ঢাকা ০৮:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেজর ডালিমের স্ত্রীকে কে এবং কারা অপহরণ করেছিল?

সবুজদেশ ডেস্ক:

ছবি সংগৃহীত-

 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মেজর ডালিম রবিবার দিবাগত রাতে প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে লাইভ টকশোতে অংশগ্রহণ করেন। টকশোতে তিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পেছনের ইতিহাস তুলে ধরেন। বিদেশে নির্বাসিত আলোচিত এই সাবেক সামরিক কর্মকর্তা নানা ঘটনার কথা উল্লেখ করেন।

এসময় মেজর ডালিম তার স্ত্রীর অপহরণের প্রসঙ্গে ইলিয়াসের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “এটা একটা মজার ঘটনা। আমি আমার বইতে এটির কথা উল্লেখ করেছি। আমার এক খালাতো বোন, পারভিনা, যার বিয়ের আয়োজন আমি এবং নিম্নি কর্নেল অলিউল্লা করেছিলেন, যিনি আমাদের চেয়ে জুনিয়র ছিলেন। বিয়ে ও অনুষ্ঠান লেডিস ক্লাবে হবে। দু’পক্ষই আমাদের পরিচিত ছিলো। সব আয়োজন আমাদের ওপর ছিল। এই আয়োজনের মধ্যে ২-৩ হাজার লোককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো। বিয়ের আসর চলছিল, তখন আমার একমাত্র শালা বাপ্পি, যিনি ম্যাগগিল ইউনিভার্সিটিতে পড়তেন, ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। সে অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিল। আমি ও নিম্নি দুই পক্ষের হোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম।

তিনি আরও বলেন, “বাপ্পি ছেলেদের বসার জায়গায় বসেছিল, তখন কিছু ছেলে তার চুল টানতে থাকে। প্রথমবারে বাপ্পি কিছু বলেনি, কিন্তু পরেরবার টানার পর সে পেছনে তাকিয়ে দেখে একজন ছেলে। তারপর সে বলেছিল, ‘তুমি চুল টানছো?’ তখন ওই ছেলে বলেছিল, ‘হ্যাঁ, আমরা দেখছিলাম, তোমার চুল এত সুন্দর, এটি কি পরচুলা না আসল?’ বাপ্পি বলেছিল, ‘বেয়াদব ছেলে, তুমি আর এখানে বসবে না।’ এরপর ছেলেগুলো চলে যায়।

তারপর মেজর ডালিমের বিয়ের অনুষ্ঠানে ঘটনার চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। কিছুক্ষণ পর রেডক্রসের দুটি মাইক্রোবাস ও একটি গাড়ি এসে থামে এবং সাদা পোশাকধারী লোকেরা নামতে থাকে। গাজী গোলাম মোস্তফা, যিনি তখন আওয়ামী লীগ নেতা এবং রেডক্রসের চেয়ারম্যান ছিলেন, গাড়ি থেকে বেরিয়ে চিৎকার করতে শুরু করেন, “মেজর ডালিম কোথায়? কোথায় মেজর ডালিম?” এরপর তার সাথে ৮-১০ জন সশস্ত্র ব্যক্তি উপস্থিত ছিলো।

গাজী গোলাম মোস্তফা মেজর ডালিমকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান, তবে এর মধ্যে মেজর ডালিম তাকে বাধা দেন এবং বলেন, “আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন জানি না, কিন্তু হাজার হাজার মানুষ আমাদেরকে দেখছে, আপনি যা করছেন তা আপনার জন্য ভালো হবে না।” এরপর গাজী গোলাম মোস্তফা কিছুটা ভয় পেয়ে যান।

মেজর ডালিম বলেন, “তখন ঢাকা শহরে গাজী গোলাম মোস্তফা ছিল মুজিবের সবচেয়ে বড় লাঠিয়াল সরদার। তাকে রেডক্রসের চেয়ারম্যান বানানো হয়েছিল, যাতে লুটপাট করা যায়।” তিনি আরও বলেন, “আমরা তাকে বলেছিলাম, আপনি আগে অনুমতি নিন, না হলে আপনি পার পাবেন না।

এই ঘটনার পর মেজর ডালিমের ছোট ভাই স্বপন (বীর বিক্রম) ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে চলে যান এবং তিনি জানান যে বিয়ের অনুষ্ঠানে তাকে অপহরণ করা হয়েছে। এরপর বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং পুলিশ গাজী গোলাম মোস্তফার বাড়িতে অভিযান চালায়।

সবুজদেশ/এসইউ

About Author Information
আপডেট সময় : ১২:৪৫:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫
১৫ Time View

মেজর ডালিমের স্ত্রীকে কে এবং কারা অপহরণ করেছিল?

আপডেট সময় : ১২:৪৫:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫

 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মেজর ডালিম রবিবার দিবাগত রাতে প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের ইউটিউব চ্যানেলে লাইভ টকশোতে অংশগ্রহণ করেন। টকশোতে তিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পেছনের ইতিহাস তুলে ধরেন। বিদেশে নির্বাসিত আলোচিত এই সাবেক সামরিক কর্মকর্তা নানা ঘটনার কথা উল্লেখ করেন।

এসময় মেজর ডালিম তার স্ত্রীর অপহরণের প্রসঙ্গে ইলিয়াসের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “এটা একটা মজার ঘটনা। আমি আমার বইতে এটির কথা উল্লেখ করেছি। আমার এক খালাতো বোন, পারভিনা, যার বিয়ের আয়োজন আমি এবং নিম্নি কর্নেল অলিউল্লা করেছিলেন, যিনি আমাদের চেয়ে জুনিয়র ছিলেন। বিয়ে ও অনুষ্ঠান লেডিস ক্লাবে হবে। দু’পক্ষই আমাদের পরিচিত ছিলো। সব আয়োজন আমাদের ওপর ছিল। এই আয়োজনের মধ্যে ২-৩ হাজার লোককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো। বিয়ের আসর চলছিল, তখন আমার একমাত্র শালা বাপ্পি, যিনি ম্যাগগিল ইউনিভার্সিটিতে পড়তেন, ছুটিতে দেশে এসেছিলেন। সে অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিল। আমি ও নিম্নি দুই পক্ষের হোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলাম।

তিনি আরও বলেন, “বাপ্পি ছেলেদের বসার জায়গায় বসেছিল, তখন কিছু ছেলে তার চুল টানতে থাকে। প্রথমবারে বাপ্পি কিছু বলেনি, কিন্তু পরেরবার টানার পর সে পেছনে তাকিয়ে দেখে একজন ছেলে। তারপর সে বলেছিল, ‘তুমি চুল টানছো?’ তখন ওই ছেলে বলেছিল, ‘হ্যাঁ, আমরা দেখছিলাম, তোমার চুল এত সুন্দর, এটি কি পরচুলা না আসল?’ বাপ্পি বলেছিল, ‘বেয়াদব ছেলে, তুমি আর এখানে বসবে না।’ এরপর ছেলেগুলো চলে যায়।

তারপর মেজর ডালিমের বিয়ের অনুষ্ঠানে ঘটনার চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। কিছুক্ষণ পর রেডক্রসের দুটি মাইক্রোবাস ও একটি গাড়ি এসে থামে এবং সাদা পোশাকধারী লোকেরা নামতে থাকে। গাজী গোলাম মোস্তফা, যিনি তখন আওয়ামী লীগ নেতা এবং রেডক্রসের চেয়ারম্যান ছিলেন, গাড়ি থেকে বেরিয়ে চিৎকার করতে শুরু করেন, “মেজর ডালিম কোথায়? কোথায় মেজর ডালিম?” এরপর তার সাথে ৮-১০ জন সশস্ত্র ব্যক্তি উপস্থিত ছিলো।

গাজী গোলাম মোস্তফা মেজর ডালিমকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান, তবে এর মধ্যে মেজর ডালিম তাকে বাধা দেন এবং বলেন, “আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন জানি না, কিন্তু হাজার হাজার মানুষ আমাদেরকে দেখছে, আপনি যা করছেন তা আপনার জন্য ভালো হবে না।” এরপর গাজী গোলাম মোস্তফা কিছুটা ভয় পেয়ে যান।

মেজর ডালিম বলেন, “তখন ঢাকা শহরে গাজী গোলাম মোস্তফা ছিল মুজিবের সবচেয়ে বড় লাঠিয়াল সরদার। তাকে রেডক্রসের চেয়ারম্যান বানানো হয়েছিল, যাতে লুটপাট করা যায়।” তিনি আরও বলেন, “আমরা তাকে বলেছিলাম, আপনি আগে অনুমতি নিন, না হলে আপনি পার পাবেন না।

এই ঘটনার পর মেজর ডালিমের ছোট ভাই স্বপন (বীর বিক্রম) ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে চলে যান এবং তিনি জানান যে বিয়ের অনুষ্ঠানে তাকে অপহরণ করা হয়েছে। এরপর বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং পুলিশ গাজী গোলাম মোস্তফার বাড়িতে অভিযান চালায়।

সবুজদেশ/এসইউ