ঢাকা ০৫:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমারে সংঘর্ষ, গুলি এসে পড়ছে টেকনাফে

সবুজদেশ ডেস্ক:

ছবি সংগৃহীত-

 

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) চলমান যুদ্ধ প্রায় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চলছে। গেল কয়েক দিনে মংডু শহরের আশপাশে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র আরাকান আর্মির সংঘর্ষ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এতে ব্যবহৃত মর্টার শেল, শক্তিশালী বোমা, গ্রেনেড ও গুলির তীব্র শব্দ আবারও শুনছেন টেকনাফ সীমান্ত এলাকার লোকজন। সেখানে ছোড়া গুলি সরাসরি এসে পড়ছে টেকনাফে। এতে নতুন করে আবারও আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়ার বাসিন্দা আব্দুর রহিমের বাড়ির আঙিনায় গুলিটি উড়ে এলেও তাতে কেউ আহত হয়নি। যদিও সীমান্ত পেরিয়ে গুলি প্রবেশের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।

বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সীমান্ত এলাকার মানুষের তথ্য অনুযায়ী, রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। দুই পক্ষই একে অন্যকে লক্ষ্য করে টানা গুলি ছুড়ছে। এছাড়া ছোড়া হচ্ছে মর্টারশেল ও গ্রেনেড।

মিয়ানমারের ভেতরের এই সংঘর্ষের রেশ লাগছে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশেও। যুদ্ধের তীব্রতা বাড়লেই বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছে সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলো। এর আগেও মিয়ানমারে যুদ্ধের রেশ হিসেবে বাংলাদেশে এসেছে মর্টার শেল ও গুলি। ফলে ওপারে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়লে এপারে বাড়ে আতঙ্ক।

গত কয়েক মাস ধরে এই পরিস্থিতির সঙ্গে লড়ছেন কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত এলাকার মানুষ। স্থানীয়রা বলছে, শুক্রবার রাতেও থেমে থেমে বিকট শব্দ ভেসে আসে ওপার থেকে, যা টানা শনিবার দুপুর পর্যন্ত চলে।

এর মধ্যে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হ্নীলা ইউনিয়নের একটি বাড়ির আঙিনায় একটি গুলি এসে পড়ে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন হ্নীলার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোহাম্মদ আলী।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হালিম বলেন, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারে দুই গ্রুপের মধ্যে যুদ্ধ চলমান রয়েছে। এতে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) ভোররাতে বোমার বিকট বিস্ফোরণের শব্দে আমার বাড়ি কেঁপে ওঠে। সমস্যা মিয়ানমারের হলেও টেকনাফের বাসিন্দাদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয়রা আর্থিক ও মানসিকভাবে  ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরি।

মিয়ানমার থেকে আসা বিস্ফোরণের শব্দের বিষয়ে শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মনির আহমেদ বলেন, থেমে থেমে ভারী গোলার শব্দ এপারে শোনা যাচ্ছে। এ কারণে সীমান্ত এলাকায় অযথা না যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

শুক্রবার রাতে বিস্ফোরণের শব্দে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জানিয়ে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শরিফ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সীমান্ত এলাকার মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এভাবে আর কতদিন চলবে?

এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বিজিবির ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। তবে  সীমান্ত দিয়ে যেন অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে রয়েছি।

সীমান্তে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে বলে মনে করছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নেজামী। তিনি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সুযোগে যাতে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে, সেজন্য সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

সবুজদেশ/এসইউ

About Author Information
আপডেট সময় : ০৮:৪০:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
৭ Time View

মিয়ানমারে সংঘর্ষ, গুলি এসে পড়ছে টেকনাফে

আপডেট সময় : ০৮:৪০:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

 

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) চলমান যুদ্ধ প্রায় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে চলছে। গেল কয়েক দিনে মংডু শহরের আশপাশে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র আরাকান আর্মির সংঘর্ষ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এতে ব্যবহৃত মর্টার শেল, শক্তিশালী বোমা, গ্রেনেড ও গুলির তীব্র শব্দ আবারও শুনছেন টেকনাফ সীমান্ত এলাকার লোকজন। সেখানে ছোড়া গুলি সরাসরি এসে পড়ছে টেকনাফে। এতে নতুন করে আবারও আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়ার বাসিন্দা আব্দুর রহিমের বাড়ির আঙিনায় গুলিটি উড়ে এলেও তাতে কেউ আহত হয়নি। যদিও সীমান্ত পেরিয়ে গুলি প্রবেশের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।

বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সীমান্ত এলাকার মানুষের তথ্য অনুযায়ী, রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। দুই পক্ষই একে অন্যকে লক্ষ্য করে টানা গুলি ছুড়ছে। এছাড়া ছোড়া হচ্ছে মর্টারশেল ও গ্রেনেড।

মিয়ানমারের ভেতরের এই সংঘর্ষের রেশ লাগছে সীমান্তবর্তী বাংলাদেশেও। যুদ্ধের তীব্রতা বাড়লেই বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠছে সীমান্ত লাগোয়া গ্রামগুলো। এর আগেও মিয়ানমারে যুদ্ধের রেশ হিসেবে বাংলাদেশে এসেছে মর্টার শেল ও গুলি। ফলে ওপারে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়লে এপারে বাড়ে আতঙ্ক।

গত কয়েক মাস ধরে এই পরিস্থিতির সঙ্গে লড়ছেন কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত এলাকার মানুষ। স্থানীয়রা বলছে, শুক্রবার রাতেও থেমে থেমে বিকট শব্দ ভেসে আসে ওপার থেকে, যা টানা শনিবার দুপুর পর্যন্ত চলে।

এর মধ্যে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হ্নীলা ইউনিয়নের একটি বাড়ির আঙিনায় একটি গুলি এসে পড়ে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন হ্নীলার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোহাম্মদ আলী।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হালিম বলেন, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারে দুই গ্রুপের মধ্যে যুদ্ধ চলমান রয়েছে। এতে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) ভোররাতে বোমার বিকট বিস্ফোরণের শব্দে আমার বাড়ি কেঁপে ওঠে। সমস্যা মিয়ানমারের হলেও টেকনাফের বাসিন্দাদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয়রা আর্থিক ও মানসিকভাবে  ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া খুবই জরুরি।

মিয়ানমার থেকে আসা বিস্ফোরণের শব্দের বিষয়ে শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মনির আহমেদ বলেন, থেমে থেমে ভারী গোলার শব্দ এপারে শোনা যাচ্ছে। এ কারণে সীমান্ত এলাকায় অযথা না যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

শুক্রবার রাতে বিস্ফোরণের শব্দে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জানিয়ে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শরিফ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সীমান্ত এলাকার মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এভাবে আর কতদিন চলবে?

এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বিজিবির ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। তবে  সীমান্ত দিয়ে যেন অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে রয়েছি।

সীমান্তে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে বলে মনে করছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নেজামী। তিনি বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সুযোগে যাতে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে, সেজন্য সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

সবুজদেশ/এসইউ