ঢাকা ০১:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মাদককারবারির অস্ত্রের আঘাতে যুবক নিহত, বাবা-ভাই মাসহ আহত ৬

  • সবুজদেশ ডেস্ক:
  • Update Time : ০৮:০৯:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫
  • ১৩৪ বার পড়া হয়েছে।

 

মাদককারবারি ও চোর সিন্ডিকেটের সদস্যদের হাতে চঞ্চল গাজী নামে এক ইজিবাইকচালক নিহত হয়েছেন। ওই সময় তার বাবা-মা, ভাই ও প্রতিপক্ষের তিনজন আহত হন।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে যশোর সদরের ডাকাতিয়া গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত চঞ্চল গাজী (৩০) ডাকাতিয়া গ্রামের মধু গাজীর ছেলে।

পুলিশ বলছে, ইজিবাইক চুরি নিয়ে প্রতিপক্ষের পূর্ব থেকেই শত্রুতা ছিল। এ ঘটনায় তিনজনকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে চঞ্চলের বাড়ির সামনে প্রতিপক্ষ রবিউল গাজী (৪৫) একজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ওই সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে চঞ্চলের বাবা মধু গাজী তাকে বাড়ির সামনে মাদক বিক্রি করতে নিষেধ এবং তার ছেলের চুরি যাওয়া ইজিবাইক ফিরিয়ে দিতে বলেন। ওই সময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির একপর্যায়ে মধু গাজী রাস্তায় পড়ে যান। তখন পাশে থাকা একটি কাঠের টুকরো, যাতে লোহার পেরেক লাগানো ছিল- সেটি দিয়ে রবিউল আঘাত করতে থাকেন।

এদিকে খবর পেয়ে বাড়ি থেকে চঞ্চল, তার ভাই তুহিন ও মা হাসিনা বেরিয়ে আসেন। অপরদিকে রবিউল, তার ভাই বেল্লাল, রবিউলের ছেলে মুন্না, রবিউলের সাগরেদ সাদ্দাম ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। ওই সময় দুইপক্ষের সংঘর্ষে চঞ্চলসহ সাতজন কমবেশি আহত হন।

আহতদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চঞ্চল গাজী মারা যান।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার তাহমিদ হাসান জানিয়েছেন, আহত চারজনকে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে চঞ্চলের মৃত্যু হয়েছে। তার পিঠ, উরু, নিতম্বসহ একাধিক স্থানে ছুরিকাঘাতে জখম করা হয়েছে।

এদিকে চঞ্চলের মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

নিহতের মা হাসিনা বেগম, স্ত্রী মীমসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিহত চঞ্চলের চার মাস বয়সি একমাত্র সন্তান আয়ানকে কোলে নিয়ে বিলাপ করছিলেন তারা।

চঞ্চলের মা বলেন, মাস দুয়েক আগে তার ছেলের ইজিবাইকটি চুরি করে বিক্রি করে দেয় জামাল গাজীর ছেলে রবিউল ও বেল্লাল। তারা এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা করে। ঘটনার সময়ও রবিউল একজনের কাছে ইয়াবা বিক্রি করছিল। চঞ্চলের বাবা নিষেধ করায় তারা (রবিউল, তার ভাই, বউ, সন্তান এবং তার পার্টনার সাদ্দাম) তাকে মেরে মাটিতে ফেলে পেরেকযুক্ত কাঠের বাটাম দিয়ে মারতে থাকে। ওই সময় ছেলে চঞ্চল, তুহিন ও আমি ঠেকাতে গেলে আমাদের এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। আমার ছেলে ও তার বাপ এতে গুরুতর জখম হয়। একপর্যায়ে তাদের হাত থেকে বাঁচতে বড় ছেলে পাশের হালিমার বাড়িতে পালায়। কিন্তু রবিউল, বেল্লাল, সাদ্দামসহ ওরা ৫-৭ জন সেখানে গিয়েও তাকে কোপাতে থাকে।

অবশ্য তাদের অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রবিউল গাজী বলেছেন, ইন্টারনেট ব্যবসায়ী পিয়াসের সঙ্গে তিনি লাইনের সমস্যা নিয়ে কথা বলছিলেন। ওই সময় মধু গাজী এসে তাকে গালিগালাজ ও চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করে। এরপর গোলযোগের সূত্রপাত হয়। তিনি প্রতিবেশী সাদ্দামের বাড়িতে ঢুকে পড়েন। তখন সাদ্দাম ধারালো অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে মারপিটে জড়িয়ে পড়ে। তিনি অজ্ঞান হয়ে যান, আর কিছুই জানেন না।

খবর পেয়ে কাশিমপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ইকবাল হোসেন ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি বলেন, রবিউল ও তার ভাই এবং সাদ্দাম নামে ওই যুবকের বিরুদ্ধে এলাকায় মাদক ব্যবসা এবং ইজিবাইক, ভ্যান চুরির অভিযোগ রয়েছে। ওই চক্র প্রভাবশালী হওয়ায় কেউই তাদের বিরুদ্ধে যেতে চায় না। মাদকসহ বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে আটক, এলাকায় সালিশ হলেও তারা ড্যামকেয়ার। এর আগে তারা নূরপুরে থাকত, একই কারণে সেখানকার লোকজন তাদের উচ্ছেদ করেছে বলে স্থানীয় লোকজন জানান।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেখানে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে বলেও স্থানীয়রা জানান।

জানতে চাইলে যশোর কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রবিউল ও তার ছেলে মুন্না এবং ভাই বেল্লালকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

সবুজদেশ/এসএএস

Tag :
জনপ্রিয়

মাদককারবারির অস্ত্রের আঘাতে যুবক নিহত, বাবা-ভাই মাসহ আহত ৬

Update Time : ০৮:০৯:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫

 

মাদককারবারি ও চোর সিন্ডিকেটের সদস্যদের হাতে চঞ্চল গাজী নামে এক ইজিবাইকচালক নিহত হয়েছেন। ওই সময় তার বাবা-মা, ভাই ও প্রতিপক্ষের তিনজন আহত হন।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে যশোর সদরের ডাকাতিয়া গ্রামের দক্ষিণপাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত চঞ্চল গাজী (৩০) ডাকাতিয়া গ্রামের মধু গাজীর ছেলে।

পুলিশ বলছে, ইজিবাইক চুরি নিয়ে প্রতিপক্ষের পূর্ব থেকেই শত্রুতা ছিল। এ ঘটনায় তিনজনকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকালে চঞ্চলের বাড়ির সামনে প্রতিপক্ষ রবিউল গাজী (৪৫) একজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। ওই সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে চঞ্চলের বাবা মধু গাজী তাকে বাড়ির সামনে মাদক বিক্রি করতে নিষেধ এবং তার ছেলের চুরি যাওয়া ইজিবাইক ফিরিয়ে দিতে বলেন। ওই সময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির একপর্যায়ে মধু গাজী রাস্তায় পড়ে যান। তখন পাশে থাকা একটি কাঠের টুকরো, যাতে লোহার পেরেক লাগানো ছিল- সেটি দিয়ে রবিউল আঘাত করতে থাকেন।

এদিকে খবর পেয়ে বাড়ি থেকে চঞ্চল, তার ভাই তুহিন ও মা হাসিনা বেরিয়ে আসেন। অপরদিকে রবিউল, তার ভাই বেল্লাল, রবিউলের ছেলে মুন্না, রবিউলের সাগরেদ সাদ্দাম ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। ওই সময় দুইপক্ষের সংঘর্ষে চঞ্চলসহ সাতজন কমবেশি আহত হন।

আহতদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চঞ্চল গাজী মারা যান।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার তাহমিদ হাসান জানিয়েছেন, আহত চারজনকে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে চঞ্চলের মৃত্যু হয়েছে। তার পিঠ, উরু, নিতম্বসহ একাধিক স্থানে ছুরিকাঘাতে জখম করা হয়েছে।

এদিকে চঞ্চলের মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

নিহতের মা হাসিনা বেগম, স্ত্রী মীমসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিহত চঞ্চলের চার মাস বয়সি একমাত্র সন্তান আয়ানকে কোলে নিয়ে বিলাপ করছিলেন তারা।

চঞ্চলের মা বলেন, মাস দুয়েক আগে তার ছেলের ইজিবাইকটি চুরি করে বিক্রি করে দেয় জামাল গাজীর ছেলে রবিউল ও বেল্লাল। তারা এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা করে। ঘটনার সময়ও রবিউল একজনের কাছে ইয়াবা বিক্রি করছিল। চঞ্চলের বাবা নিষেধ করায় তারা (রবিউল, তার ভাই, বউ, সন্তান এবং তার পার্টনার সাদ্দাম) তাকে মেরে মাটিতে ফেলে পেরেকযুক্ত কাঠের বাটাম দিয়ে মারতে থাকে। ওই সময় ছেলে চঞ্চল, তুহিন ও আমি ঠেকাতে গেলে আমাদের এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। আমার ছেলে ও তার বাপ এতে গুরুতর জখম হয়। একপর্যায়ে তাদের হাত থেকে বাঁচতে বড় ছেলে পাশের হালিমার বাড়িতে পালায়। কিন্তু রবিউল, বেল্লাল, সাদ্দামসহ ওরা ৫-৭ জন সেখানে গিয়েও তাকে কোপাতে থাকে।

অবশ্য তাদের অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রবিউল গাজী বলেছেন, ইন্টারনেট ব্যবসায়ী পিয়াসের সঙ্গে তিনি লাইনের সমস্যা নিয়ে কথা বলছিলেন। ওই সময় মধু গাজী এসে তাকে গালিগালাজ ও চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করে। এরপর গোলযোগের সূত্রপাত হয়। তিনি প্রতিবেশী সাদ্দামের বাড়িতে ঢুকে পড়েন। তখন সাদ্দাম ধারালো অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে মারপিটে জড়িয়ে পড়ে। তিনি অজ্ঞান হয়ে যান, আর কিছুই জানেন না।

খবর পেয়ে কাশিমপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ইকবাল হোসেন ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি বলেন, রবিউল ও তার ভাই এবং সাদ্দাম নামে ওই যুবকের বিরুদ্ধে এলাকায় মাদক ব্যবসা এবং ইজিবাইক, ভ্যান চুরির অভিযোগ রয়েছে। ওই চক্র প্রভাবশালী হওয়ায় কেউই তাদের বিরুদ্ধে যেতে চায় না। মাদকসহ বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে আটক, এলাকায় সালিশ হলেও তারা ড্যামকেয়ার। এর আগে তারা নূরপুরে থাকত, একই কারণে সেখানকার লোকজন তাদের উচ্ছেদ করেছে বলে স্থানীয় লোকজন জানান।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেখানে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে বলেও স্থানীয়রা জানান।

জানতে চাইলে যশোর কোতোয়ালি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রবিউল ও তার ছেলে মুন্না এবং ভাই বেল্লালকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

সবুজদেশ/এসএএস