যশোরে ৬৬ হাজার ২’শ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা
যশোর প্রতিনিধিঃ
করোনার প্রভাবে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় যশোরে ৬৬ হাজার ২০০ পরিবারকে সহযোগিতা করছে জেলা প্রশাসন। করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায় পরিবারগুলোকে চাল-ডাল-তেল ও নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে।
যশোর পৌরসভাসহ জেলার আট উপজেলার ৬৬ হাজার ২০০ পরিবারকে ৯১৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩৮ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৪১৮ মেট্রিক টন চাল ও ১৯ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে।
বিষয়টি যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
জানাগেছে, করোনা মহামারির প্রকোপ ঠেকাতে ‘অচলাবস্থা’ বা সাধারণ ছুটি কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষজনকে ঘরে রাখার চেষ্টা করছে সরকার। ফলে এমন পরিস্থিতিতে দিন আনা দিন খাওয়া মানুষজন পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছে। আর কর্মহীন এসব দরিদ্র মানুষের যাতে না খেয়ে থাকতে হয় সেজন্য তাদের সরকারি ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এরপরও যশোরের বেশ কয়েকটি এলাকায় খাদ্য সহায়তার দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন ধরণের খাদ্যসহায়তা না পেয়ে ঘর ছেড়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তারা। এসব ভুক্তভুগীরা জানিয়েছেন, সরকার পর্যপ্ত ত্রাণ দিলেও জনপ্রতিনিধিদের সুষ্ঠ বন্ঠনের অভাবে সবাই খাদ্যসহায়তা পাচ্ছে না।
জেলা ত্রাণ ও পূর্নবাসন সূত্রেমতে, করোনার প্রভাবে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় যশোর পৌরসভাগুলোসহ আট উপজেলায় ৬৬ হাজার ২০০ পরিবারকে ৯১৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩৮ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ১৯৮ মেট্রিক টন চাল ও ৬ লক্ষ ৮ হাজার টাকা, মণিরামপুর উপজেলায় ১৫৮ মেট্রিক টন চাল ও ৫ লক্ষ ২৩ হাজার টাকা, কেশবপুর উপজেলায় ১০২ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা, শার্শা উপজেলায় ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ৭ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৯৯ মেট্রিক টন চাল ও ৭ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা, অভয়নগর উপজেলায় ৮২ মেট্রিক টন চাল ও ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা , বাঘারপাড়া উপজেলায় ৭৮ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লক্ষ ২ হাজার টাকা ও চৌগাছা উপজেলায় ৯৭ মেট্রিক টন চাল ও ৩ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। যা প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন কাউন্সিলের মাধ্যমে এই ত্রাণ সহায়তা চলমান রয়েছে।
এছাড়া অসহায় পরিবারের শিশুদের পুষ্টির নিশ্চয়তার লক্ষে শিশুদের মাঝে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘আদর্শ বাড়তি খাবার’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করেছে ত্রাণ ও পূর্ণবাসন অধিদপ্তর। ইতো মধ্যে এ কর্মসূচিতে যশোরে এক হাজার শিশুকে খাবার দেওয়া হয়েছে। চলমান এ কর্মসূচিতে ১২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এই কর্মসূচিতে ৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১ হাজার শিশুকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রতি দুই জন শিশুর মধ্যে তিনশ’ টাকা পরিমানে শিশু খাদ্য সরবাহর করা হচ্ছে। শিশু খাদ্য কর্মসূচিতে মধ্যে রয়েছে দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, সাগু, সুজি। এতিম, হতদরিদ্র, নিম্ন আয়ের মানুষের শিশু সন্তানরা এসব ত্রাণ পাবে। প্রথম ধাপে এই কর্মসূচিতে জনসংখ্যা অনুসারে যশোরের সদর উপজেলায় ৫০ হাজার টাকা, মণিরামপুরে ৪০ হাজার টাকা এবং বাকী ৬ উপজেলাতে ৩০ হাজার টাকা শিশু খাদ্য সরবাহর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পূর্ণবাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকারি সহায়তা ছাড়াও বেসরকারি সংস্থা ও সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। যশোর পৌরসভাসহ জেলার আট উপজেলার ৬৬ হাজার ২০০ পরিবারকে ৯১৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৩৮ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া শিশুদের পুষ্টির নিশ্চয়তার লক্ষে শিশুদের মাঝে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘আদর্শ বাড়তি খাবার’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। ইতো মধ্যে এ কর্মসূচিতে যশোরে এক হাজার শিশুকে খাবার দেওয়া হয়েছে। চলমান এ কর্মসূচিতে ১২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব খাদ্য সামগ্রী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তালিকার মাধ্যমে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ‘ত্রাণের কোনো ঘাটতি নেই। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে, কোনো মানুষ না খেয়ে থাকবে না। মানুষ ঘরে থাকবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলবে। সরকারি নির্দেশনা মেনে চলবে। সরকারি সহায়তা ঘরে ঘরে পৌঁচ্ছে যাবে’। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী খাদ্য সহায়তা বাড়ানো হচ্ছে। সুশৃঙ্খলভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এতে মানুষ উৎসাহিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। করোনার কারণে ঘর থেকে বাইরে না যেতে পারা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এ সরকারি সহায়তা প্রতিটি উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সংশিষ্টদের হাতে পৌঁচ্ছে দেওয়া হচ্ছে। আরও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যত সরকারি সহায়তা আসবে পর্যায়ক্রমে তা জেলা ও উপজেলায় থাকা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁচ্ছে দেওয়া হবে।