ঢাকা ১০:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভালোবাসার বিরল দৃষ্টান্ত: ক্যানসার দমাতে পারেনি মাহমুদুলকে

Reporter Name

সবুজদেশ ডেস্ক:

মারণ রোগ ক্যানসার দমাতে পারেনি মাহমুদুল হাসান আর ফাহমিদা কামালের ভালোবাসাকে। ক্যানসারের শেষ দশায় থাকা ফাহমিদা কামালকে হাসপাতালের শয্যায় বিয়ে করলেন মাহমুদুল হাসান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন এই যুগলকে।

গত ৯ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালের ৪০৫ নম্বর কেবিনে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। ১ টাকার কাবিনে কনে ফাহমিদা কামালকে বিয়ে করেন মাহমুদুল হাসান। এদিন লাল বেনারসি আর সোনার হার পরে বধূ সাজেন ফাহমিদা। মাহমুদুল পরেন পাঞ্জাবি-পায়জামা। ছিল কেক কাটা ও মালাবদলের আয়োজন।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে ক্যানসার বাসা বাঁধে ফাহমিদার শরীরে। তারও কয়েক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে তার পরিচয় ও প্রেম।

ফাহমিদার রেকটাম ক্যানসার ধরা পড়ার আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান। পরের বছরই দুই পরিবারের মধ্যে বিয়ের আনুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ক্যানসার এসে সব লন্ডভন্ড করে দেয়।

ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ফাহমিদাকে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। দীর্ঘ চিকিৎসার পরও অবস্থার উন্নতি হয়নি ফাহমিদার। আশা ছেড়ে দেন সেখানের চিকিৎসকরাও। এরপর কিছুদিন আবার এভারকেয়ারে চিকিৎসা দেয়া হয়। সর্বশেষ গত ৬ মার্চ তাকে চট্টগ্রামের ‘মেডিক্যাল সেন্টার’ নামে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জীবন-মৃত্যুর এত টানাপড়েনেও ফাহমিদার প্রতি মাহমুদুল হাসানের ভালোবাসায় ভাটা পড়েনি। প্রতিদিন কেবিনের সামনে এসে বসে থাকতেন তিনি। সামাজিক সম্পর্ক না থাকায় তার শয্যাপাশে গিয়ে সেবা করার সুযোগ ছিল না তার। এমন অবস্থায় ফাহমিদাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। এতে কিছুতেই রাজি ছিল না ফাহমিদার পরিবার।

কিন্তু হার মানানো যায়নি মাহমুদুল হাসানকে। তার অনড় সিদ্ধান্তে অবশেষে দুই পরিবার বিয়ের বিষয়ে একমত হয়েছে।

ফাহমিদা কামালের চাচা মো. ইউসুফ সালাম বলেন, ‘ফাহমিদার প্রতি মাহমুদুলের ভালোবাসা আমাদের অবাক করেছে। দিন নেই রাত নেই, হাসপাতালে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেবিনের সামনে বসে থাকত মাহমুদুল। তার মাও আসত প্রায়। আমাদের মেয়ের যে অবস্থা, তাতে আমরা শুরুতে বিয়েতে রাজি ছিলাম না। কিন্তু মাহমুদুলের ভালোবাসা আর অনঢ় সিদ্ধান্তে আমরা বাধ্য হই পরে।’

এক টাকা কাবিনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে ছেলে মৃত্যুপথযাত্রী একজনকে বিয়ে করতে নিজেই প্রস্তাব দেয়, সেখানে কাবিন কোনো বিষয়ই নয়। আমাদের মেয়ের প্রতি তার ভালোবাসা এসবের ঊর্ধ্বে।’

ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছেন ফাহমিদা কামাল। তার বাড়ি চট্টগ্রামের দক্ষিণ বাকলিয়ায়। আর মাহমুদুল হাসান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন। কক্সবাজারের চকরিয়ায় তার বাড়ি।

মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। আমাদের স্বপ্ন ছিল একসঙ্গে সংসার করার। ক্যানসার সে স্বপ্নের পথে বাধা দিলেও আমাদের দমাতে পারেনি। ফাহমিদার কষ্টের দিনগুলোতে স্বামী হিসেবে তার সেবা করে যেতে চাই।’

About Author Information
আপডেট সময় : ০৮:০৫:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ ২০২২
৩০৪ Time View

ভালোবাসার বিরল দৃষ্টান্ত: ক্যানসার দমাতে পারেনি মাহমুদুলকে

আপডেট সময় : ০৮:০৫:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ ২০২২

সবুজদেশ ডেস্ক:

মারণ রোগ ক্যানসার দমাতে পারেনি মাহমুদুল হাসান আর ফাহমিদা কামালের ভালোবাসাকে। ক্যানসারের শেষ দশায় থাকা ফাহমিদা কামালকে হাসপাতালের শয্যায় বিয়ে করলেন মাহমুদুল হাসান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন এই যুগলকে।

গত ৯ মার্চ রাতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতালের ৪০৫ নম্বর কেবিনে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। ১ টাকার কাবিনে কনে ফাহমিদা কামালকে বিয়ে করেন মাহমুদুল হাসান। এদিন লাল বেনারসি আর সোনার হার পরে বধূ সাজেন ফাহমিদা। মাহমুদুল পরেন পাঞ্জাবি-পায়জামা। ছিল কেক কাটা ও মালাবদলের আয়োজন।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে ক্যানসার বাসা বাঁধে ফাহমিদার শরীরে। তারও কয়েক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে তার পরিচয় ও প্রেম।

ফাহমিদার রেকটাম ক্যানসার ধরা পড়ার আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান। পরের বছরই দুই পরিবারের মধ্যে বিয়ের আনুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ক্যানসার এসে সব লন্ডভন্ড করে দেয়।

ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ফাহমিদাকে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। দীর্ঘ চিকিৎসার পরও অবস্থার উন্নতি হয়নি ফাহমিদার। আশা ছেড়ে দেন সেখানের চিকিৎসকরাও। এরপর কিছুদিন আবার এভারকেয়ারে চিকিৎসা দেয়া হয়। সর্বশেষ গত ৬ মার্চ তাকে চট্টগ্রামের ‘মেডিক্যাল সেন্টার’ নামে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জীবন-মৃত্যুর এত টানাপড়েনেও ফাহমিদার প্রতি মাহমুদুল হাসানের ভালোবাসায় ভাটা পড়েনি। প্রতিদিন কেবিনের সামনে এসে বসে থাকতেন তিনি। সামাজিক সম্পর্ক না থাকায় তার শয্যাপাশে গিয়ে সেবা করার সুযোগ ছিল না তার। এমন অবস্থায় ফাহমিদাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। এতে কিছুতেই রাজি ছিল না ফাহমিদার পরিবার।

কিন্তু হার মানানো যায়নি মাহমুদুল হাসানকে। তার অনড় সিদ্ধান্তে অবশেষে দুই পরিবার বিয়ের বিষয়ে একমত হয়েছে।

ফাহমিদা কামালের চাচা মো. ইউসুফ সালাম বলেন, ‘ফাহমিদার প্রতি মাহমুদুলের ভালোবাসা আমাদের অবাক করেছে। দিন নেই রাত নেই, হাসপাতালে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেবিনের সামনে বসে থাকত মাহমুদুল। তার মাও আসত প্রায়। আমাদের মেয়ের যে অবস্থা, তাতে আমরা শুরুতে বিয়েতে রাজি ছিলাম না। কিন্তু মাহমুদুলের ভালোবাসা আর অনঢ় সিদ্ধান্তে আমরা বাধ্য হই পরে।’

এক টাকা কাবিনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে ছেলে মৃত্যুপথযাত্রী একজনকে বিয়ে করতে নিজেই প্রস্তাব দেয়, সেখানে কাবিন কোনো বিষয়ই নয়। আমাদের মেয়ের প্রতি তার ভালোবাসা এসবের ঊর্ধ্বে।’

ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছেন ফাহমিদা কামাল। তার বাড়ি চট্টগ্রামের দক্ষিণ বাকলিয়ায়। আর মাহমুদুল হাসান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন। কক্সবাজারের চকরিয়ায় তার বাড়ি।

মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। আমাদের স্বপ্ন ছিল একসঙ্গে সংসার করার। ক্যানসার সে স্বপ্নের পথে বাধা দিলেও আমাদের দমাতে পারেনি। ফাহমিদার কষ্টের দিনগুলোতে স্বামী হিসেবে তার সেবা করে যেতে চাই।’