সবুজদেশ ডেক্সঃ মুক্তিযুদ্ধে সবকিছু হারিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছিলেন ঝিনাইদহের ২ নারী জয়গুন নেছা ও ফাতেমা বেগম। কিন্তু পেয়েছিলেন না তাদের স্বীকৃতি। যুদ্ধের এতবছর পরও তাদের যুদ্ধ করতে হয়েছে সমাজের বিভিন্ন মানুষের সাথে। ঘুরতে হয়েছে মানুষের দ্বারে দ্বারে। অবহেলিত হয়েছেন সমাজের প্রভাবশালীদের কাছে। মুক্তিযুদ্ধের পর যেন আরএকটি যুদ্ধ জয় করে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পেলেন ঝিনাইদহের দুই নারী। তারা হলেন-ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধা জয়গুন নেছা ও কালিগঞ্জ উপজেলার মোল্লাকোয়া গ্রামের ফাতেমা বেগম।
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের হাতে নির্যাতিত হওয়ায় জয়গুন নেছা ও ফাতেমা বেগমসহ ১০ জন বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে সম্প্রতি গেজেট জারি করেছে সরকার। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৬০ তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বীরাঙ্গনারা এ স্বীকৃতি পেলেন। এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া বীরাঙ্গনার সংখ্যা হল ২৭১ জন।
স্বীকৃতি পাওয়া বীরাঙ্গনা জয়গুন নেছা জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বামী হাবিবুর রহমান ও সতিনের মেয়ে হাসিনা খাতুনকে হারিয়েছেন ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চনগর পাড়ার বীরাঙ্গনা জয়গুন নেছা। পাক সেনারা তাদের ধরে নিয়ে গিয়ে আর ফেরৎ দেয়নি। নিজের আর পরিবারের সদস্যদের উপর পাক বাহিনীর পাশবিক নির্যাতন ও বর্বরতার সেই নিকষকালো মুহুর্তগুলোর কথা মনে হলে এখনো গাঁ শিউরে ওঠে তার। শরীরে দগদগে সেই ভয়াল স্মৃতি চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা প্রমানে এই বৃদ্ধ বয়সে সার্টিফিকেট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বিভিন্ন সময় ছুটেছেন এ অফিস থেকে সে অফিস। অবশেষে এ বছর সরকার তার স্বীকৃতি প্রদাণ করছেনে।
তিনি বলেন, এতদিন পর হলেও যে আমি বীরাঙ্গনার সম্মান পেয়েছি। আমি এখন মারা গেলেও শান্তি পাব।
বীরাঙ্গনা ফাতেমা বেগম জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার বানুড়িয়া গ্রামের স্বামী সিরাজুল ইসলামের বাড়ি থেকে পিতার বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার চন্ডিপাড়া গ্রামে যাচ্ছিলেন তিনি। পথে কালীগঞ্জ উপজেলার মাহমুদপুর এলাকা থেকে পাক-হানাদার বাহিনীরা তাকে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে কয়েকদিন আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালায়। সেখান থেকে ফিরে আসলেও স্বামী সিরাজুল তাকে গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে কালীগঞ্জ উপজেলার মোল্লাকোয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শুকুর আলী তাকে বিয়ে করেন। দীর্ঘদিন ধরে তার স্বীকৃতি দাবি করে বিভিন্ন মহলের ঘুরেছেন। সমাজের কর্তাদের কাছে গেলে তারা অবহেলা করেছেন। অবশেষে স্বীকৃতি পাওয়ায় আবেগআপ্লুত হয়ে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করেন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here