মাগুরায় করোনা আতঙ্কে জানাজা ছাড়াই লাশ দাফন!
মাগুরাঃ
মাগুরায় জানাজা ছাড়াই মোক্তার শেখ নামে এক ব্যক্তির লাশ দাফন করা হয়েছে। ঢাকার মুগদা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে স্ট্রোক করে তার মৃত্যু হয়েছে।
মোক্তার শেখের স্ত্রী অনুরোধেও এলাকাবাসী তার লাশটি গ্রামে ঢুকতে দেয়নি। পরে পরিবারের সদস্যরা লাশ সরাসরি কবরস্থানে নেন এবং ঘনিষ্ঠ কয়েকজন কেবল দোয়া-মোনাজাত করেই লাশ দাফন করতে বাধ্য হন।
মোক্তার শেখ জেলার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের আহম্মদ শেখের ছেলে।
নিহত মোক্তার শেখের চাচাতো ভাই আবদুস শুকুরসহ এলাকাবাসী জানান, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোক্তার শেখের স্ত্রী শিল্পী আকতার একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তার স্বামীর লাশ নিয়ে মাগুরার বিনোদপুর আসেন। তার আগেই খবর পান স্থানীয়রা।
তিনি জানান, করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত এলাকাবাসীর কাছে মোক্তার শেখের মৃত্যুটি স্বাভাবিক মনে না হওয়ায় তারা জোটবদ্ধ হয়ে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি গ্রামের বাড়িতে যেতে না দিয়ে সরাসরি বিনোদপুর কবরস্থানে পাঠিয়ে দেন। সেখানে অল্প সময়ের মধ্যেই লাশটি দাফন করা হয়।
সেখানেই স্যাভলন পানিতে গোসল করিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয় তার স্ত্রী শিল্পীকেও। বর্তমানে সে শ্বশুরবাড়ি বিনোদপুর মোল্যাপাড়ায় একটি বদ্ধঘরে আছেন বলে জানিয়েছেন আবদুস শুকুর।
মৃত মোক্তার শেখের স্ত্রী শিল্পী আকতার জানান, স্বামী-সন্তান নিয়ে তিনি ঢাকার মুগদায় একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন। সেখানে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করেন স্বামী। দুই-তিন বছর আগে তার যক্ষ্মা ছিল। সেটি ভালো হয়েও যায়। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। বুধবার রাতে সেই অসুস্থতা আরও বেড়ে যায়। শ্বাসকষ্ট হতে থাকে।
তিনি জানান, অবস্থা বেগতিক দেখে রাত ২টার দিকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। দ্রুত তাকে মুগদা হাসপাতালে নিয়ে গেলে স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানান। তার কাছে এই মৃত্যুর সনদও রয়েছে বলে দাবি করেন শিল্পী।
এ বিষয়ে বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শিকদার মিজানুর রহমান জানান, মোক্তার শেখের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে সেটি আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। একাকী এক নারী তার স্বামীর লাশ নিয়ে চলে এসেছেন। এটি অস্বাভাবিক। তাই এলাকাবাসী অ্যাম্বুলেন্সসহ লাশ কবরস্থানে ঢুকিয়ে দিয়েছে।
মোক্তার শেখের মৃত্যুর সনদের বিষয়ে জানতে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়েছি। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার আগেই তারা লাশটি গ্রামে ঢুকতে না দিয়ে দাফন করেছে।
তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারের মাধ্যমে তার স্ত্রীকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।