যশোরে এসআইয়ের নেতৃত্বে নিপীড়নের শিকার সেই নারীর পাশে বিএনপি
যশোরঃ
যশোরের শার্শা উপজেলায় পুলিশ কর্মকর্তার নিপীড়নের শিকার গৃহবধূ হীরা বেগমের পাশে দাঁড়িয়েছে নারী ও শিশু রক্ষায় গঠিত বিএনপির কমিটি। সংগঠনের নেতা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক ও নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায়ের নেতৃত্বে একটি টিম শুক্রবার নির্যাতিত ওই গৃহবধূর বাড়িতে যান।
বিএনপি নেতারা নির্যাতিত গৃহবধূকে আর্থিক সহায়তা করেন এবং তাকে আইনি সহযোগিতা করার পূর্ণ আশ্বাস দেন। তারা বলেন, এই জঘন্য ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুল আলমকে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে নারীর অধিকার রক্ষায় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে যশোরের ওই গৃহবধূ নিজের ঘরেই ধর্ষণের শিকার হন। তার অভিযোগ, এসআই খায়রুলসহ চারজন ওই রাতে তার কাছে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিলে তার স্বামীর বিরুদ্ধে দেয়া ফেনসিডিলের মামলা ৫৪ ধারায় দেখিয়ে হালকা করে দেবেন বলে তারা জানান। ফেনসিডিল মামলায় কারাগারে থাকা তার স্বামীকে কীভাবে ৫৪ ধারায় দেবেন- এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়।
একপর্যায়ে এসআই খায়রুল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এর পর খায়রুল ও কামরুল ওই নারীকে ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন।
পর দিন সকালে ওই নারী যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। বৃহস্পতিবার তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। ধর্ষণকারী কারা ছিলেন তা ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ জন্য ডিএনএ নমুনা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ঢাকার পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিএনপির হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা আসায় নারী ও শিশু রক্ষা কমিটির নেতারা যশোর ছুটে যান। তারা নির্যাতিত নারীর পাশে সর্বাত্মকভাবে থাকার অঙ্গীকার করেন।
এ বিষয়ে আমিনুল হক যুগান্তরকে জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে তারা সারাদেশে নির্যাতিত নারী ও শিশুদের রক্ষায় কাজ করছেন। এ জন্য তাদের গঠিত কমিটি ভূমিকা রাখছেন। তারই অংশ হিসেবে তারা যশোর এসেছেন। তারা নির্যাতিত নারী এবং তার পরিবারকে সাহস জুগিয়েছেন। তাদের পাশে থাকার কথা বলেছেন।
আমরা একদিকে যেমন আমাদের গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়া আর গণতন্ত্রকে মুক্তির জন্য আন্দোলন করছি, তেমনি এই সরকারের সৃষ্টি সামাজিক ব্যাধিকেও নির্মূল করার আন্দোলন শুরু করেছি। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথের পাশাপাশিসামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারের সব অপকর্মের জবাব দেয়া হবে।
অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত না হলে কারও নিরাপত্তা থাকে না। প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দলীয়করণ করায় কারও জীবনের মূল্য নেই। তাদের সহযোগিতায় মধ্যরাতের ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন অপকর্ম করার সুযোগ পাচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, তারেক রহমানের নির্দেশনায় তারা নারী ও শিশু রক্ষায় সারাদেশে কাজ করছেন। এর জন্য দেশব্যাপী কমিটি গঠন করা হচ্ছে। যেখানেই নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হবেন সেখানেই তারা ছুটে যাবেন, তাদের পাশে দাঁড়াবেন।
এ সময় যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমসহ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান, শার্শা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান জহির, নগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুর নাহার পান্না ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৩ আগস্ট বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’ নামে নতুন একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। নয়টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এ ফোরাম গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে প্রধান উপদেষ্টা, সেলিমা রহমানকে আহ্বায়ক ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ চন্দ্র রায়কে সদস্য সচিব করা হয়।