একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো প্রায় চার মাস বাকি। কিন্তু চার মাস আগেই নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ জানিয়ে দিয়েছেন সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আর এতেই অনেকটা ‘বেকায়দায়’ পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিরোধী দলগুলো তো বটেই, ক্ষমতাসীন দলটির নেতারাও বক্তব্যের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে বিব্রত হতে হচ্ছে নানা কারণে বিতর্ক সৃষ্টি করা নির্বাচন কমিশনকেও।

যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে সবকিছু হচ্ছে নির্বাচনকেন্দ্রিক, তখন হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে ভোটের তারিখ নিয়ে বিতর্ক। ভোটের তারিখ কে ঘোষণা করবেন, তা-ও যুক্ত হয়েছে এই বিতর্কে।

সচিবালয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী কাউন্সিলরদের নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আগামী ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচন হতে পারে। তিনি বলেন, আগামী ২০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে।

সংবিধানের ১২৩ (৩) (ক) অনুচ্ছেদ অনুসারে জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি। সেই হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ২৮ অক্টোবর ২০১৮ থেকে ২৮ জানুয়ারি ২০১৯-এর মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার একক দায়িত্ব ইসির।

অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর র‍্যাডিসন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, নির্বাচনের তারিখ দিয়ে অর্থমন্ত্রী ঠিক করেননি। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কোনো আলোচনা হয়নি। অর্থমন্ত্রী ভুল বলেছেন। এ কথা বলা তাঁর ঠিক হয়নি। তিনি বলেন, ভোটের তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, ডিসেম্বরের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

গত রোববার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, যথা সময়ে নির্বাচন হবে, নির্বাচন ঠেকানোর মতো শক্তি কারও নেই। নির্বাচন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যের পর থেকে রাজনীতির মাঠে নির্বাচনের হাওয়া জোরেশোরে বইতে শুরু করে। কিন্তু এর মধ্যেই আওয়ামী লীগের মন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন বিভিন্ন দলের নেতারা।

অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের ‘সুবিধা’ নিয়েছে বিএনপি। দলটি বরাবরই অভিযোগ করে আসছে, নির্বাচন কমিশন সরকারের ইচ্ছাতেই কাজ করছে। অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর দলটির নেতারা বলছেন, এর মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে কমিশন কিছু করে না, সরকার যা বলে, তা-ই করে বা কিছু করার আগে সরকারের অনুমোদন নিয়ে করে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অর্থমন্ত্রী কেন তারিখ ঘোষণা করলেন, এটা তাঁকেই জিজ্ঞাসা করা দরকার। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে এটা বলা তাঁর ঠিক হয়নি। কেননা ভোটের তারিখ ঘোষণার এখতিয়ার কেবল নির্বাচন কমিশনের।

শুধু বিরোধী দল অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করছে, তা-ই নয়। অর্থমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর নিজ দল আওয়ামী লীগের নেতাদের সমালোচনার মুখেও পড়েন তিনি। নিজ দলের মন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘২৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ, এটি নিশ্চিত হলেও তা বলার দায়িত্ব আমাদের না, এটি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশনকে বিব্রত করা আমাদের কাজ নয়।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনই বলবে কবে নির্বাচন হবে। এটি বলার দায়িত্ব সরকার কিংবা সরকারের কোনো মন্ত্রীর নয় কিংবা দলের কোনো নেতার নয়। তাই আমাদের যার যার এরিয়ার মধ্যে সীমিত থেকে রেসপনসিবল ভূমিকায় থাকলে দেশ, গণতন্ত্র ও সরকারের জন্য ভালো।’ ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের মধ্যে দলের বিব্রত হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here