ঢাকা ০৪:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভালোবাসা দিবস তাই মায়ের জন্য ফুল কিনলেন এক রিকশাচালক

Reporter Name

সবুজদেশ ডেস্ক :

ভালোবাসা দিবস শব্দটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। ভালোবাসা দিবসের আগের দিন কমবেশি সবাই ফুল কিনে নেয়। সেই ফুল ভালোবাসা দিবসে কেউ দেবে মাকে, কেউ দেবে বাবাকে, কেউ দেবে আদরের ছোট ভাই-বোনদের, কেউ বা আবার ফুল নিয়ে গোপনে রেখে দেয় মনের মানুষকে দিতে।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা থেকেই ঝিনাইদহ শহরের রাস্তার পাশের বিভিন্ন ফুলের দোকানে উপচেপড়া ভিড় চোখে পড়ে। শুধু প্রেমিক-প্রেমিকা নয়, ফুলের দোকানগুলোতে ভিড় জমিয়েছে আরও অনেকে। কিনতে দেখা গেছে প্রিয়জনের জন্য নানা রঙ-বেরঙের ফুল।

ঘড়ির কাটায় যখন রাত ৯টা- এমন সময় চোখে পড়ে ফুলের দোকানের সামনে রিকশা থামিয়ে একজনকে ফুল কিনতে। পরে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার নাম রশিদ মিয়া (২০)। শহরের কালিকাপুর গ্রামে তার বাড়ি। ছয় বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছেন তিনি।

কার জন্য ফুল কিনলেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকালেই ভালোবাসা দিবস, তাই আমার মায়ের জন্য একটি গোলাপ ফুল কিনলাম। রিকশা চালিয়ে বাড়িতে ফিরে রাতেই মাকে ফুলটি দেব।

মাকেই শুধু প্রেমিকাকে কিছু দেবেন না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ভালোবাসা দিবস মানে কি শুধুই প্রেমিক-প্রেমিকার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের দিন? অবশ্যই না। একটু অন্যভাবে দেখলে ভালোবাসা দিবস মানে সকলের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের দিন। তাই ভালোবাসা দিবস হোক সবার প্রিয় মা ও বাবাকে ঘিরেই। পৃথিবীতে যদি কেউ বেশি ভালোবাসে সে হচ্ছে আমার মা। সবশেষে একটা কথাই আজ বলতে চাই, অনেক ভালোবাসি মা তোমাকে।

ফুল কিনতে আসা কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা তাদের ভালোবাসার মানুষকে শুভেচ্ছা জানাতে ফুল কিনতে এসেছেন। ফুলের দাম কেমন জানতে চাইলে সায়েম নামে এক ক্রেতা বলেন, অস্বাভাবিক বাড়তি দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। আগে আমরা যে গোলাপ ফুল কিনতাম ১০ টাকায় আজকে সেই ফুলের দাম নিচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। একটা গোলাপ আর একটা রজনীগন্ধা ও কিছু পাতা দিয়ে একসাথে বেঁধে বানানো হচ্ছে ফুলের স্টিক। যার দাম নেয়া হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

তিনি বলেন, কিছু করার নেই, প্রিয়জনকে দেব বলে কথা, তাই বাড়তি দাম দিয়েই কিনতে হচ্ছে ফুল।

ফুলের দোকানে আরেকজনের হাতে আলাদা আলাদা ৫-৬টি গোলাপ দেখে এতগুলো ফুল কেনার কারণ জানতে চাইলে তিনি হেসে বললেন, আসলে রাত পোহালেই ভালোবাসা দিবস তাই বাবা-মা, ভাই-বোন সবার সাথে ভালোবাসা ভাগ করে নিতে এত ফুল কেনা। এই ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার মানুষকে ফুল দেব। আমার পরিবারের সবাই আমার ভালোবাসার মানুষ।

দোকানে ফুল কিনতে আসা স্বর্ণা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসস্ত’ তাই বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে ফুল কিনছি বন্ধুদের উপহার দেব।

ঝিনাইদহের ফুল ব্যবসায়ী মিলন হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের দোকানে সারা বছরই ফুলের চাহিদা থাকে, তবে কিছু দিবসকে ঘিরে চাহিদা বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, সারা বছর তেমনটা ফুলের ব্যবসা হয় না। বছরের ১৬ ডিসেম্বর, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে, পহেলা ফাল্গুন, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ; এসব দিবসে ফুল বিক্রি বেশি হয়ে থাকে। সারা বছরের ব্যবসা এসব দিবসে করতে হয়। তাই গত কয়েক দিন ধরেই আমরা ব্যস্ত সময় পার করছি।

ফুল বিক্রেতারা জানান, পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে ফুলের দাম একটু বেশি হলেও বিক্রি ভালো হচ্ছে। প্রতিটি দেশি গোলাপের দাম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, জারবেরা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, গ্লাডিওলাস ১০ থেকে ১৫ টাকা ও রজনীগন্ধা ১০-১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া জুঁই-বেলী মালা ৫০-৭০ টাকা, গাঁদা ফুলের মালা ১০০-১৪০ টাকা, লিলি ১৫০ টাকা, থাই-চায়না ও ইন্ডিয়ান গোলাপ ৬০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্কিড ৭০ টাকা, একইভাবে দেশি-বিদেশি নানান ফুল বিক্রি হচ্ছে।

About Author Information
আপডেট সময় : ১১:৫২:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০
১২০১ Time View

ভালোবাসা দিবস তাই মায়ের জন্য ফুল কিনলেন এক রিকশাচালক

আপডেট সময় : ১১:৫২:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২০

সবুজদেশ ডেস্ক :

ভালোবাসা দিবস শব্দটির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। ভালোবাসা দিবসের আগের দিন কমবেশি সবাই ফুল কিনে নেয়। সেই ফুল ভালোবাসা দিবসে কেউ দেবে মাকে, কেউ দেবে বাবাকে, কেউ দেবে আদরের ছোট ভাই-বোনদের, কেউ বা আবার ফুল নিয়ে গোপনে রেখে দেয় মনের মানুষকে দিতে।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা থেকেই ঝিনাইদহ শহরের রাস্তার পাশের বিভিন্ন ফুলের দোকানে উপচেপড়া ভিড় চোখে পড়ে। শুধু প্রেমিক-প্রেমিকা নয়, ফুলের দোকানগুলোতে ভিড় জমিয়েছে আরও অনেকে। কিনতে দেখা গেছে প্রিয়জনের জন্য নানা রঙ-বেরঙের ফুল।

ঘড়ির কাটায় যখন রাত ৯টা- এমন সময় চোখে পড়ে ফুলের দোকানের সামনে রিকশা থামিয়ে একজনকে ফুল কিনতে। পরে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার নাম রশিদ মিয়া (২০)। শহরের কালিকাপুর গ্রামে তার বাড়ি। ছয় বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছেন তিনি।

কার জন্য ফুল কিনলেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকালেই ভালোবাসা দিবস, তাই আমার মায়ের জন্য একটি গোলাপ ফুল কিনলাম। রিকশা চালিয়ে বাড়িতে ফিরে রাতেই মাকে ফুলটি দেব।

মাকেই শুধু প্রেমিকাকে কিছু দেবেন না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ভালোবাসা দিবস মানে কি শুধুই প্রেমিক-প্রেমিকার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের দিন? অবশ্যই না। একটু অন্যভাবে দেখলে ভালোবাসা দিবস মানে সকলের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের দিন। তাই ভালোবাসা দিবস হোক সবার প্রিয় মা ও বাবাকে ঘিরেই। পৃথিবীতে যদি কেউ বেশি ভালোবাসে সে হচ্ছে আমার মা। সবশেষে একটা কথাই আজ বলতে চাই, অনেক ভালোবাসি মা তোমাকে।

ফুল কিনতে আসা কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা তাদের ভালোবাসার মানুষকে শুভেচ্ছা জানাতে ফুল কিনতে এসেছেন। ফুলের দাম কেমন জানতে চাইলে সায়েম নামে এক ক্রেতা বলেন, অস্বাভাবিক বাড়তি দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। আগে আমরা যে গোলাপ ফুল কিনতাম ১০ টাকায় আজকে সেই ফুলের দাম নিচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। একটা গোলাপ আর একটা রজনীগন্ধা ও কিছু পাতা দিয়ে একসাথে বেঁধে বানানো হচ্ছে ফুলের স্টিক। যার দাম নেয়া হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

তিনি বলেন, কিছু করার নেই, প্রিয়জনকে দেব বলে কথা, তাই বাড়তি দাম দিয়েই কিনতে হচ্ছে ফুল।

ফুলের দোকানে আরেকজনের হাতে আলাদা আলাদা ৫-৬টি গোলাপ দেখে এতগুলো ফুল কেনার কারণ জানতে চাইলে তিনি হেসে বললেন, আসলে রাত পোহালেই ভালোবাসা দিবস তাই বাবা-মা, ভাই-বোন সবার সাথে ভালোবাসা ভাগ করে নিতে এত ফুল কেনা। এই ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার মানুষকে ফুল দেব। আমার পরিবারের সবাই আমার ভালোবাসার মানুষ।

দোকানে ফুল কিনতে আসা স্বর্ণা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ বসস্ত’ তাই বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে ফুল কিনছি বন্ধুদের উপহার দেব।

ঝিনাইদহের ফুল ব্যবসায়ী মিলন হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের দোকানে সারা বছরই ফুলের চাহিদা থাকে, তবে কিছু দিবসকে ঘিরে চাহিদা বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, সারা বছর তেমনটা ফুলের ব্যবসা হয় না। বছরের ১৬ ডিসেম্বর, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে, পহেলা ফাল্গুন, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ; এসব দিবসে ফুল বিক্রি বেশি হয়ে থাকে। সারা বছরের ব্যবসা এসব দিবসে করতে হয়। তাই গত কয়েক দিন ধরেই আমরা ব্যস্ত সময় পার করছি।

ফুল বিক্রেতারা জানান, পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে ফুলের দাম একটু বেশি হলেও বিক্রি ভালো হচ্ছে। প্রতিটি দেশি গোলাপের দাম ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, জারবেরা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, গ্লাডিওলাস ১০ থেকে ১৫ টাকা ও রজনীগন্ধা ১০-১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া জুঁই-বেলী মালা ৫০-৭০ টাকা, গাঁদা ফুলের মালা ১০০-১৪০ টাকা, লিলি ১৫০ টাকা, থাই-চায়না ও ইন্ডিয়ান গোলাপ ৬০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্কিড ৭০ টাকা, একইভাবে দেশি-বিদেশি নানান ফুল বিক্রি হচ্ছে।