‘মেয়াদহীন কমিটি’ ৮ দিনেই পূর্ণাঙ্গ করবে স্বেচ্ছাসেবক দল
ঢাকাঃ
চূড়ান্ত কোনও গঠণতন্ত্র ছাড়াই চলছে বিএনপির অঙ্গদল জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল! কমিটি গঠন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সবই চলে বিএনপির নির্দেশনায়।
ফলে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ কখনও অর্ধযুগ পার হয়, কখনওবা একযুগ ছাড়িয়ে যায়। যে কারণে দীর্ঘ সময় সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থেকেও কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে হতাশার কথা শোনাচ্ছেন অনেকেই।
সংগঠনের বর্তমান নেতারা বলছেন, আসলে কোনও কমিটির মেয়াদ অনন্তকাল বা মেয়াদহীনভাবে চলবে এটা কাম্য নয়। স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিরও একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকা প্রয়োজন। বিগত দিনে নানা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে হয়তো তা চূড়ান্ত করা হয়নি। আলাপ-আলোচনা করে সংগঠনের গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানান তারা।
বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক দলের ৭ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি দায়িত্ব পালন করছে। আর মাত্র ১০ দিন পরই এই কমিটি তিন বছরে পা দিবে।
বর্তমান এই কমিটি ঘোষণা করা হয় ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর। বিএনপি চেয়ারপারসনের নির্দেশক্রমে গঠনতন্ত্রের ১৩ ও ৮ (১) এর বিধানবলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কমিটির অনুমোদন দেন।
দীর্ঘ সময়েও কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ২৫ অক্টোবরের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ হতে যাচ্ছে।
জানা গেছে, গত সোমবার বিকেলে তারেক রহমান স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ৭ নেতা এবং দুই মহানগরের চারজন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সাথে স্কাইপিতে বৈঠক করেন।
এ সময় ২০ অক্টোবরের মধ্যে দুই মহানগরীর এবং ২৫ অক্টোবরের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে তার কাছে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদরাজ্জামান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন আলী।
২০১৭ সালের পহেলা মে স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। উভয় কমিটি এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দিলেও তা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আগামী ২৫ অক্টোবরের মধ্যে কমিটি গঠন করে লন্ডনে পাঠাতে হবে। তারপর কমিটি চূড়ান্ত হলেই প্রেসে দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘কমিটি গঠন নিয়ে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কাজ করছেন। কমিটি গঠন সিক্রেট বিষয়, বিস্তারিত কিছু না বলাই ভালো।’
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা আশা করি ত্যাগী এবং বিগত দিনে যারা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন তাদেরকেই সংগঠনে রাখা হবে। বয়সের কারণে যারা ছাত্রদল করতে পারছেন না তাদেরকেও স্বেচ্ছাবেসক দলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মো. আক্তরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক দলের কোনও গঠনতন্ত্র নেই। একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু তা এখন চূড়ান্ত করা হয়নি। বর্ধিত সভায় পাস হলেই এটা চূড়ান্ত করা হবে।’
সংগঠনের একাধিক নেতা জানান, দীর্ষ সময় পরপর কমিটি গঠন নিয়ে অনেকেই হতাশ হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। ফলে সংগঠনে গতিশীল নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। সক্রিয় কোনো কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামতে পারছে না সেচ্ছাসেবক দল।
গঠনতন্ত্র ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সার্বিক বিষয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক দলের নির্দিষ্ট কোনও গঠনতন্ত্র নেই। চাইলেই তো আর এটা আমরা করতে পারি না। আইনজীবী, গঠনতন্ত্র বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করবো।’
কমিটি গঠন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো একটা গোপনীয় বিষয়। আমরা কীভাবে কমিটি গঠন করবো বা কাকে রাখবো? এটা সাংবাদিকদের বলার বিষয় না। স্বেচ্ছাসেবক দলে যেহেতু কোনও বয়সের সময় সীমা নাই সেক্ষেত্রে সব বয়সীরাই সংগঠন করতে পারবেন। এখানে পেশাজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক সবাই যুক্ত হতে পারেন। আমরা শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবো।’
কমিটির মেয়াদ প্রসঙ্গে জুয়েল বলেন, ‘কোনও কমিটির মেয়াদ তো আনলিমিটেড করা যায় না। অবশ্যই একটা সময়সীমা থাকা দরকার। আগের কমিটিগুলো কোনওটা ১২-১৩ বছরও ছিল। কিন্তু আমরা এত দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে চাই না।’
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির মেয়াদ কতদিন হবে তারেক রহমান সে বিষয়ে কিছুই বলেননি। তবে অতি অল্প সময়ের জন্য এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হচ্ছে। আগের কমিটি ছিল ৩৩৩ সদস্য বিশিষ্ট। কিন্ত এবারের কমিটি হবে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট।