ঢাকা ০৪:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়ায় যাওয়া হলো না মেহেদীর

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:৫৪:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ জুলাই ২০২৩
  • ১৬০ বার পড়া হয়েছে।

শোয়াইব উদ্দীনঃ

ভিসা পাসর্পোট প্রস্তুত ছিলো। তিন দিন পরেই মালয়েশিয়ায় চলে যাবেন মেহেদী। তার আর মালয়েশিায়ায় যাওয়া হলো না। কিভাবে মারলো আমার ছেলেকে। এভাবেই আহাজারি করে বলছিলেন গত রাতে প্রতিবেশি যুবকের ছুরিকাঘাতে খুন হওয়া মেহেদীর মা সাবিয়া বেগম। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ফয়লা মাস্টার পাড়া এলাকায়। নিহত মেহেদীর স্ত্রী আকলিমা আক্তারের কোলে রয়েছে ৫ মাসের একটি শিশু সন্তান। তার চোখে মুখে হতাশার ছাপ। সব কিছুই ঠিক ঠাক ছিলো। আচমকা অন্ধার নেমে আসলো একটি পরিবারে। মাটি হলো মেহেদীর স্বাবলম্বী হয়ে উঠার স্বপ্ন। মেহেদী বলরামপুর স্ট্যান্ডে গাড়ির স্টাটারি করতেন। সেখানকার রোজগার দিয়ে সংসার তেমন চলছিলো না তার। তাই পরিবারে সচ্ছলতা আনতে যেতে চেয়ে ছিলেন বিদেশে। কিন্তু বিদেশে তার যাওয়া হলো না।

এ ঘটনায় পুলিশ রাতেই ঘাতক আকরাম হোসেনকে আটক করেছে। তবে তার ভাই সাদ্দাম হোসেন পলাতক রয়েছে। আটক আকরাম হোসেন একই এলাকার তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে।

স্থানীয়রা জানায়, রাতে বাড়িতে ভাত খেয়ে দোকানে যাচ্ছিল মেহেদী হাসান। যাওয়ার পথে প্রতিবেশী আকরাম ঘরের মধ্যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে সেখানে গিয়ে প্রতিবাদ জানায় মেহেদী। এ সময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আকরামের বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে মেহেদী। আকরাম তাকে ঘরের মধ্যে থেকে আনা ছুরি দিয়ে গলা, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে। এ সময় তার ভাই সাদ্দাম হোসেনও ছিল। সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মেহেদী হাসান। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

মেহেদীর মা সাবিয়া খাতুন জানান, রাতে বাড়িতে ফোন করে ডেকে নিয়ে আমার ছেলেকে আকরাম ও তার ভাই সাদ্দাম মিলে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তিন দিন পরেই মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা ছিলো আমার ছেলের। তিনি আরো জানান, তাদের সাথে কোন শত্রুতা ছিলো না আমাদের। আমার বড় জামাই ধার দেনা করে বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রায় তিন লক্ষ টাকা দিয়েছেন। বিদেশ যেতে দেবে না বলেই আমার ছেলেকে খুন করেছে। আমি এখন আইনির আশ্রয় নেবো। তার কঠিন শাস্তি চাই। যাতে আর কনো মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়।

নিহত মেহেদীর স্ত্রী আকলিমা আক্তার জানান, গত রাতে ভাত খেয়ে দোকানে যাওয়ার জন্য বের হয় মেহদী। এর মধ্যে তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে সাদ্দাম ও তার ভাই আকরাম ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এসময় তাদের বাড়িতে আকরামের বোনও ছিলো। পরে আকরামের বোন ফোন দিয়ে বলে এই ঘটনা। আমরা যেয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছে। আমি এই ঘটনার কঠিন শাস্তি দাবি জানাচ্ছি। আমার ৫ মাসের শিশু সন্তানকে তারা কেন এতিম করলো।

কালীগঞ্জ থানার ওসি মাহাবুবুর রহমান জানান, তুচ্ছ ঘটনায় মেহেদী হাসান নামে এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে। খবর পেয়ে রাতেই অভিযুক্ত আকরাম হোসেনকে আটক করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে কি কারণে হত্যা করা হয়েছে তদন্তের পর বেরিয়ে আসবে।

Tag :

মালয়েশিয়ায় যাওয়া হলো না মেহেদীর

Update Time : ১১:৫৪:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ জুলাই ২০২৩

শোয়াইব উদ্দীনঃ

ভিসা পাসর্পোট প্রস্তুত ছিলো। তিন দিন পরেই মালয়েশিয়ায় চলে যাবেন মেহেদী। তার আর মালয়েশিায়ায় যাওয়া হলো না। কিভাবে মারলো আমার ছেলেকে। এভাবেই আহাজারি করে বলছিলেন গত রাতে প্রতিবেশি যুবকের ছুরিকাঘাতে খুন হওয়া মেহেদীর মা সাবিয়া বেগম। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ফয়লা মাস্টার পাড়া এলাকায়। নিহত মেহেদীর স্ত্রী আকলিমা আক্তারের কোলে রয়েছে ৫ মাসের একটি শিশু সন্তান। তার চোখে মুখে হতাশার ছাপ। সব কিছুই ঠিক ঠাক ছিলো। আচমকা অন্ধার নেমে আসলো একটি পরিবারে। মাটি হলো মেহেদীর স্বাবলম্বী হয়ে উঠার স্বপ্ন। মেহেদী বলরামপুর স্ট্যান্ডে গাড়ির স্টাটারি করতেন। সেখানকার রোজগার দিয়ে সংসার তেমন চলছিলো না তার। তাই পরিবারে সচ্ছলতা আনতে যেতে চেয়ে ছিলেন বিদেশে। কিন্তু বিদেশে তার যাওয়া হলো না।

এ ঘটনায় পুলিশ রাতেই ঘাতক আকরাম হোসেনকে আটক করেছে। তবে তার ভাই সাদ্দাম হোসেন পলাতক রয়েছে। আটক আকরাম হোসেন একই এলাকার তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে।

স্থানীয়রা জানায়, রাতে বাড়িতে ভাত খেয়ে দোকানে যাচ্ছিল মেহেদী হাসান। যাওয়ার পথে প্রতিবেশী আকরাম ঘরের মধ্যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে সেখানে গিয়ে প্রতিবাদ জানায় মেহেদী। এ সময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আকরামের বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে মেহেদী। আকরাম তাকে ঘরের মধ্যে থেকে আনা ছুরি দিয়ে গলা, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে। এ সময় তার ভাই সাদ্দাম হোসেনও ছিল। সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে মেহেদী হাসান। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

মেহেদীর মা সাবিয়া খাতুন জানান, রাতে বাড়িতে ফোন করে ডেকে নিয়ে আমার ছেলেকে আকরাম ও তার ভাই সাদ্দাম মিলে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তিন দিন পরেই মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা ছিলো আমার ছেলের। তিনি আরো জানান, তাদের সাথে কোন শত্রুতা ছিলো না আমাদের। আমার বড় জামাই ধার দেনা করে বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রায় তিন লক্ষ টাকা দিয়েছেন। বিদেশ যেতে দেবে না বলেই আমার ছেলেকে খুন করেছে। আমি এখন আইনির আশ্রয় নেবো। তার কঠিন শাস্তি চাই। যাতে আর কনো মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়।

নিহত মেহেদীর স্ত্রী আকলিমা আক্তার জানান, গত রাতে ভাত খেয়ে দোকানে যাওয়ার জন্য বের হয় মেহদী। এর মধ্যে তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে সাদ্দাম ও তার ভাই আকরাম ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। এসময় তাদের বাড়িতে আকরামের বোনও ছিলো। পরে আকরামের বোন ফোন দিয়ে বলে এই ঘটনা। আমরা যেয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছে। আমি এই ঘটনার কঠিন শাস্তি দাবি জানাচ্ছি। আমার ৫ মাসের শিশু সন্তানকে তারা কেন এতিম করলো।

কালীগঞ্জ থানার ওসি মাহাবুবুর রহমান জানান, তুচ্ছ ঘটনায় মেহেদী হাসান নামে এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে। খবর পেয়ে রাতেই অভিযুক্ত আকরাম হোসেনকে আটক করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে কি কারণে হত্যা করা হয়েছে তদন্তের পর বেরিয়ে আসবে।