ঢাকা ০৭:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৃত্যুর ভয়ও উপেক্ষিত চিকিৎসকদের কাছে

Reporter Name

সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের থাবায় বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে এই ভাইরাস। দিন দিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। করোনা প্রতিরোধে প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা রয়েছেন মানুষের পাশে। যারা সরাসরি করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে এসে নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসা সেবার দায়িত্ব পালন করছেন। করোনা সন্দেহজনক রোগী বা কেউ উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে তার নমুনা সংগ্রহ করছেন।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ জেলার সাতটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা পরীক্ষায় নমুনা সংগ্রহ করতে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। করোনা উপসর্গ দেখা দিলে বা কেউ মারা গেলেই ছুটে যাচ্ছেন নমুনা সংগ্রহ করতে। পরিবারের কথা না ভেবে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগের ল্যাব টেকনোলোজিস্ট রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দায়িত্ব পালন করছেন করোনার উপসর্গ থাকা ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহের। পরিবার করোনা আতঙ্কে থাকলেও দায়িত্ব পালনে অসম্মতি জানায়নি তার পরিবার।

রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, সদর হাসপাতালের তিনজন নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করছি। ভয়ে থাকি, তারপরও দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিবারও আতঙ্কিত তবে অসম্মতি জানায়নি দায়িত্ব পালনে। এখন পর্যন্ত ২০-২৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছি। নমুনা সংগ্রহের পর গোসল করি। এরপর বাসায় ফিরেও পুনরায় সাবান দিয়ে গোসল করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হই। ভয়ে আছি, তবুও পিছু হঠলে হবে না।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা সংগ্রহের জন্য গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম। টিমে রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবুল কাসেম, মহিবুর রহমান, স্বাস্থ্য সহকারী মেহেদী হাসান, ফারুক হাসান ও অফিস সহায়ক সাইফুল্লা হাবীব।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী (মেডিকেল টেকনোলজিস্ট) মো. ফারুক হাসান বলেন, সদর উপজেলার মধ্যে কোথাও করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই বা কারও মৃত্যু ঘটলেই ডাক পড়ে আমাদের। এখন পর্যন্ত ৩৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছি। তার মধ্যে ২৪জনের নমুনা সংগ্রহে আমি ছিলাম। এর মধ্যে দুইজন করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তি।

তিনি বলেন, সরকারি চাকরি করি, তাছাড়া মানুষের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতাও রয়েছে। জাতীয় এ দুর্যোগের সময় মানুষের জন্য আমাদের কাজ করে যেতে হবে। প্রথম দিকে পিপিই দেয়া হয়নি। তখন একটু ভয় লাগতো। তবে এখন পিপিই সরবরাহ করায় এখন আর ভয় লাগে না। সতর্কতা অবলম্বন করেই নমুনা সংগ্রহ করে যাচ্ছি।

এভাবেই জেলার সাতটি উপজেলায় স্বাস্থ্যকর্মীরা একযোগে মাঠে নমুনা সংগ্রহের কাজ করছেন। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের করোনা বিষয়ক মুখপাত্র ডা. জয়ন্ত কুমার জানান, বুধবার পর্যন্ত সাতক্ষীরা থেকে ৪৩৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পাওয়া গেছে ২৬৬ জনের। এর মধ্যে দুইজনের শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে।

নমুনা সংগ্রহকারী এসব স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন সাফায়াত বলেন, মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা নমুনা সংগ্রহ করার কাজ করছেন। সাতটি উপজেলায় একটি করে করোনা পরীক্ষায় নমুনা সংগ্রহকারী টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের মাঝে পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে। তারা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে কাজটি করছেন। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ।

তিনি বলেন, সরকার আলাদাভাবে নমুনা সংগ্রহকারীদের নামের তালিকা নিয়েছে। সাতটি উপজেলা ও জেলা সদর হাসপাতাল থেকে নমুনা সংগ্রহকারীদের তালিকা আমি পাঠিয়েছি। তাদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়া উচিত।

About Author Information
আপডেট সময় : ০২:০২:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ মে ২০২০
৩১৮ Time View

মৃত্যুর ভয়ও উপেক্ষিত চিকিৎসকদের কাছে

আপডেট সময় : ০২:০২:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ মে ২০২০

সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের থাবায় বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে এই ভাইরাস। দিন দিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। করোনা প্রতিরোধে প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা রয়েছেন মানুষের পাশে। যারা সরাসরি করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে এসে নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসা সেবার দায়িত্ব পালন করছেন। করোনা সন্দেহজনক রোগী বা কেউ উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে তার নমুনা সংগ্রহ করছেন।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ জেলার সাতটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা পরীক্ষায় নমুনা সংগ্রহ করতে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। করোনা উপসর্গ দেখা দিলে বা কেউ মারা গেলেই ছুটে যাচ্ছেন নমুনা সংগ্রহ করতে। পরিবারের কথা না ভেবে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন এসব স্বাস্থ্যকর্মীরা।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগের ল্যাব টেকনোলোজিস্ট রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দায়িত্ব পালন করছেন করোনার উপসর্গ থাকা ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহের। পরিবার করোনা আতঙ্কে থাকলেও দায়িত্ব পালনে অসম্মতি জানায়নি তার পরিবার।

রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, সদর হাসপাতালের তিনজন নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করছি। ভয়ে থাকি, তারপরও দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিবারও আতঙ্কিত তবে অসম্মতি জানায়নি দায়িত্ব পালনে। এখন পর্যন্ত ২০-২৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছি। নমুনা সংগ্রহের পর গোসল করি। এরপর বাসায় ফিরেও পুনরায় সাবান দিয়ে গোসল করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হই। ভয়ে আছি, তবুও পিছু হঠলে হবে না।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা সংগ্রহের জন্য গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম। টিমে রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবুল কাসেম, মহিবুর রহমান, স্বাস্থ্য সহকারী মেহেদী হাসান, ফারুক হাসান ও অফিস সহায়ক সাইফুল্লা হাবীব।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী (মেডিকেল টেকনোলজিস্ট) মো. ফারুক হাসান বলেন, সদর উপজেলার মধ্যে কোথাও করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই বা কারও মৃত্যু ঘটলেই ডাক পড়ে আমাদের। এখন পর্যন্ত ৩৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছি। তার মধ্যে ২৪জনের নমুনা সংগ্রহে আমি ছিলাম। এর মধ্যে দুইজন করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তি।

তিনি বলেন, সরকারি চাকরি করি, তাছাড়া মানুষের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতাও রয়েছে। জাতীয় এ দুর্যোগের সময় মানুষের জন্য আমাদের কাজ করে যেতে হবে। প্রথম দিকে পিপিই দেয়া হয়নি। তখন একটু ভয় লাগতো। তবে এখন পিপিই সরবরাহ করায় এখন আর ভয় লাগে না। সতর্কতা অবলম্বন করেই নমুনা সংগ্রহ করে যাচ্ছি।

এভাবেই জেলার সাতটি উপজেলায় স্বাস্থ্যকর্মীরা একযোগে মাঠে নমুনা সংগ্রহের কাজ করছেন। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের করোনা বিষয়ক মুখপাত্র ডা. জয়ন্ত কুমার জানান, বুধবার পর্যন্ত সাতক্ষীরা থেকে ৪৩৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পাওয়া গেছে ২৬৬ জনের। এর মধ্যে দুইজনের শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে।

নমুনা সংগ্রহকারী এসব স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন সাফায়াত বলেন, মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা নমুনা সংগ্রহ করার কাজ করছেন। সাতটি উপজেলায় একটি করে করোনা পরীক্ষায় নমুনা সংগ্রহকারী টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের মাঝে পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে। তারা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে কাজটি করছেন। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ।

তিনি বলেন, সরকার আলাদাভাবে নমুনা সংগ্রহকারীদের নামের তালিকা নিয়েছে। সাতটি উপজেলা ও জেলা সদর হাসপাতাল থেকে নমুনা সংগ্রহকারীদের তালিকা আমি পাঠিয়েছি। তাদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়া উচিত।