মসজিদের নাম করে তোলা টাকার সিংহভাগই নয়-ছয় করার অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বিরুদ্ধে। দলিল প্রতি নেওয়া হয় ১০০ টাকা, কিন্তু মসজিদে দেওয়া হতো মাত্র ২০ টাকা। আগের নিয়মেই টাকা তোলা হলেও এখন কোন টাকা দেয়া হয় না বলে জানিয়েছেন মসজিদের ঈমাম হাফেজ ইব্রাহিম খলিল।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, কোটচাঁদপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সপ্তাহে দুই দিন বুধবার ও বৃহস্পতিবার জমি রেজিষ্ট্রি করা হয়। ওইদিন গুলোতে দলিল প্রতি কোটচাঁদপুর উপজেলা জামে মসজিদের নাম করে নেওয়া হয় ১০০ টাকা। তবে মসজিদে দেয়া হতো মাত্র ২০ টাকা। আর বাকি টাকা ছয় নয় করার অভিযোগ সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। ওই টাকা তোলেন অফিসের নকল নোবিশ মিলন হোসেন। এভাবে মসজিদের নাম করে টাকা তুুলে আত্মসাৎ করা হলেও দেখার কেউ নেই। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই এমন অবস্থা হচ্ছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।
ভুক্তভোগী বড় বামনদহ গ্রামের মারুফ হোসেন বলেন, সম্প্রতি আমি একটা জমি রেজিস্ট্রি করতে গিয়েছিলাম। জমি রেজিষ্ট্রি শেষ হওয়ার পর সর্বশেষ দরজার পাশের একটি টেবিলে থাকা মানুষটা আঙ্গুলের টিপ নিলেন দলিলে। এরপর বললেন ১০০ টাকা দেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম কিসের টাকা। তিনি বললেন, মসজিদের জন্য। সে সময় আমি কোন কথা না ভেবেই টাকাটা দিয়ে দিলাম। এখন দেখছি ওই টাকা নিয়েও তারা ছয় নয় করেছেন। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। শুধু মারুফ হোসেন না। এ ধরনের একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
মসজিদের নাম করে রেজিষ্ট্রি অফিসের টাকা তোলা প্রসঙ্গে কোটচাঁদপুর উপজেলা জামে মসজিদের সাবেক মুয়াজ্জিন হাফেজ খায়রুল বাশার সবুজদেশ নিউজকে বলেন, আমি এ বিষয়ে রাজ স্বাক্ষী। আমি যে সময় মসজিদের দায়িত্বে ছিলাম, সে সময় বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন ইউএনও স্যারকে জানিয়ে ছিলাম। এরপর তিনি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন পর আবারও যা-তাই হয়ে যায়।তারা মসজিদের জন্য শুধু ১০০ টাকাই নয় ১০০/২০০/৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। যার কাছ থেকে যেমন পারেন। আর সেখান থেকে মসজিদে দলিল প্রতি দেন ২০ টাকা করে।
তিনি আরো বলেন, প্রতি সপ্তাহে মসজিদের জন্য চাঁদা তোলে ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা। অথচ মসজিদে দেন ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা মাসে।
মসজিদের বর্তমান ইমাম হাফেজ ইব্রাহিম খলিল বলেন, আমি মসজিদে আসার পর দলিল প্রতি আগে ২০ টাকা করে দিতেন। তবে কয়েক মাস যাবৎ কোন টাকায় দেন না তারা। তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি মসজিদের নাম করে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা করে তোলা হয়।
তবে অভিযোগ মানতে নারাজ ওই অফিসের অফিস সহকারী আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, ১০০ টাকা করে নেয়া হয় সত্য। তবে বেশির ভাগ টাকায় দেয়া হয় মসজিদে। আর ২০ টাকা দেওয়া যিনি টাকা তোলেন তাকে। তার নাম মিলন।
বিষয়টি নিয়ে সাব রেজিস্টার তামিম আহমেদ চৌধুরী বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারির পর থেকে মসজিদ বাবদ পূর্বে যে টাকা সংগ্রহ করা হতো তা বন্ধ করতে আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম। যা এখনও বলবৎ রয়েছে। ফলে বিগত একমাসের অধিক সময় মসজিদেও কোন দান করা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, মসজিদের দান সংগ্রহের বিষয়টি আমি এই অফিসে যোগদানের পূর্ব থেকে হয়ে আসছে। এই দান সংগ্রহ ও ম্যানেজমেন্টের সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। পুরো বিষয়টি অফিসের সহকারী দেখভাল করেন। কোন বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হলে আমাকে জানাবেন। আমি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা জামে মসজিদের সাধারন সম্পাদক ও মৎস্য কর্মকর্তা দ্বীন ইসলাম বলেন, মসজিদে একটা টাকা সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে দেন। তবে পরিমানটা কত সেটা আমার জানা নাই। আর এটা তো বেশ আগে থেকে তারা মসজিদে দিয়ে থাকেন। বর্তমানে দেন কি এটা আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সবুজদেশ/বাশার/এসএএস