ভোট কবে বলার দায়িত্ব মন্ত্রীর না: ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘২৭ ডিসেম্বর নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ, এটি নিশ্চিত হলেও তা বলার দায়িত্ব আমাদের না, এটি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশনকে বিব্রত করা আমাদের কাজ না।’
আজ বৃহস্পতিবার গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে অর্থমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে সাংবাদিকদের কাছে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনই বলবে—কবে নির্বাচন হবে। এটি বলার দায়িত্ব সরকার কিংবা সরকারের কোনো মন্ত্রীর নয় কিংবা দলের কোনো নেতার না। তাই আমাদের যার যার এরিয়ার মধ্যে সীমিত থেকে রেসপনসিবল ভূমিকায় থাকলে দেশ, গণতন্ত্র ও সরকারের জন্য ভালো।’
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল বুধবার বলেছেন, আগামী ২০ দিনের মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। আগামী ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচন হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এই বক্তব্য নিয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার কখন হবে, আকার কী হবে, আকারে কতটা ছোট হবে, মন্ত্রিসভায় কতজন থাকবেন, তা একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া এ বিষয়ে আর কেউ জানেন না। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনিও জানেন না।
জাতীয় ঐক্যে আওয়ামী লীগকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালে যাবে কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ঐক্যে বিশ্বাসী। জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন হলে আওয়ামী লীগ ডাক দেবে। এখন আওয়ামী লীগ জনগণের ঐক্য চায়। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা গণতন্ত্রের বিষয়। নির্বাচন মানেই হলো প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আওয়ামী লীগ একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে যাচ্ছে—এমন তো নয়। ঐক্যও হতে পারে। নির্বাচন এলে জোট হবেই।
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দল আওয়ামী লীগ। তাই এ বড় দলের সমর্থক ও ভোটারদের বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হাস্যকর। আওয়ামী লীগ ছাড়া ১৪ দল আছে। এ দলগুলোকে বাদ দিয়ে যেটা হবে, তা হলো সাম্প্রদায়িক ঐক্য। জাতীয় ঐক্যের নামে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ হচ্ছে। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে জাতীয় ঐক্য হয় নাকি? জাতীয় ঐক্য এ শব্দগুলো ব্যবহার না করাই ভালো। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি একমাত্র বিএনপির পক্ষে শোভা পায়। আওয়ামী লীগের ইতিহাসে অনিয়ম, জালিয়াতি নেই। নির্বাচনে কারচুপি করে ক্ষমতায় গেছে বিএনপি।
সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার প্রতিযোগিতায় দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলায় বিচ্যুতি ঘটেছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজশাহীর নেতাদের ডাকার নিশ্চয় কোনো কারণ আছে। প্রতিযোগিতা অসুস্থতা, অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় দলের নেতাদের ডাকতেই হবে। এখন সবার সাংসদ হওয়ার প্রতিযোগিতায় দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলায় বিচ্যুতি ঘটাচ্ছে। দায়িত্বশীল নেতারা যদি অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন, তাহলে কর্মীরা কী শিখবেন? নির্বাচন করার ইচ্ছা থাকতেই পারে, শুধু একজনই মনোনয়ন চাইবেন, তা তো নয়। অন্যরাও চাইতে পারেন। দলের ফান্ডে ২৫ হাজার টাকা করে দিতে হয়, এবার এর পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে বলেও কাদের জানান।
দলীয় নেতাদের আত্মঘাতী প্রবণতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী কাদের বলেন, চা দোকানে বসে গ্রুপ মিটিং করে দলের একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে প্রচারণা করেন, যেটা হওয়ার কথা ছিল বিরোধী পক্ষের বিরুদ্ধে। এর চেয়ে আত্মঘাতী প্রচারণা আর কিছু হতে পারে না। এ আত্মঘাতী প্রবণতা বন্ধ করতেই হবে।
নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, শূন্যতা না থাকলে নির্বাচন পর্যন্ত কোনো কমিটি ভাঙা যাবে না। নতুন কোনো কমিটিও করা যাবে না। আর নিজেদের মধ্যে দলাদলি করে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা, এটি কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। বরগুনাতে একটি ঘটনা ঘটেছে এবং আরেকটি ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরে। তা দল মোটেও গ্রহণ করবে না। কারও অভিযোগ থাকলে সরাসরি লিখিত আকারে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দেবে। এটি দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকেরা সমাধান করবেন।
অসুস্থ প্রতিযোগিতা করে সাংসদ হওয়া যাবে না জানিয়ে কাদের বলেন, অসুস্থ প্রতিযোগিতা করে কেউ যদি মনে করেন সাংসদ হওয়ার পথ সুগম হবে, তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। জরিপ রিপোর্ট আছে, আমলনামা, এসিআর আছে। ছয় মাস পরপর আপডেট হচ্ছে। সর্বশেষটাও যোগ হয়ে গেছে। এগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞ দল যাচাই-বাছাই করছে। আওয়ামী লীগ জনমতের ভিত্তিতেই মনোনয়ন দেবে। যিনি বেশি গ্রহণযোগ্য, তাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলে যতই প্রভাবশালী নেতা হোন না কেন, মনোনয়ন দেওয়া হবে না। নির্বাচন আর দল এক কথা না।
আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।