বেশিক্ষণ উইকেটে থিতু হতে পারেননি সুন্দর। ইনিংসের ১০ম ওভারে বল হাতে নিয়েই সুন্দরকে ফিরিয়ে দেন সাকিব আল হাসান।
রাহুলকে নিয়ে আয়ার জুটি গড়ার চেষ্টা করলেও বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রান করতেই হিমশিম খাচ্ছিলেন তারা। এরপর ইনিংসের ১৯তম ওভারে রাহুলকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে আউট করেন মিরাজ।
রাহুল আউট হলে ভাঙে তাদের ২৬ রানের জুটি, এতে আরও চাপে পড়ে ভারত। এরপর অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে আবারও নতুন জুটি গড়াড় চেষ্টা করেন আয়ার। দু’জনের মিলে সাবলিল ব্যাটিং করে সচল রাখেন ভারতের স্কোরবোর্ডের চাকা।
৬৯ বলে হাফসেঞ্চুরি করা আয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এই জুটিতে। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন অক্ষর। আয়ারের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশিদের বোলাররা একপর্যায়ে রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়েন।
একের পর এক বাউন্ডারিতে বাংলাদেশের হাতের মুঠো থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিচ্ছিলেন আয়ার। এ সময়ে কার্যকরী ইনিংস খেলে আয়ারকে যোগ্য সমর্থন দিচ্ছিলেন অক্ষর।
তবে ইনিংসের ৩৫তম ওভারে দলীয় ১৭২ রানে আয়ারকে আফিফের ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়ে দেন মিরাজ। আয়ারের আউটে অক্ষরের সাথে ভাঙে ১০৭ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি।
তবে সঙ্গী হারালেও ব্যাট হাতে আক্রমণ থামাননি অক্ষর। ৫০ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরি করা অক্ষর রানের চাকা সচল রেখেছিলেন। কিন্তু তিনিও এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি।
দলীয় ৩৯তম ওভারে অক্ষরকে সাকিবের ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়ে দেন এবাদত হোসাইন। ১৭ রানের ব্যবধানে দুই উইকেট হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে ভারত।
এরপর দীপক চাহারকে নিয়ে নতুন করে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন শার্দুল। তবে দলীয় ২০৭ রানে শার্দুলকে ফিরিয়ে জুটি বড় হতে দেননি সাকিব আল হাসান।
ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ ধরতে গিয়ে আঙুল ফেটেছিল রোহিতের। এজন্য আজ ওপেনিংয়ে নামেননি। তবে শেষ দিকে সাত উইকেট পরার পর একরকম বাধ্য হয়েই ব্যান্ডেজ নিয়েই ব্যাটিং করতে নামেন তিনি।
দলীয় ২১৩ রানে দীপক চাহারকেও ফিরিয়ে দেন এবাদত। ম্যাচে যেটা তার তৃতীয় শিকার। তবে শেষদিকে ব্যাট হাতে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন রোহিত শর্মা। প্রথমে এবাদতকে দুই ছক্কা, এক চার ও পরে মাহমুল্লাহ রিয়াদকে এক ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিলেন তিনি।
শেষ ওভারে ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২০ রান। প্রথম পাঁচ দুই চার ও এক ছক্কা মেরে ভারতকে ম্যাচে রেখেছিলেন রোহিত। তবে মোস্তাফিজের করা শেষ বলে আর ছক্কা হাকাতে পারেননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ৫ রানের ব্যবধানে জিতে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে ফরম্যাটে টানা দুইবার সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ। এর আগে ২০১৫ সালেও এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা।