ঢাকা ০১:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভ্যালেন্টাইন‘স ডে: মরিচিকার পিছে ছোটা তারুণ্য

Reporter Name

ফারুক নোমানীঃ

আমি একজন মুসলিম। আমার ধর্ম আমাকে দিয়েছে প্রীতির সবক ও ভালোবাসার পাঠদান। তাই ধর্মের কারণেই আমি শিখেছি প্রেম-প্রীতি, স্নেহ-মমতা, শ্রদ্ধা-ভক্তি ও ভালোবাসা। এগুলো আমার ধর্মেরই শিক্ষা। একজন বিশ্বাসী মুমিন এভাবেই তার ধর্মীয় প্রেরণায় বেড়ে ওঠেন স্নেহ, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সমৃদ্ধ হয়ে। তার আচরণ হয় বড়ই প্রেমময়। ছোটদের প্রতি তার যেমন স্নেহের কমতি থাকে না, একইভাবে বড়দের প্রতি তার শ্রদ্ধাও থাকে পরিপূর্ণ। সমবয়সীদের জন্য তার ভালোবাসা হয় অনুসরণীয়। ইসলামের অনুশাসন মেনে চলা মানুষগুলো কখনো প্রেমশূন্য হন না। তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা যেমন থাকে বাবা মা, ভাইবোন, স্ত্রী সন্তান ও আত্মীয় স্বজনের প্রতি, তেমনই থাকে গুরুজন, শিক্ষার্থী ও অন্যান্য মানুষের জন্যও। তারা অসহায় দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ান ভালোবাসা থেকেই। এভাবে প্রতিটি মানুষকে ভালোবাসার সবক দিয়েছে ইসলাম। ইসলাম শুধু মানুষকে কেন পশুপাখির প্রতিও দয়া ও ভালোবাসা দেখাতে বলেছে। এমনকি প্রয়োজন ছাড়া গাছের একটি পাতাও ছিঁড়তে নিষেধ করেছে ইসলাম। তাই ইসলামের অনুসারী কোন মুসলিম কখনো ভালোবাসার শূন্যতায় ভোগেন না। প্রতিটি দিনের প্রতিটি সময় তার পার হয় অকৃত্রিম ভালোবাসার ভেতরেই । ফলে নতুন করে কারো কাছ থেকে মেকি ভালোবাসা শেখার কিছুই নেই কোন মুসলিমের জন্য।

আজ থেকে তিন দশক আগেও বাংলাদেশের মানুষ জানত না ভ্যালেন্টাইন‘স ডে কী। জানত না বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের নামে যুবক-যুবতী, তরুণ -তরুণীর প্রেমনিবেদনের কোন কামুকসংস্কৃতিকে। জানত না পবিত্র ভালোবাসার দোহায় দিয়ে যুবতীর সম্ভ্রম কেড়ে নেয়ার নির্লজ্জ পশুবৃত্তির কথা। বাঙ্গালী অভ্যস্ত ছিল না কখনো ১৪ ফেব্রুয়ারীতে কার্ড, ফুল, চকলেটসহ বাণিজ্যের রমরমা কারবারের সাথে। কিন্তু আজ তারা তাতে পুরোপুরি মজে গেছে। তারা মনে করে ভ্যালেন্টাইন‘স ডে মানে ভালোবাসা দিবস। পরিচিত হয়ে উঠেছে তারা ভালোবাসার নামে কামলালসা পুরণের এক নতুন সংস্কৃতির সাথে। ১৪ ই ফেব্রæয়ারী এলে ফুল ও কার্ডের দোকানে তরুণ-তরুণীর উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ে। সচেতন নাগরিকদেরকে বারবার ভাবিয়ে তোলে গার্লফ্রেন্ডকে বাইকের পেছনে বসিয়ে যুবকের বেপরোয়া উড়ে চলা। পার্ক ও নির্জনে কপোত-কপোতির প্রেমনিবেদনের নামে নির্লজ্জ যৌনাচার। বয়ফ্রেন্ড নামক কামুক দানবের বাহুর শক্ত বাঁধনে কত তরুণীর সম্ভ্রমসম্পদ পড়ে ধুলায় লুটিয়ে। অস্বীকৃতিতে আবার ফুটন্ত গোলাপের মত তরতাজা কতটি জীবন ঝরে যায় অকাতরে। বন্ধুর হাতে সম্ভ্রম হারিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয় কতটি মেয়ে তার লম্বা ফিরিস্তি বর্ণিত হয় পরের দিনের পত্র-পত্রিকায়। কিন্তু কতজন কুমারী মেয়ে মা হবার পথে এগিয়ে যায় তার জরিপটা থাকে একবারে অন্ধকারেই। এরই নাম ভালোবাসা দিবস উৎযাপন। একটি সুস্থ সুন্দর সমাজকে তা জলোচ্ছ¡াসের মতো তছনছ করে দেয়। কতটি সুখের সংসারে হাবিয়া দোযখের আগুন দাও দাও করে জ্বালিয়ে দেয় তার হিসেব একমাত্র আল্লাহই মালুম।

ভ্যালেন্টাইন‘স ডে মানে কি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস?

দু’ ক্লাস পড়া ছেলেটিও জানে বিশ্বকে ইংরেজিতে ড়িৎষফ, ভালোবাসাকে খড়াব, আর দিবসকে ফধু বলে। তাই বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের ইংরেজি হবে ড়িৎষফ ষড়াব ফধু, আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের ইংরেজি খুঁজতে গেলে ড়িৎষফ ষড়াব ফধু নামে কোন স্বীকৃত পরিভাষা পাওয়া যায় না। তাই ১৪ই ফেব্রæয়ারি ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন‘স ডে’কে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস অনুবাদ করা চরম ভুল ও একধরনের প্রতারণা বলা চলে। ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন‘স ডে’র মূল অনুবাদ হল সাধু ভ্যালেন্টাইনের দিবস। কে ছিলেন এই ভ্যালেন্টাইন? উম্মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়াতে অনুসন্ধান করলে তার সম্পর্কে যা পাওয়া যায়- ‘২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন খৃস্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচার-অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সম্রাজ্যে খৃস্টধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যদÐ দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রæয়ারি ছিল। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন‘স দিবস ঘোষণা করেন। খৃস্টানজগতে পাদ্রী-সাধু সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে। যেমন: ২৩ এপ্রিল সেন্ট জজ ডে, ১১ নভেম্বর সেন্ট মার্টিন ডে, ২৪ আগস্ট সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, ১ নভেম্বর আল সেইন্টম ডে, ৩০ নভেম্বর সেন্ট এন্ড্রæ ডে, ১৭ মার্চ সেন্ট প্যাট্রিক ডে।’

পাঠক, উইকিপিডিয়ার তথ্য বলে, তিনি ছিলেন একজন খৃস্টান পাদ্রী বা ধর্মপ্রচারক। সেন্ট অর্থ সাধু। খৃস্টধর্মে সাধনার একটা পর্যায় গেলে তাকে সেন্ট বা সাধু বলা হয়। যেমন: সেন্ট জজ, সেন্ট প্যাট্রিক, সেন্ট মার্টিন ইত্যাদি। তাই উইকিপিডিয়ার এই তথ্যে খুব সহজেই বুঝা যায় এটা একটি ধর্মীয় দিবস। যেমন মুসলিমদের মূলধরা থেকে বিচ্ছুত কিছু মানুষ পালন করে অমুক বাবার ওরশ, অমুক পীরের ফাতেহা শরীফ ইত্যাদি। ঠিক তেমনই খৃস্টানদের ভেতরও সেন্টদের দিবস আছে যা তাদের অনুসারীরা পালন করেন। যেমন: সেন্ট জজ ডে, সেন্ট মার্টিন ডে, সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, আল সেইন্টম ডে, সেন্ট এন্ডু ডে, সেন্ট প্যাট্রিক ডে, ইত্যাদি। এসব সেন্টদের দিবস উপলক্ষ্যে তারা বিভিন্ন উৎসব করে থাকেন। সুতরাং এটা সূর্যের মতো স্পষ্ট যে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন‘স ডে খৃস্টধর্মের একটি ধর্মীয় দিবস। তাদের ভেতরেই তা সীমাবদ্ধ থাকা বাঞ্চনীয়। তাকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নাম দেয়া একটা প্রতারণা ও জালিয়াতি। আর অন্য ধর্মের একটি ধর্মীয় দিবস হওয়ায় মুসলিমদের জন্য তা পালন করা হারাম। মুসলিমদের জন্য অন্য ধর্মের ধর্মীয় উৎসবে অংশ নেয়া, তা পালন করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ ও ঈমানবিধ্বংষী।

ভ্যালেন্টাইন‘স ডে পালনে ইসলাম কী বলে?
একজন মুসলিম কয়েকটি কারণে ভ্যালেন্টাইন‘স ডে পালন করতে পারেন না।
১. এটি খৃস্টধর্মের একটি ধর্মীয় দিবস: আর ইসলাম মুসলিমদের জন্য অন্য ধর্মের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। সুতরাং তা মুসলিমদের জন্য পালন করা হারাম। কবিরা গোনাহ ও ঈমান বিধ্বংসী। (বিস্তারিত দেখুন: সূরা আল ইমরান: ১০৫, সূরা নিসা: ১১৫, সূরা আল আরাফ: ১৪২, সুরা ইউনুস:৮৯) মনে রাখবেন, ইসলাম অন্য ধর্মের ধর্মীয় স্বাধীনতা দিয়েছে। তাদের ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করেছে। তাদের দেব-দেবী সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করতেও কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। বারবার বলেছে অমুসলিমদের সাথে ভালো ব্যবহারের কথা। তাদের ধর্ম তাদেরকে পূর্ণভাবে পালনের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা দিলেও কোন মুসলিম তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করবে এই অনুমতি দেয়নি ইসলাম। বরং এটাকে ঈমানবিধ্বংসী বলে ঘোষণা দিয়েছে। সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনু উমার রা. বলেন, নবীজী সা. বলেছেন-‘যদি কেউ কোন স¤প্রদায়ের অনুকরণ করে, তবে সে উক্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ ৪০৩১, আহমাদ ৫১১৪, ৫১১৫, ৫৬৬৭)

২. অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা: ভালোবাসা দিবসের মূল কার্যক্রম অশ্লীলতা, বেহায়াপনার নির্লজ্জ প্রদর্শনী। আর এই অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতা মানুষের মনুষ্যত্ববোধকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাকে নিকৃষ্ট পশুর চে’ আরো নিচে নামিয়ে দেয়। এটা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সমাজে যিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ ও খুন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অশ্লীলতা নিষিদ্ধের অন্যতম কারণ হলো, মানুষের ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের শৃঙ্খলা-নিরাপত্তা, সুখ ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা। যাতে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের ক্ষতি রয়েছে, তাকেই ইসলাম পাপ বলে ঘোষণা করেছে। এর বিপরীতে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের কল্যাণ যাতে নিহিত, ইসলাম তাকেই পুণ্য বলেছে। এর বাইরে আর কোন পাপ-পুণ্য নেই। যেমন দেখুন, ইসলাম মাদককে হারাম করেছে, কারণ তা ব্যক্তির কর্মসক্ষমতা, প্রাণশক্তিকে নষ্ট করে দেয়। আর অশ্লীলতা তো পুরো সমাজকে নষ্ট করে। মানব সভ্যতাকে করে ক্ষতিগ্রস্ত । অশ্লীলতার দ্বারা মানুষের পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে। মানব সভ্যতা হয়ে উঠছে ঝুকিপূর্ণ। তাই তো কুরআনুল কারীমে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন-‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সূরা আল ইসরা: ৩২) অন্যত্র বলেছেন- ‘যারা ঈমানদারদের মাঝে অশ্লীলতা ছড়াতে চায় তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে ভয়াবহ শাস্তি আছে।’ (সুরা নূর :১৯)

তাই অশ্লীলতায় নিমজ্জিত ব্যক্তি মৃত্যুর আগেই পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নরকযন্ত্রণা অনুভব করবে। এটাই চিরন্তন বাস্তবতা।

হাদীস শরীফে নবীজী সা. অশ্লীলতা পরিহার করার জন্য জোরদার আদেশ দিয়েছেন। জাবের রা. হতে বর্ণিত, নবীজী সা. বলেছেন-‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ অশ্লীল আচরণকারীকে, অশ্লীলতার প্রশ্রয় দানকারীকে এবং হাটে বাজরে শোরগোলকারীকে পছন্দ করেন না।’ (আল আদাবুল মুফরাদ ৩১০)

সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রা. বলেন, নবীজী সা. বলেছেন- ‘আল্লাহর থেকে অধিক আত্মমর্যাদাসম্পন্ন আর কেউ নেই। এ কারণেই তিনি অশ্লীলতাকে হারাম করে দিয়েছেন।’ (সহীহ বুখারী ৪৬৩৪, ৪৬৩৭, ৫২২০, ৭৪০৩, ৭৪১৬, আরো দেখুন: সহীহ মুসলিম ১৪৯৯, ২৭৬০)

অশ্লীলতার শাস্তি আল্লাহ পরকালে যেমন দিবেন আবার দুনিয়াতেও কিছুটা দিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. বলেন, নবীজী সা. বলেছেন- ‘যে জনগোষ্ঠীর মধ্যেই ব্যভিচার ব্যাপক হবে, সেখানে মৃত্যুর আধিক্য ব্যাপক হয়ে দেখা দিবে।’ (মুআত্তায়ে মালিক ৮৭০)

আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রা.হতে বর্ণিত, নবীজী সা. বলেছেন- ‘যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্লজ্জতা প্রকাশমান, পরে তারা তারই ব্যাপক প্রচার প্রসারেরও ব্যবস্থা করে, যার অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ মহামারি, সংক্রামক রোগ এবং ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ এত প্রকট হয়ে দেখা দিবে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে কখনই দেখা যায়নি।’ (ইবনু মাজাহ ৪০০৯)।

প্রগতির নামে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও অবাধ মেলামেশার কারণে সমাজে নতুন নতুন রোগব্যাধি প্রকাশ পাচ্ছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে এসব নতুন রোগের অনেকটা কারণ যৌনউচ্ছৃঙ্খলা । এ কারণেই ইসলাম অশ্লীলতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

৩. ভ্যালেন্টাইন‘স ডে প্যাগানিজমের নতুনরূপ। খৃস্টধর্মের বহু পূর্বে প্রাচীন রোম ও প্রাচীন ভারতে প্রকৃতির পূজা হত। সে সময়ের মানুষেরা প্রকৃতির কাছে প্রার্থনা করত। প্যাগানরা একাধিক ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিল। তারা মনে করত বাতাসের পূজা করলে বাতাস তাদের সকল সমস্যা দূরে নিয়ে যাবে। আগুনকে তারা শক্তির কেন্দ্রবিন্দু মনে করত। তাই আগুনের পূজা করত শক্তি অর্জনের জন্য। এভাবেই বসন্তকেও তারা পূজা করত। এই বিশ্বাসে যে, বসন্তে যেমন গাছে নতুন পাতা ও ফুল আসে, তেমনি কেউ যদি বসন্ত দেবতার পূজা করে, তার যৌবন থাকবে চির অটুট। আর উত্তর মেরুতে অতীত যুগ থেকেই বসন্ত আসে এমন সময়। তাদের বসন্ত বরণের একটা ব্যবস্থা ছিল লুপার কালিয়া। তারা তা পালন করত ফেব্রæয়ারির ১৩/১৪/১৫ এর দিকেই। প্রাচীন ইউরোপে খৃস্টানদের আগমনের পর প্যাগান বা প্রকৃতিপূজারীদের এই বর্ষবরণ পরবর্তীতে খস্টধর্মে চলে আসে। ১৪ই ফেব্রæয়ারি এই দিবস পালন প্রকৃতিপূজারীদের সাথে সাদৃশ্বপূর্ণ, সুতরাং তা মুসলিমদের জন্য অবশ্যয়ই বর্জনীয়। বিস্তারিত দেখুন ইউকিপিডিয়াতে। এছাড়াও এ দিবস পালন ইসলামে নিষিদ্ধ হবার আরো একটি বড় কারণ অপচয়। আর অপচয় ইসলামে হারাম।

এ কোন ভালোবাসা?
ভালোবাসা মানুষের হৃদয়ে লালিত একটি কোমল অনুভূতি। এটা আল্লাহ প্রদত্ব নেয়ামত। তাই যার ভেতর মায়া-মমতা, ভালোবাসা নেয়, তাকে মানুষেও ভালোবাসে না আবার আল্লাহর কাছেও সে প্রিয় নয়। সুতরাং ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনের নিরাপত্তা, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ভালোবাসার কোন বিকল্প নেয়। ইসলাম এই ভালোবাসার শিক্ষাই মানুষকে দিয়েছে। ভালোবাসা অনেক রকম হতে পারে। মা-বাবাকে ভালোবাসা। দরিদ্র ও দুঃস্থকে ভালোবাসা। দেশকে ভালোবাসা। এগুলো সবই ভালোবাসা। তবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে যে ভালোবাসাকে গ্রহণ করা হয়েছে তা হল নারী-পুরুষের যৌবিক ভালোবাসা। আর তা গ্রহণের কারণে যা ঘটে ইসলামেই শুধু নয়, অন্যান্য আসমানী ধর্মগ্রন্থেও সেই অশ্লীলতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভালোবাসা দিবসে সন্তান পিতা-মাতাকে আরো বেশি সেবা করতে পারত। যুবকরা মিলে সমাজের অসহায় মানুষের পাশে একটি দিনের জন্য হলেও দাঁড়াতে পারত। কোন বিধবা নারীকে একটি সেলাই মেশিন কিনে দিয়ে হলেও ভালোবাসা দেখাতে পারত। বস্তির কোন ছিন্নমূল শিশুর গায়ে একটি নতুন জামা পরিয়ে দেয়াও ছিল একটি ভালোবাসার প্রকাশ। কিন্তু এ সকল ভালোবাসা বাদ রেখে আমাদের যুবসমাজকে শিখানো হল অশ্লীল ভালোবাসা। যেখানে আছে শুধু কামবৃত্তি চরিতার্থ করার নোংরা মানসিকতা। ফলে হাজার হাজার মেয়ে তার সতিত্ব হারাবে প্রেমিকরূপী কামুক লম্পটের হাতে। জন্ম নিবে অনেক নিষ্পাপ মানব সন্তান, কিন্তু পৃথিবীর আলোবাতাস দেখার আগেই তার স্থান হবে কোন ময়লাখানা বা নর্দমায়। ভালোবাসার নামে জঘন্যতম প্রতারণায় প্রতারিত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিবে অনেক মেয়েই। এভাবেই সমাজ, পরিবেশ হয়ে উঠবে অশান্ত, দূষিত। অশ্লীলতায় ভেঙ্গে পড়বে মানব সভ্যতা। এ জন্যই বারবার ইসলামে অশ্লীলতাকে নিষিদ্ধ করেছে।

কেন এ দিবস নিয়ে এতো মাতামাতি?
বিশ্বে আরো অনেক দিবস পালন হয় যেমন- বিশ্ব মা দিবস, শিশু দিবস ইত্যাদি। কিন্তু অন্যান্য দিবসের তুলনায় এ ভালোবাসা দিবসকে কেন এতো বেশি প্রচার করা হয়? এর পেছনে আছে বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যবাদের অশুভ উদ্দেশ্য। বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যবাদীদের দর্শন হল, পন্য বিক্রি কর অর্থ হাতিয়ে নাও। ভোগ কর। এর বাইরে কিছইু তারা বোঝে না। ভাবতে পারে না। সুতরাং এ দিবসকে এতো বেশি প্রচারণার উদ্দেশ্য তাদের পন্য বিক্রি করা। এর চমৎকার একটি গল্প আছে : উইকিপিডিয়াতে কিছু ইঙ্গিতও দিয়েছে। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কোন ধরনের উৎসব তা বলতে গিয়ে তিনটি কথা বলা হয়েছে। ‘সাংস্কৃতিক, খৃস্টান, বাণিজ্যিক।’ অর্থাৎ এটা খৃস্টান সংস্কৃতি, বাণিজ্যই এর মূল লক্ষ্য। এরপর লিখেছে- ‘পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্মদিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জাও অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা কসুর করে না। খৃস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ হয়। ইংলান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উৎযাপন করা থেকে বিরত থাকাল জন্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়।’

উইকিপিডিয়ার তথ্য প্রমাণ করে ভ্যালেন্টাইন ডে’তে অশ্লীলতার সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় পৃথিবীর নামকরা অনেক দেশ তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তবে বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের ব্যবসার স্বার্থেই আবার তা চালু করে। ঘটনাটি হলো বৃটেনে বছরের এগারো মাস ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ভালো চলত। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে প্রচণ্ড বরফের কারণে তাদের ব্যবসার অবস্থা ভালো যেত না। এ সমস্যার সমাধানের জন্য ব্যবসায়ীরা একবার জরুরী মিটিং ডেকেছিল। এ মাসেও কীভাবে তারা তাদের পন্য বিক্রি করতে পারে তার কৌশল নিয়ে হলো বিস্তর আলোচনা। তারা ইতিহাসে দেখল- অনেক আগে ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে পালন হত। অশ্লীলতার সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় তা নিষিদ্ধ করা হয়। এ তথ্য তাদেরকে আশার আলো দেখাল। সকলের সম্মতিতে এমর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হল যে, মিডিয়ার মাধ্যমে নিষিদ্ধ ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’কে পুনরুজ্জীবিত করা হোক। ছড়িয়ে দেয়া হোক পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে। সেই তখন থেকে আবার নতুনভাবে শুরু হল এ দিবস উৎযাপন। তবে শুধুমাত্র তা ব্যবসায়িক স্বার্থেই।

তারুণ্যকে চেতনাশূন্য করার হীনপায়তারা
একজন মানুষ যার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই। নেই দেশ, জাতি ও মানবতার প্রতি যার কোন ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ। এমন লোককে গাদ্দার বানানো খুবই সহজ। দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রে তাকে ব্যবহার করা যায় অনায়াসেই। তাদের জীবনের একটাই দর্শন ও উদ্দেশ্য হয়ে থাকে ‘খাও-দাও ফ‚র্তি কর।’ এই ভোগবাদিতার বাইরে আর বুঝতে চায় না কিছুই। আমাদের তরুণসমাজের চরিত্র আজ ভয়ঙ্কররূপ ধারণ করেছে। অথচ আজ থেকে বিশ বছর আগেও এমন হওয়াটা মানুষ কল্পনাও করতে পারত না। মিডিয়া আজ আমাদের ভেতরের মনুষ্যত্ববোধকে খুন করছে প্রতিনিয়ত। আদর্শ ও নৈতিকতাশূন্য স্বার্থপর ভোগবাদী সমাজের দিকে ঠেলে দিচ্ছে আমাদেরকে। আমাদের সোনার সংসারে এই মিডিয়াই আগুন লাগাচ্ছে। মিডিয়া কি পারত না তরুণদেরকে এ ভালোবাসা দিবসে গরিবের প্রতি ভালোবাসা দেখানো শেখাতে? গুরুজনকে শ্রদ্ধা ও ভক্তি দৃষ্টান্ত পেশ করতে? পারত। তবে তাতে তো আর মতলববাজদের উদ্দেশ্য হাসিল হবে না!

মোটকথা: যে কারণে ভ্যালেন্টাইন‘স ডে পালন করা মুসলিমদের জন্য জায়েয নেই।
১) এটা খৃস্টধর্মের একটি ধর্মীয় দিবস।
২) ইসলামে জঘন্যতম হারাম অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের মাধ্যম এটি।
৩) বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যবাদীদের ব্যবসায়িক দিবস।
৪) যুবসমাজকে নৈতিকতাশূন্য ও ভোগবাদী করে গড়ে তোলার হীনষড়যন্ত্রের বাস্তবায়ন।
৫) এটা প্যাগান বা প্রকৃতিপূজারীদের বসন্ত পূজার দিবস।
সুতরাং এই দিনে ভালোবাসার নামে প্রতারণা থেকে বেঁচে থাকা প্রতিটি মুমিন-মুসলিমের ঈমানের দাবী। এমনকি এ দিবস উপলক্ষ্যে স্ত্রীকেও বিশেষ ভালোবাসা নিবেদন শরিয়ত সম্মত নয়। আর যে মুসলিম বছরের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত করছেন স্বর্গীয় ভালোবাসার ভেতরে তার কীইবা প্রয়োজন আছে মিছেমিছি এই মেকি ভালোবাসার অভিনয় করার!

লেখক: মুহাদ্দিস, বলিদাপাড়া মাদরাসা, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।
ইমাম, বায়তুল আমান জামে মসজিদ (মেইন বাসস্ট্যান্ড) কালীগঞ্জ,

About Author Information
আপডেট সময় : ০৬:৪৫:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১
৩৭১ Time View

ভ্যালেন্টাইন‘স ডে: মরিচিকার পিছে ছোটা তারুণ্য

আপডেট সময় : ০৬:৪৫:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১

ফারুক নোমানীঃ

আমি একজন মুসলিম। আমার ধর্ম আমাকে দিয়েছে প্রীতির সবক ও ভালোবাসার পাঠদান। তাই ধর্মের কারণেই আমি শিখেছি প্রেম-প্রীতি, স্নেহ-মমতা, শ্রদ্ধা-ভক্তি ও ভালোবাসা। এগুলো আমার ধর্মেরই শিক্ষা। একজন বিশ্বাসী মুমিন এভাবেই তার ধর্মীয় প্রেরণায় বেড়ে ওঠেন স্নেহ, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সমৃদ্ধ হয়ে। তার আচরণ হয় বড়ই প্রেমময়। ছোটদের প্রতি তার যেমন স্নেহের কমতি থাকে না, একইভাবে বড়দের প্রতি তার শ্রদ্ধাও থাকে পরিপূর্ণ। সমবয়সীদের জন্য তার ভালোবাসা হয় অনুসরণীয়। ইসলামের অনুশাসন মেনে চলা মানুষগুলো কখনো প্রেমশূন্য হন না। তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা যেমন থাকে বাবা মা, ভাইবোন, স্ত্রী সন্তান ও আত্মীয় স্বজনের প্রতি, তেমনই থাকে গুরুজন, শিক্ষার্থী ও অন্যান্য মানুষের জন্যও। তারা অসহায় দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ান ভালোবাসা থেকেই। এভাবে প্রতিটি মানুষকে ভালোবাসার সবক দিয়েছে ইসলাম। ইসলাম শুধু মানুষকে কেন পশুপাখির প্রতিও দয়া ও ভালোবাসা দেখাতে বলেছে। এমনকি প্রয়োজন ছাড়া গাছের একটি পাতাও ছিঁড়তে নিষেধ করেছে ইসলাম। তাই ইসলামের অনুসারী কোন মুসলিম কখনো ভালোবাসার শূন্যতায় ভোগেন না। প্রতিটি দিনের প্রতিটি সময় তার পার হয় অকৃত্রিম ভালোবাসার ভেতরেই । ফলে নতুন করে কারো কাছ থেকে মেকি ভালোবাসা শেখার কিছুই নেই কোন মুসলিমের জন্য।

আজ থেকে তিন দশক আগেও বাংলাদেশের মানুষ জানত না ভ্যালেন্টাইন‘স ডে কী। জানত না বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের নামে যুবক-যুবতী, তরুণ -তরুণীর প্রেমনিবেদনের কোন কামুকসংস্কৃতিকে। জানত না পবিত্র ভালোবাসার দোহায় দিয়ে যুবতীর সম্ভ্রম কেড়ে নেয়ার নির্লজ্জ পশুবৃত্তির কথা। বাঙ্গালী অভ্যস্ত ছিল না কখনো ১৪ ফেব্রুয়ারীতে কার্ড, ফুল, চকলেটসহ বাণিজ্যের রমরমা কারবারের সাথে। কিন্তু আজ তারা তাতে পুরোপুরি মজে গেছে। তারা মনে করে ভ্যালেন্টাইন‘স ডে মানে ভালোবাসা দিবস। পরিচিত হয়ে উঠেছে তারা ভালোবাসার নামে কামলালসা পুরণের এক নতুন সংস্কৃতির সাথে। ১৪ ই ফেব্রæয়ারী এলে ফুল ও কার্ডের দোকানে তরুণ-তরুণীর উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ে। সচেতন নাগরিকদেরকে বারবার ভাবিয়ে তোলে গার্লফ্রেন্ডকে বাইকের পেছনে বসিয়ে যুবকের বেপরোয়া উড়ে চলা। পার্ক ও নির্জনে কপোত-কপোতির প্রেমনিবেদনের নামে নির্লজ্জ যৌনাচার। বয়ফ্রেন্ড নামক কামুক দানবের বাহুর শক্ত বাঁধনে কত তরুণীর সম্ভ্রমসম্পদ পড়ে ধুলায় লুটিয়ে। অস্বীকৃতিতে আবার ফুটন্ত গোলাপের মত তরতাজা কতটি জীবন ঝরে যায় অকাতরে। বন্ধুর হাতে সম্ভ্রম হারিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয় কতটি মেয়ে তার লম্বা ফিরিস্তি বর্ণিত হয় পরের দিনের পত্র-পত্রিকায়। কিন্তু কতজন কুমারী মেয়ে মা হবার পথে এগিয়ে যায় তার জরিপটা থাকে একবারে অন্ধকারেই। এরই নাম ভালোবাসা দিবস উৎযাপন। একটি সুস্থ সুন্দর সমাজকে তা জলোচ্ছ¡াসের মতো তছনছ করে দেয়। কতটি সুখের সংসারে হাবিয়া দোযখের আগুন দাও দাও করে জ্বালিয়ে দেয় তার হিসেব একমাত্র আল্লাহই মালুম।

ভ্যালেন্টাইন‘স ডে মানে কি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস?

দু’ ক্লাস পড়া ছেলেটিও জানে বিশ্বকে ইংরেজিতে ড়িৎষফ, ভালোবাসাকে খড়াব, আর দিবসকে ফধু বলে। তাই বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের ইংরেজি হবে ড়িৎষফ ষড়াব ফধু, আর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের ইংরেজি খুঁজতে গেলে ড়িৎষফ ষড়াব ফধু নামে কোন স্বীকৃত পরিভাষা পাওয়া যায় না। তাই ১৪ই ফেব্রæয়ারি ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন‘স ডে’কে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস অনুবাদ করা চরম ভুল ও একধরনের প্রতারণা বলা চলে। ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন‘স ডে’র মূল অনুবাদ হল সাধু ভ্যালেন্টাইনের দিবস। কে ছিলেন এই ভ্যালেন্টাইন? উম্মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়াতে অনুসন্ধান করলে তার সম্পর্কে যা পাওয়া যায়- ‘২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন খৃস্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচার-অভিযোগে তৎকালীন রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সম্রাজ্যে খৃস্টধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যদÐ দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রæয়ারি ছিল। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন‘স দিবস ঘোষণা করেন। খৃস্টানজগতে পাদ্রী-সাধু সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে। যেমন: ২৩ এপ্রিল সেন্ট জজ ডে, ১১ নভেম্বর সেন্ট মার্টিন ডে, ২৪ আগস্ট সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, ১ নভেম্বর আল সেইন্টম ডে, ৩০ নভেম্বর সেন্ট এন্ড্রæ ডে, ১৭ মার্চ সেন্ট প্যাট্রিক ডে।’

পাঠক, উইকিপিডিয়ার তথ্য বলে, তিনি ছিলেন একজন খৃস্টান পাদ্রী বা ধর্মপ্রচারক। সেন্ট অর্থ সাধু। খৃস্টধর্মে সাধনার একটা পর্যায় গেলে তাকে সেন্ট বা সাধু বলা হয়। যেমন: সেন্ট জজ, সেন্ট প্যাট্রিক, সেন্ট মার্টিন ইত্যাদি। তাই উইকিপিডিয়ার এই তথ্যে খুব সহজেই বুঝা যায় এটা একটি ধর্মীয় দিবস। যেমন মুসলিমদের মূলধরা থেকে বিচ্ছুত কিছু মানুষ পালন করে অমুক বাবার ওরশ, অমুক পীরের ফাতেহা শরীফ ইত্যাদি। ঠিক তেমনই খৃস্টানদের ভেতরও সেন্টদের দিবস আছে যা তাদের অনুসারীরা পালন করেন। যেমন: সেন্ট জজ ডে, সেন্ট মার্টিন ডে, সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, আল সেইন্টম ডে, সেন্ট এন্ডু ডে, সেন্ট প্যাট্রিক ডে, ইত্যাদি। এসব সেন্টদের দিবস উপলক্ষ্যে তারা বিভিন্ন উৎসব করে থাকেন। সুতরাং এটা সূর্যের মতো স্পষ্ট যে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন‘স ডে খৃস্টধর্মের একটি ধর্মীয় দিবস। তাদের ভেতরেই তা সীমাবদ্ধ থাকা বাঞ্চনীয়। তাকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নাম দেয়া একটা প্রতারণা ও জালিয়াতি। আর অন্য ধর্মের একটি ধর্মীয় দিবস হওয়ায় মুসলিমদের জন্য তা পালন করা হারাম। মুসলিমদের জন্য অন্য ধর্মের ধর্মীয় উৎসবে অংশ নেয়া, তা পালন করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ ও ঈমানবিধ্বংষী।

ভ্যালেন্টাইন‘স ডে পালনে ইসলাম কী বলে?
একজন মুসলিম কয়েকটি কারণে ভ্যালেন্টাইন‘স ডে পালন করতে পারেন না।
১. এটি খৃস্টধর্মের একটি ধর্মীয় দিবস: আর ইসলাম মুসলিমদের জন্য অন্য ধর্মের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। সুতরাং তা মুসলিমদের জন্য পালন করা হারাম। কবিরা গোনাহ ও ঈমান বিধ্বংসী। (বিস্তারিত দেখুন: সূরা আল ইমরান: ১০৫, সূরা নিসা: ১১৫, সূরা আল আরাফ: ১৪২, সুরা ইউনুস:৮৯) মনে রাখবেন, ইসলাম অন্য ধর্মের ধর্মীয় স্বাধীনতা দিয়েছে। তাদের ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করেছে। তাদের দেব-দেবী সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করতেও কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। বারবার বলেছে অমুসলিমদের সাথে ভালো ব্যবহারের কথা। তাদের ধর্ম তাদেরকে পূর্ণভাবে পালনের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা দিলেও কোন মুসলিম তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করবে এই অনুমতি দেয়নি ইসলাম। বরং এটাকে ঈমানবিধ্বংসী বলে ঘোষণা দিয়েছে। সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনু উমার রা. বলেন, নবীজী সা. বলেছেন-‘যদি কেউ কোন স¤প্রদায়ের অনুকরণ করে, তবে সে উক্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ ৪০৩১, আহমাদ ৫১১৪, ৫১১৫, ৫৬৬৭)

২. অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা: ভালোবাসা দিবসের মূল কার্যক্রম অশ্লীলতা, বেহায়াপনার নির্লজ্জ প্রদর্শনী। আর এই অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতা মানুষের মনুষ্যত্ববোধকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাকে নিকৃষ্ট পশুর চে’ আরো নিচে নামিয়ে দেয়। এটা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সমাজে যিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ ও খুন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অশ্লীলতা নিষিদ্ধের অন্যতম কারণ হলো, মানুষের ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের শৃঙ্খলা-নিরাপত্তা, সুখ ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা। যাতে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের ক্ষতি রয়েছে, তাকেই ইসলাম পাপ বলে ঘোষণা করেছে। এর বিপরীতে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের কল্যাণ যাতে নিহিত, ইসলাম তাকেই পুণ্য বলেছে। এর বাইরে আর কোন পাপ-পুণ্য নেই। যেমন দেখুন, ইসলাম মাদককে হারাম করেছে, কারণ তা ব্যক্তির কর্মসক্ষমতা, প্রাণশক্তিকে নষ্ট করে দেয়। আর অশ্লীলতা তো পুরো সমাজকে নষ্ট করে। মানব সভ্যতাকে করে ক্ষতিগ্রস্ত । অশ্লীলতার দ্বারা মানুষের পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে। মানব সভ্যতা হয়ে উঠছে ঝুকিপূর্ণ। তাই তো কুরআনুল কারীমে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন-‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সূরা আল ইসরা: ৩২) অন্যত্র বলেছেন- ‘যারা ঈমানদারদের মাঝে অশ্লীলতা ছড়াতে চায় তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে ভয়াবহ শাস্তি আছে।’ (সুরা নূর :১৯)

তাই অশ্লীলতায় নিমজ্জিত ব্যক্তি মৃত্যুর আগেই পারিবারিক ও সামাজিকভাবে নরকযন্ত্রণা অনুভব করবে। এটাই চিরন্তন বাস্তবতা।

হাদীস শরীফে নবীজী সা. অশ্লীলতা পরিহার করার জন্য জোরদার আদেশ দিয়েছেন। জাবের রা. হতে বর্ণিত, নবীজী সা. বলেছেন-‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ অশ্লীল আচরণকারীকে, অশ্লীলতার প্রশ্রয় দানকারীকে এবং হাটে বাজরে শোরগোলকারীকে পছন্দ করেন না।’ (আল আদাবুল মুফরাদ ৩১০)

সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রা. বলেন, নবীজী সা. বলেছেন- ‘আল্লাহর থেকে অধিক আত্মমর্যাদাসম্পন্ন আর কেউ নেই। এ কারণেই তিনি অশ্লীলতাকে হারাম করে দিয়েছেন।’ (সহীহ বুখারী ৪৬৩৪, ৪৬৩৭, ৫২২০, ৭৪০৩, ৭৪১৬, আরো দেখুন: সহীহ মুসলিম ১৪৯৯, ২৭৬০)

অশ্লীলতার শাস্তি আল্লাহ পরকালে যেমন দিবেন আবার দুনিয়াতেও কিছুটা দিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. বলেন, নবীজী সা. বলেছেন- ‘যে জনগোষ্ঠীর মধ্যেই ব্যভিচার ব্যাপক হবে, সেখানে মৃত্যুর আধিক্য ব্যাপক হয়ে দেখা দিবে।’ (মুআত্তায়ে মালিক ৮৭০)

আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রা.হতে বর্ণিত, নবীজী সা. বলেছেন- ‘যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্লজ্জতা প্রকাশমান, পরে তারা তারই ব্যাপক প্রচার প্রসারেরও ব্যবস্থা করে, যার অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ মহামারি, সংক্রামক রোগ এবং ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ এত প্রকট হয়ে দেখা দিবে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে কখনই দেখা যায়নি।’ (ইবনু মাজাহ ৪০০৯)।

প্রগতির নামে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও অবাধ মেলামেশার কারণে সমাজে নতুন নতুন রোগব্যাধি প্রকাশ পাচ্ছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে এসব নতুন রোগের অনেকটা কারণ যৌনউচ্ছৃঙ্খলা । এ কারণেই ইসলাম অশ্লীলতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

৩. ভ্যালেন্টাইন‘স ডে প্যাগানিজমের নতুনরূপ। খৃস্টধর্মের বহু পূর্বে প্রাচীন রোম ও প্রাচীন ভারতে প্রকৃতির পূজা হত। সে সময়ের মানুষেরা প্রকৃতির কাছে প্রার্থনা করত। প্যাগানরা একাধিক ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিল। তারা মনে করত বাতাসের পূজা করলে বাতাস তাদের সকল সমস্যা দূরে নিয়ে যাবে। আগুনকে তারা শক্তির কেন্দ্রবিন্দু মনে করত। তাই আগুনের পূজা করত শক্তি অর্জনের জন্য। এভাবেই বসন্তকেও তারা পূজা করত। এই বিশ্বাসে যে, বসন্তে যেমন গাছে নতুন পাতা ও ফুল আসে, তেমনি কেউ যদি বসন্ত দেবতার পূজা করে, তার যৌবন থাকবে চির অটুট। আর উত্তর মেরুতে অতীত যুগ থেকেই বসন্ত আসে এমন সময়। তাদের বসন্ত বরণের একটা ব্যবস্থা ছিল লুপার কালিয়া। তারা তা পালন করত ফেব্রæয়ারির ১৩/১৪/১৫ এর দিকেই। প্রাচীন ইউরোপে খৃস্টানদের আগমনের পর প্যাগান বা প্রকৃতিপূজারীদের এই বর্ষবরণ পরবর্তীতে খস্টধর্মে চলে আসে। ১৪ই ফেব্রæয়ারি এই দিবস পালন প্রকৃতিপূজারীদের সাথে সাদৃশ্বপূর্ণ, সুতরাং তা মুসলিমদের জন্য অবশ্যয়ই বর্জনীয়। বিস্তারিত দেখুন ইউকিপিডিয়াতে। এছাড়াও এ দিবস পালন ইসলামে নিষিদ্ধ হবার আরো একটি বড় কারণ অপচয়। আর অপচয় ইসলামে হারাম।

এ কোন ভালোবাসা?
ভালোবাসা মানুষের হৃদয়ে লালিত একটি কোমল অনুভূতি। এটা আল্লাহ প্রদত্ব নেয়ামত। তাই যার ভেতর মায়া-মমতা, ভালোবাসা নেয়, তাকে মানুষেও ভালোবাসে না আবার আল্লাহর কাছেও সে প্রিয় নয়। সুতরাং ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনের নিরাপত্তা, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ভালোবাসার কোন বিকল্প নেয়। ইসলাম এই ভালোবাসার শিক্ষাই মানুষকে দিয়েছে। ভালোবাসা অনেক রকম হতে পারে। মা-বাবাকে ভালোবাসা। দরিদ্র ও দুঃস্থকে ভালোবাসা। দেশকে ভালোবাসা। এগুলো সবই ভালোবাসা। তবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে যে ভালোবাসাকে গ্রহণ করা হয়েছে তা হল নারী-পুরুষের যৌবিক ভালোবাসা। আর তা গ্রহণের কারণে যা ঘটে ইসলামেই শুধু নয়, অন্যান্য আসমানী ধর্মগ্রন্থেও সেই অশ্লীলতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভালোবাসা দিবসে সন্তান পিতা-মাতাকে আরো বেশি সেবা করতে পারত। যুবকরা মিলে সমাজের অসহায় মানুষের পাশে একটি দিনের জন্য হলেও দাঁড়াতে পারত। কোন বিধবা নারীকে একটি সেলাই মেশিন কিনে দিয়ে হলেও ভালোবাসা দেখাতে পারত। বস্তির কোন ছিন্নমূল শিশুর গায়ে একটি নতুন জামা পরিয়ে দেয়াও ছিল একটি ভালোবাসার প্রকাশ। কিন্তু এ সকল ভালোবাসা বাদ রেখে আমাদের যুবসমাজকে শিখানো হল অশ্লীল ভালোবাসা। যেখানে আছে শুধু কামবৃত্তি চরিতার্থ করার নোংরা মানসিকতা। ফলে হাজার হাজার মেয়ে তার সতিত্ব হারাবে প্রেমিকরূপী কামুক লম্পটের হাতে। জন্ম নিবে অনেক নিষ্পাপ মানব সন্তান, কিন্তু পৃথিবীর আলোবাতাস দেখার আগেই তার স্থান হবে কোন ময়লাখানা বা নর্দমায়। ভালোবাসার নামে জঘন্যতম প্রতারণায় প্রতারিত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিবে অনেক মেয়েই। এভাবেই সমাজ, পরিবেশ হয়ে উঠবে অশান্ত, দূষিত। অশ্লীলতায় ভেঙ্গে পড়বে মানব সভ্যতা। এ জন্যই বারবার ইসলামে অশ্লীলতাকে নিষিদ্ধ করেছে।

কেন এ দিবস নিয়ে এতো মাতামাতি?
বিশ্বে আরো অনেক দিবস পালন হয় যেমন- বিশ্ব মা দিবস, শিশু দিবস ইত্যাদি। কিন্তু অন্যান্য দিবসের তুলনায় এ ভালোবাসা দিবসকে কেন এতো বেশি প্রচার করা হয়? এর পেছনে আছে বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যবাদের অশুভ উদ্দেশ্য। বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যবাদীদের দর্শন হল, পন্য বিক্রি কর অর্থ হাতিয়ে নাও। ভোগ কর। এর বাইরে কিছইু তারা বোঝে না। ভাবতে পারে না। সুতরাং এ দিবসকে এতো বেশি প্রচারণার উদ্দেশ্য তাদের পন্য বিক্রি করা। এর চমৎকার একটি গল্প আছে : উইকিপিডিয়াতে কিছু ইঙ্গিতও দিয়েছে। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস কোন ধরনের উৎসব তা বলতে গিয়ে তিনটি কথা বলা হয়েছে। ‘সাংস্কৃতিক, খৃস্টান, বাণিজ্যিক।’ অর্থাৎ এটা খৃস্টান সংস্কৃতি, বাণিজ্যই এর মূল লক্ষ্য। এরপর লিখেছে- ‘পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্মদিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জাও অভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা কসুর করে না। খৃস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ হয়। ইংলান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উৎযাপন করা থেকে বিরত থাকাল জন্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়।’

উইকিপিডিয়ার তথ্য প্রমাণ করে ভ্যালেন্টাইন ডে’তে অশ্লীলতার সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় পৃথিবীর নামকরা অনেক দেশ তা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তবে বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের ব্যবসার স্বার্থেই আবার তা চালু করে। ঘটনাটি হলো বৃটেনে বছরের এগারো মাস ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ভালো চলত। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে প্রচণ্ড বরফের কারণে তাদের ব্যবসার অবস্থা ভালো যেত না। এ সমস্যার সমাধানের জন্য ব্যবসায়ীরা একবার জরুরী মিটিং ডেকেছিল। এ মাসেও কীভাবে তারা তাদের পন্য বিক্রি করতে পারে তার কৌশল নিয়ে হলো বিস্তর আলোচনা। তারা ইতিহাসে দেখল- অনেক আগে ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে পালন হত। অশ্লীলতার সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ায় তা নিষিদ্ধ করা হয়। এ তথ্য তাদেরকে আশার আলো দেখাল। সকলের সম্মতিতে এমর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হল যে, মিডিয়ার মাধ্যমে নিষিদ্ধ ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’কে পুনরুজ্জীবিত করা হোক। ছড়িয়ে দেয়া হোক পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে। সেই তখন থেকে আবার নতুনভাবে শুরু হল এ দিবস উৎযাপন। তবে শুধুমাত্র তা ব্যবসায়িক স্বার্থেই।

তারুণ্যকে চেতনাশূন্য করার হীনপায়তারা
একজন মানুষ যার জীবনের কোন লক্ষ্য নেই। নেই দেশ, জাতি ও মানবতার প্রতি যার কোন ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ। এমন লোককে গাদ্দার বানানো খুবই সহজ। দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রে তাকে ব্যবহার করা যায় অনায়াসেই। তাদের জীবনের একটাই দর্শন ও উদ্দেশ্য হয়ে থাকে ‘খাও-দাও ফ‚র্তি কর।’ এই ভোগবাদিতার বাইরে আর বুঝতে চায় না কিছুই। আমাদের তরুণসমাজের চরিত্র আজ ভয়ঙ্কররূপ ধারণ করেছে। অথচ আজ থেকে বিশ বছর আগেও এমন হওয়াটা মানুষ কল্পনাও করতে পারত না। মিডিয়া আজ আমাদের ভেতরের মনুষ্যত্ববোধকে খুন করছে প্রতিনিয়ত। আদর্শ ও নৈতিকতাশূন্য স্বার্থপর ভোগবাদী সমাজের দিকে ঠেলে দিচ্ছে আমাদেরকে। আমাদের সোনার সংসারে এই মিডিয়াই আগুন লাগাচ্ছে। মিডিয়া কি পারত না তরুণদেরকে এ ভালোবাসা দিবসে গরিবের প্রতি ভালোবাসা দেখানো শেখাতে? গুরুজনকে শ্রদ্ধা ও ভক্তি দৃষ্টান্ত পেশ করতে? পারত। তবে তাতে তো আর মতলববাজদের উদ্দেশ্য হাসিল হবে না!

মোটকথা: যে কারণে ভ্যালেন্টাইন‘স ডে পালন করা মুসলিমদের জন্য জায়েয নেই।
১) এটা খৃস্টধর্মের একটি ধর্মীয় দিবস।
২) ইসলামে জঘন্যতম হারাম অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের মাধ্যম এটি।
৩) বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যবাদীদের ব্যবসায়িক দিবস।
৪) যুবসমাজকে নৈতিকতাশূন্য ও ভোগবাদী করে গড়ে তোলার হীনষড়যন্ত্রের বাস্তবায়ন।
৫) এটা প্যাগান বা প্রকৃতিপূজারীদের বসন্ত পূজার দিবস।
সুতরাং এই দিনে ভালোবাসার নামে প্রতারণা থেকে বেঁচে থাকা প্রতিটি মুমিন-মুসলিমের ঈমানের দাবী। এমনকি এ দিবস উপলক্ষ্যে স্ত্রীকেও বিশেষ ভালোবাসা নিবেদন শরিয়ত সম্মত নয়। আর যে মুসলিম বছরের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত করছেন স্বর্গীয় ভালোবাসার ভেতরে তার কীইবা প্রয়োজন আছে মিছেমিছি এই মেকি ভালোবাসার অভিনয় করার!

লেখক: মুহাদ্দিস, বলিদাপাড়া মাদরাসা, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।
ইমাম, বায়তুল আমান জামে মসজিদ (মেইন বাসস্ট্যান্ড) কালীগঞ্জ,