ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চান বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) প্রয়োগ চাই। এই রাজ্যে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতেই এই এনআরসির প্রয়োজন। তবে এনআরসিতে নাম না ওঠা কোনো অনুপ্রবেশকারীকে এই রাজ্য থেকে ফেরত পাঠানো হবে না।
গতকাল রোববার বিজেপির রাজ্য কার্যালয়ে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার নেতৃবৃন্দের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেছেন দিলীপ ঘোষ।
এর আগে গত ৩০ জুলাই ভারতের আসামে এনআরসি তালিকা প্রকাশিত হয়ে। আসামে বসবাসকারী ৩ কোটি ২৯ লাখ মানুষ আবেদন করেছিলেন এনআরসি তালিকায় নিজেদের নাম তুলতে। ওই তালিকায় ঠাঁই হয় ২ কোটি ৮৯ লাখ মানুষের। অর্থাৎ, আসামে বসবাসকারী ৪০ থেকে ৪১ লাখ মানুষ ‘ভারতীয়’ হিসেবে ওই তালিকায় নাম তুলতে পারেননি।
আসামে এনআরসি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি হয়। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, যাঁদের নাম বাদ পড়েছে, তাঁদের কাউকেই বের করে দেওয়া হবে না। এখন দিলীপ ঘোষ পশ্চিমবঙ্গে এই তালিকা করার তাগিদ দিলেন।
দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘আমরা বরাবর বলে আসছি, এই রাজ্যে এক কোটি অনুপ্রবেশকারী আছেন। বাংলাদেশ থেকে তাঁরা এই রাজ্যে ঢুকে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বাস করছেন। এই রাজ্যে এনআরসি তৈরি হলে চিহ্নিত করা যাবে কত অনুপ্রবেশকারী এখানে রয়েছে।’
দিলীপ ঘোষ বলেন, এই রাজ্যে বহু অনুপ্রবেশকারী এসেছেন বাংলাদেশ থেকে। তবে তিনি এ কথাও বলেছেন, ‘২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিষ্টান, পার্সি ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কারণে অন্য দেশ থেকে এখানে এসেছেন, তাঁদের তাড়ানো যাবে না। এখানে তিব্বতিরা এসে থাকছেন, পার্সিরা এসেছেন। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের জায়গা দিতে হবে।’ তিনি পাশাপাশি এ কথাও বলেছেন, এনআরসিতে নাম না থাকলেও তাঁদের তাড়ানো হবে না এই রাজ্য থেকে। শুধু তাঁদের ভোটাধিকারসহ অন্যান্য সরকারি সুবিধা মিলবে না।
দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরাই সবচেয়ে পিছিয়ে আছেন। সারা ভারতের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমরা শিক্ষাদীক্ষা, চাকরির ক্ষেত্রে সামাজিকভাবে পিছিয়ে আছেন। রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের স্বার্থে তাঁদের ব্যবহার করছেন।’ তিনি বলেন, ‘মুসলিমরা আমাদের ভোট দিক বা না দিক, তাঁদের জন্য কাজ করে যাবে বিজেপি।’
দিলীপ ঘোষ এ কথাও বলেন, ‘এই রাজ্যের ১০০টি বিধানসভা আসনে মুসলিম ভোটের প্রভাব রয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানদের প্রভাব রয়েছে। ফলে এসব সংখ্যালঘুদের এড়িয়ে ভোটে জেতা সম্ভব নয়।’ বলেন, বিজেপি সরকার ইতিমধ্যে সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য নানা প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘মুসলিমরা বিজেপিতে আসছেন। এটা ভালো খবর।’ এদিনের এই সভায় পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সভাপতি আলী হোসেন, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন খানসহ বেশ কয়েকজন সংখ্যালঘু নেতা উপস্থিত ছিলেন।