ঢাকা ১২:৫৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যশোরে গত বছর ৪৫৬ নারী-শিশু নির্যাতনের শিকার

Reporter Name

জাহিদ হাসান, যশোরঃ

যশোরেও নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন হয়রানি বন্ধ হচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০ তারিখ পর্যন্ত মোট ৪শ’ ৫৬ জন নারী ও শিশু শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যশোর ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতাল পরিচালিত ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টার থেকে এ তথ্য মিলেছে।

তাদের পরিসংখ্যান মতে, গত ১১ মাস ২০ দিনে জেলায় ১৮ থেকে এর উর্ধ্বে ১৫২ নারীর উপর শারীরিক নির্যাতন হয়েছে। এ সময় মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২১৬ জন এবং একজন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

অপরদিকে, শিশু থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কিশোরীদের মধ্যে সাতজন শারীরিক, ৭০ জন মানসিক, দুইজন বাল্যবিবাহ এবং ছয়জন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এই নির্যাতিতরা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা ও ভিকটিমের শারীরিক পরীক্ষা করেছেন। এই নির্যাতিতদের মধ্যে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টার একশ’ ১২ জনকে কাউন্সিলিং, একশ’ ২২ জনকে আইনি, ১০ জনকে লিগ্যাল এইড, একশ’ সাতজনকে পুলিশি, ২০ জনকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়েছে।

তবে নির্যাতিতদের নিরাপত্তা ও সামাজিক সম্মান রক্ষায় প্রতিবেদনে ঘটনার বিবরণ ও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

যশোর মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আমিনুর রহমান বলেন, নারী নির্যাতন রোধে কিছু মৌলিক কাজ আগে করতে হবে। এর মধ্যে শিক্ষা, সমাজে নারীর সুষ্ঠু অধিকার নিশ্চিতকরণ, নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তার মতে, নারী নির্যাতনের প্রধান করণ হচ্ছে নারীর পরনির্ভরশীলতা, শিক্ষার অভাব, দুর্বল মনোভাব। একজন নারী যখন শিক্ষিত হবে, কাজ করবে তখন সে আর অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকবে না। নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে। এছাড়া পুরুষের মধ্যে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মনোভাব গড়ে উঠলে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সম্ভব।

এ ব্যাপারে যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, প্রতিমাসে হাসপাতালে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনে আক্রান্ত হয়ে শিশু, কিশোরী ও নারীরা ভর্তি হচ্ছে। এর মধ্যে যে শিশু ভিকটিম আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে পরীক্ষা করতে আসছে; তাকে হয় প্রলোভন দেখিয়ে বা প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে যৌন নির্যাতন করেছে। তিনি আরও জানান, গত মাসে এক চিকিৎসকের মেয়ে নির্মাণ শ্রমিকের সাথে প্রেম করে পালিয়ে যায়। পরে পিতা-মাতা জানতে পারলে তাকে সেখান থেকে পুলিশের মাধ্যমে উদ্ধার করে শেল্টার হোমে রাখেন। এছাড়া অনেক সংসারে অভাব অনটনের কারণে কিংবা যৌতুকের কারণেও নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়েছে।

হাসপাতাল ওয়ান স্টাপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) আইন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট ইসমাঈল হোসেন জানান, জেলায় নারীর ওপরে নির্যাতন, নিপীড়ন, যৌন হয়রানি বন্ধ হচ্ছে না। প্রশাসন ও পুলিশের দায় এড়ানোর মনোভাব এবং অপরাধীদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, বিচারের প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ ইত্যাদি কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৮:১৪:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২০
৯১০ Time View

যশোরে গত বছর ৪৫৬ নারী-শিশু নির্যাতনের শিকার

আপডেট সময় : ০৮:১৪:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী ২০২০

জাহিদ হাসান, যশোরঃ

যশোরেও নারীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন হয়রানি বন্ধ হচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০ তারিখ পর্যন্ত মোট ৪শ’ ৫৬ জন নারী ও শিশু শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। যশোর ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতাল পরিচালিত ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টার থেকে এ তথ্য মিলেছে।

তাদের পরিসংখ্যান মতে, গত ১১ মাস ২০ দিনে জেলায় ১৮ থেকে এর উর্ধ্বে ১৫২ নারীর উপর শারীরিক নির্যাতন হয়েছে। এ সময় মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২১৬ জন এবং একজন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

অপরদিকে, শিশু থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কিশোরীদের মধ্যে সাতজন শারীরিক, ৭০ জন মানসিক, দুইজন বাল্যবিবাহ এবং ছয়জন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এই নির্যাতিতরা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা ও ভিকটিমের শারীরিক পরীক্ষা করেছেন। এই নির্যাতিতদের মধ্যে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টার একশ’ ১২ জনকে কাউন্সিলিং, একশ’ ২২ জনকে আইনি, ১০ জনকে লিগ্যাল এইড, একশ’ সাতজনকে পুলিশি, ২০ জনকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়েছে।

তবে নির্যাতিতদের নিরাপত্তা ও সামাজিক সম্মান রক্ষায় প্রতিবেদনে ঘটনার বিবরণ ও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

যশোর মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আমিনুর রহমান বলেন, নারী নির্যাতন রোধে কিছু মৌলিক কাজ আগে করতে হবে। এর মধ্যে শিক্ষা, সমাজে নারীর সুষ্ঠু অধিকার নিশ্চিতকরণ, নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তার মতে, নারী নির্যাতনের প্রধান করণ হচ্ছে নারীর পরনির্ভরশীলতা, শিক্ষার অভাব, দুর্বল মনোভাব। একজন নারী যখন শিক্ষিত হবে, কাজ করবে তখন সে আর অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকবে না। নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে। এছাড়া পুরুষের মধ্যে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মনোভাব গড়ে উঠলে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সম্ভব।

এ ব্যাপারে যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, প্রতিমাসে হাসপাতালে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনে আক্রান্ত হয়ে শিশু, কিশোরী ও নারীরা ভর্তি হচ্ছে। এর মধ্যে যে শিশু ভিকটিম আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে পরীক্ষা করতে আসছে; তাকে হয় প্রলোভন দেখিয়ে বা প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে যৌন নির্যাতন করেছে। তিনি আরও জানান, গত মাসে এক চিকিৎসকের মেয়ে নির্মাণ শ্রমিকের সাথে প্রেম করে পালিয়ে যায়। পরে পিতা-মাতা জানতে পারলে তাকে সেখান থেকে পুলিশের মাধ্যমে উদ্ধার করে শেল্টার হোমে রাখেন। এছাড়া অনেক সংসারে অভাব অনটনের কারণে কিংবা যৌতুকের কারণেও নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়েছে।

হাসপাতাল ওয়ান স্টাপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) আইন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট ইসমাঈল হোসেন জানান, জেলায় নারীর ওপরে নির্যাতন, নিপীড়ন, যৌন হয়রানি বন্ধ হচ্ছে না। প্রশাসন ও পুলিশের দায় এড়ানোর মনোভাব এবং অপরাধীদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, বিচারের প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ ইত্যাদি কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না।