মাস্টার্স পাশ করে সফল মুরগীর খামারি কালীগঞ্জের শারমিন (ভিডিও)
শাহরিয়ার আলম সোহাগঃ
নিজ বাড়িতে কখনো মুরগীর খাদ্য দিচ্ছেন, কখনো গরুর খাদ্য দিচ্ছেন আবার কখনো নিজের ক্ষেতে কাজ করছেন। শখ থেকেই শুরু মুরগী পালন। এখন বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেছেন মুরগী পালনসহ বিভিন্ন কাজ। মাস্টার্স পাশ করেও তিনি চাকরি করতে চাননি। এখন তিনি সফল মুরগী খামার তৈরি করে। বলছিলাম ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বলরামপুর গ্রামের শারমিন সুলতানা কনার কথা।
শারমিনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ বছর আগে এইচএসসিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় বেকার ছেলের সাথে বিয়ে হয়। এরপর মালয়েশিয়া যান স্বামী রাজীব হোসেন। এই দম্পতির একটি দীবা মেহজাবিন নামের একটি কন্যা সন্তান আছে। সে সলিমুন্নেছা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী। সংসার সামলিয়ে পড়ালেখাও চালিয়ে যান তিনি। যশোর এম.এম কলেজ থেকে ইতিহাস বিভাগ নিয়ে মাস্টার্স শেষ করেছেন ২০১৭ সালে। এরপর কোন জায়গায় চাকরির জন্য আবেদন করেননি। কারণ তিনি নিজে কিছু করবেন এটাই ছিল স্বিদ্ধান্ত। প্রথমে শখ থাকলেও সেটা এখন বাণিজ্যিকভাবে রুপ নিয়েছে। এরমধ্যে তিনি কালীগঞ্জের সেরা ৫ নারী উদ্যোক্তার পুরস্কার জয়লাভ করেছেন। বেসরকারি এনজিও হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড প্রতিবছর নারীদের এই সম্মাননা প্রদান করেন।
তিনি জানান, শখের বসে ৫০টি পাকিস্থানি ফাওমি মুরগী পালন শুরু করেন। যশোর হাঁস-মুরগি খামার থেকে প্রথম তিনি এই বাচ্চা সংগ্রহ করেন। নিজের জমানো টাকা দিয়েই এই বাচ্চা ক্রয় করেন তিনি। এই হাঁস-মুরগি পালনের প্রাথমিক শিক্ষা তিনি অনলাইন থেকে নিয়েছেন। পরে কালীগঞ্জ প্রাণী সম্পদ অফিস থেকেও তিনি পরামর্শ গ্রহণ করেছেন।
সরেজমিনে শারমিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, টিন শেডের দুইটি মুরগী খামার। একটিতে ছোট মুরগী এবং অন্যটিতে বড় মুরগী রাখা। বর্তমানে দুই খামারে প্রায় ২ হাজার মুরগী নিয়ে ফার্ম করেছেন তিনি। এছাড়া তিনি বাড়ির পাশের পতিত জমিতে বিভিন্ন সবজির চাষসহ কচু লাগিয়েছেন। যেখানে কোন প্রকার রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। মুরগী পালনের পাশাপাশি তিনি ৪টি গরুও পালন করছেন।
শারমিন সুলতানা কনা জানান, ২০১৮ সাল থেকে শখের বসে মুরগী পালন শুরু করি। এখন সেটা বাণিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আমার মুরগী ফার্মে বর্তমানে প্রায় ২ হাজার মুরগী আছে। আমার স্বামী আমাকে অনেক সহযোগিতা করে। এই মুরগী পালন শুরু করার পর আমার স্বামী মাঝে একবার ছুটিতে আসে। এরপর সেও অনেক অনুপ্রাণিত হয়। তারপর ঘুরে গিয়ে আবার চলে আসে দেশে। এখন আমার সাথেই এই কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
তিনি আরো জানান, মুরগী থেকে লাভের একটি অংশ দিয়ে ৪টি গরু কিনেছি। এছাড়া পতিত জমিতেও বিভিন্ন সবজির চাষ করেছি।
শারমিন সুলতানা কনার স্বামী রাজীব হোসেন জানান, মালয়েশিয়া থেকে ছুটিতে এসে দেখি কনা মুরগী পালনে বেশ উৎসাহী। তাকে ৫০ টা মুরগী কিনে দিই। এরপর আমিও একবারে চলে আসি দেশে। বর্তমানে কনার সাথে আমিও কাজ করছি। মাসে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা উপার্জন করি। যা দিয়ে আমাদের সংসারের ৬ সদস্যের জীবন যাপন।
বেসরকারি জাপান ভিত্তিক সংস্থা হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের ডেভোলপমেন্ট প্রোগ্রাম অফিসার এস.এম শাহিন হোসেন জানান, শারমিন সুলতানা কনা নারীদের পুষ্টি উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় তাকে এবার হাঙ্গার ফ্রি প্রাইজ দেওয়া হয়েছে। এই এলাকার নারীদের উন্নয়নেও তিনি বেশ ভূমিকা পালন করছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ড. এ.এস.এম আতিকুজ্জামান বলেন, শারমিন পাকিস্থানি মুরগীর একটি ফার্ম তৈরি করেছেন। উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে তাকে যাবতীয় পরামর্শ প্রদান করা হয়।