বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাঠ দৃশ্যত আওয়ামী লীগের দখলে। পোস্টার, মাইকিং ও গণসংযোগ—সব দিক থেকেই দলটিকে এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে প্রচারে পিছিয়ে থাকলেও সহজেই নির্বাচনের দিন মাঠ ছাড়বে না বিএনপি। আর দলটির এই অবস্থানে আশা জোগাচ্ছেন দলটির কাউন্সিল প্রার্থীরা।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের গতবারের নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডে বিএনপির ১৯ জন কাউন্সিলর ছিলেন। তাঁদের মধ্যে এবারের নির্বাচনে ১৭ জন কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন। এর বাইরে বিএনপির অন্তত তিনজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে ‘সরিয়ে’ দেওয়ার অভিযোগ আছে। তাঁরা দাবি করেছেন, নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্য তাঁদের ওপর চাপ ছিল। এ ছাড়া পারিবারিক কারণও ছিল।

বরিশাল বিএনপির নেতারা বলছেন, তাঁদের কাউন্সিলর প্রার্থীরা যদি মাঠে থাকেন, তাহলে মেয়র প্রার্থীর অবস্থান শক্ত থাকবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, তাতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের জন্য মাঠে থাকা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। এরপরও নির্বাচনের দিন বিএনপি মাঠে থাকবে।

এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউদ্দিন সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন হচ্ছে জনগণ আর প্রশাসনের মধ্যে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের কোনো কারণ ছাড়াই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অনেকে আতঙ্কে আছেন। এত কিছুর পরও নির্বাচনের দিন তাঁরা মাঠে থাকবেন।’

বরিশাল সিটির ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী মনিরুল ইসলাম। তিনি বিএনপির হয়ে এবারও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর অভিযোগ, ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতারা তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন। এই মামলায় তাঁর ভাইসহ চারজনকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। এরপরও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনের দিন মাঠে থাকবেন তিনি।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার শেষ হয় গতকাল শনিবার রাত ১২টায়। বরিশালে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানির অভিযোগ করেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে সব দলের সঙ্গে বসে ‘সিদ্ধান্ত’ নেওয়ার বিষয়েও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

‘গ্রেপ্তার’ বা ‘হয়রানির’ পরও শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে যেতে চায় বিএনপি। এ ক্ষেত্রে কাউন্সিলর প্রার্থীদের ওপর ভরসা করছে দলটি। কারণ হিসেবে দলটির একাধিক নেতা বলেন, নির্বাচনী প্রচারের শেষ সময়ে গতকাল মজিবর রহমান সরোয়ার পথসভা ও গণসংযোগ করার জন্য পরিকল্পনা করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের পর পথসভা করার কথা থাকলেও তা থেকে তিনি সরে আসেন। এর পেছনে কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, নির্বাচনী প্রচারে বের হলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের আটক ও গ্রেপ্তার করে আসছেন। ফলে পথসভা করলে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কর্মকাণ্ডে ব্যাঘাত ঘটতে পারত।

এ বিষয়ে বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব এবায়দুল হক প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল গণসংযোগে বের হয়নি বিএনপি। নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নির্বাচনী প্রচারের বেশ কয়েক দিন বিএনপি সেভাবে মাঠে নামেনি। কারণ হিসেবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, তাঁদের নেতা-কর্মীরা মাঠে নামলেই পুলিশ আটক বা গ্রেপ্তার করে। বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। এরপরও অনেক জায়গায় নেতা-কর্মীরা ভালোভাবে নির্বাচনী প্রচার চালানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাধার কারণে তাঁরা মাঠে থাকতে পারেননি।

বিএনপি নির্বাচনী প্রচারে মাঠে না থেকে নির্বাচনের দিন নিজেদের ‘শক্তি’ দেখানোর কৌশল নিয়েছে বলে দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে। এরপরও দলটির নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার এড়াতে পারেনি। গত শুক্রবার বরিশাল মহানগর থেকে বিএনপির ১৪ জন নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ।

এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়কারী মির্জা আব্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) যদি বলে, উত্তরাধিকার-দখলসূত্রে আমরা বাংলাদেশের মালিক, তাহলে ইলেকশন লাগে না।’

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here