ঢাকা ০৭:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় ১৭ মে

 

মাগুরার আলোচিত সেই শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এ শুনানিতে রাষ্ট্র পক্ষ ও আসামী পক্ষের আইনজীবীরা অংশ নেন। আগামী ১৭মে মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য করেছেন আদালত। বেলা ১২টার দিকে মাগুরা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে ২য় দিনের মতো এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাগুরা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) মনিরুল ইসলাম মুকুল।

মামলাটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় অ্যাটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদাপ্রাপ্ত আইনজীবী এহসানুল হক সমাজীকে। তিনিও মঙ্গলবার শুনানিতে অংশ নেন। শুনানি শেষে এহসানুল হক সমাজী সাংবাদিকদের জানান, মাগুরার শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে আজ। বিজ্ঞ বিচারিক ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৭মে মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য করেছে। গতকাল (সোমবার) রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এ মামলায় আসামীর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী, মেডিকেল এভিডেন্স ও সাক্ষীদের জবানবন্দীতে আসামীদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আশাকরছি আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। এ ধরণের অপরাধ যাতে আর না ঘটে এ রায় সেটার একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করবে’।

মাগুরা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) মনিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্র পক্ষে ২৯ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। আদালত ৩৪২ ধারায় আসামীদের শনাক্ত করা ও তাঁদের বক্তব্য শুনেছেন। এখন যুক্তিতর্ক চলছে। আগামীকালও যুক্তিতর্ক হবে। এরপর রায় ঘোষণার তারিখ জানাবেন আদালত। আসামীর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীসহ যেসব প্রমাণ রয়েছে তাঁতে আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশাকরি।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ছুটির দিন বাদে টানা শুনানি চলছে। আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ শুনানি হয়। মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুরকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/২ ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যুর অপরাধ), শিশুটির বোনের স্বামী ও ভাশুরকে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশ (ভয়ভীতি প্রদর্শন) এবং বোনের শাশুড়ির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় (অপরাধের আলামত নষ্টের অভিযোগ) অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। এর আগে গত ১৫ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি বলেন, ৬ মার্চ সকালে বোনের স্বামীর কক্ষে শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেন মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্র বিশ্লেষণ করে জানা যায়, আসামির জবানবন্দির সঙ্গে বাদীর এজাহারে কিছু অমিল আছে। এজাহারে বলা হয়েছে, ঘটনা ঘটেছিল ৫ তারিখ (মার্চ) দিবাগত রাতে এবং শিশুটির বোনের স্বামী ঘরের দরজা খুলে দেওয়ার পর তাঁর বাবা শিশুটিকে বাইরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঘটনা ঘটেছে ৬ মার্চ সকালে শিশুটির বোনের কক্ষে। এ সময় শিশুটির বোন ওই বাড়ির মধ্যে ছিলেন।

শিশুটি বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। এর আগে ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।

সবুজদেশ/এসএএস

Tag :

মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় ১৭ মে

Update Time : ০১:৩১:০৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

 

মাগুরার আলোচিত সেই শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এ শুনানিতে রাষ্ট্র পক্ষ ও আসামী পক্ষের আইনজীবীরা অংশ নেন। আগামী ১৭মে মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য করেছেন আদালত। বেলা ১২টার দিকে মাগুরা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে ২য় দিনের মতো এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মাগুরা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) মনিরুল ইসলাম মুকুল।

মামলাটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ কৌঁসুলি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় অ্যাটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদাপ্রাপ্ত আইনজীবী এহসানুল হক সমাজীকে। তিনিও মঙ্গলবার শুনানিতে অংশ নেন। শুনানি শেষে এহসানুল হক সমাজী সাংবাদিকদের জানান, মাগুরার শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে আজ। বিজ্ঞ বিচারিক ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৭মে মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য করেছে। গতকাল (সোমবার) রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এ মামলায় আসামীর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী, মেডিকেল এভিডেন্স ও সাক্ষীদের জবানবন্দীতে আসামীদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আশাকরছি আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। এ ধরণের অপরাধ যাতে আর না ঘটে এ রায় সেটার একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করবে’।

মাগুরা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) মনিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্র পক্ষে ২৯ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। আদালত ৩৪২ ধারায় আসামীদের শনাক্ত করা ও তাঁদের বক্তব্য শুনেছেন। এখন যুক্তিতর্ক চলছে। আগামীকালও যুক্তিতর্ক হবে। এরপর রায় ঘোষণার তারিখ জানাবেন আদালত। আসামীর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীসহ যেসব প্রমাণ রয়েছে তাঁতে আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশাকরি।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। ছুটির দিন বাদে টানা শুনানি চলছে। আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ শুনানি হয়। মামলায় শিশুটির বোনের শ্বশুরকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯/২ ধারায় (ধর্ষণের ফলে মৃত্যুর অপরাধ), শিশুটির বোনের স্বামী ও ভাশুরকে দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারার দ্বিতীয় অংশ (ভয়ভীতি প্রদর্শন) এবং বোনের শাশুড়ির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২০১ ধারায় (অপরাধের আলামত নষ্টের অভিযোগ) অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।

গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। পরে ১৭ এপ্রিল মামলাটি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় এবং ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হয়। এর আগে গত ১৫ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে শিশুটির বোনের শ্বশুর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তিনি বলেন, ৬ মার্চ সকালে বোনের স্বামীর কক্ষে শিশুটিকে একা পেয়ে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেন মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্র বিশ্লেষণ করে জানা যায়, আসামির জবানবন্দির সঙ্গে বাদীর এজাহারে কিছু অমিল আছে। এজাহারে বলা হয়েছে, ঘটনা ঘটেছিল ৫ তারিখ (মার্চ) দিবাগত রাতে এবং শিশুটির বোনের স্বামী ঘরের দরজা খুলে দেওয়ার পর তাঁর বাবা শিশুটিকে বাইরে নিয়ে ধর্ষণ করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঘটনা ঘটেছে ৬ মার্চ সকালে শিশুটির বোনের কক্ষে। এ সময় শিশুটির বোন ওই বাড়ির মধ্যে ছিলেন।

শিশুটি বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। ৬ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। এর আগে ৮ মার্চ শিশুটির মা মাগুরা সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।

সবুজদেশ/এসএএস