যশোরে ৮৫ বস্তা চাল আত্মসাৎ, চেয়ারম্যানের নামে দুদকে মামলা
যশোর প্রতিনিধিঃ
অসহায় নারীদের ভিজিডির ৮৫ বস্তা চাল আত্মসাতের অভিযোগে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পেড়লী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জার্জিদ মোল্যার (৫২) নামে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক মো. মাহফুজ ইকবাল এ মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামি ইউপি চেয়ারম্যান মো. জার্জিদ মোল্যা নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পেড়লী গ্রামের আব্দুস ছালাম মোল্যার ছেলে। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত।
দুদকের এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৮ এপ্রিল রেকর্ডভুক্ত কালিয়া থানার সাধারণ ডায়েরির (নং-৫৪৭) তথ্যসমূহ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় চলমান প্রকল্পসমূহের মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ের অসহায় পরিবারের মহিলাদের দুই বছরব্যাপী বিনামূল্যে প্রতিমাসে ত্রিশ কেজি করে ভিজিডি চাল প্রদান করা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে কালিয়া উপজেলার ১১নং পেড়লী ইউনিয়নে ১৯০ জনকে ভিজিডি সুবিধার আওতায় ভিডিজি কার্ড প্রদান করা হয়।
গত ৬ এপ্রিল পেড়লী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জার্জিদ মোল্যা (৫২) এর অনুকূলে ১৯০টি কার্ডের বিপরীতে ৫ হাজার ৭শ কেজি চালের ডিও প্রদান করা হয়। গত ১৪ এপ্রিল চেয়ারম্যান ভিজিডি চালের ১৯০ বস্তা চাল গ্রহণ করে তার ইউনিয়ন পরিষদের কমপ্লেক্স ভবনের গোডাউনে সংরক্ষণ করেন।
ভিজিডি চাল বিতরণকালে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রপ্ত ট্যাগ অফিসারকে চাল বিতরণের তারিখ অবহিত করে ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে চাল বিতরণের আবশ্যিক নিয়ম থাকলেও মো. জার্জিদ মোল্যা কখনই ভিজিডি চাল বিতরণ নীতিমালা অনুসরণ না করে নিজের ইচ্ছামতো চাল বিতরণ করেন।
১৬ এপ্রিল কালিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মৌখিক নির্দেশে সাধারণ ডায়েরির (জিডি) অভিযোগকারী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের সুপারভাইজার মতিয়ার রহমান পেড়লী ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনে উপস্থিত হন।
তার উপস্থিতিতে ওইদিন পেড়লী ইউনিয়নের ০৯টি ওয়ার্ডে ১৯০টি কার্ডের মধ্যে ১০৫টি কার্ডের চাল বিতরণ সম্পন্ন করা হয়। চাল বিতরণ শেষে তিনি নিজে মো. জার্জিদ মোল্যার (৫২) উপস্থিতিতে বিতরণকৃত ৮৫ বস্তা ভিজিডি চাল পরিষদের গোডাউনে সংরক্ষণ করেন।
পরবর্তীতে ১৮ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে সুপারভাইজার মতিয়ার রহমান, পেড়লী ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিশিকান্ত রায়কে নিয়ে অবশিষ্ট চাল বিতরণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের উপস্থিত হন।
এ সময় চেয়ারম্যান মো জার্জিদ মোল্যা তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর কালিয়া উপজেলার খড়রিয়া গ্রামের মৃত মোদাচ্ছের শেখের ছেলে নিজাম শেখকে গোডাউন খোলার জন্য বলেন। নিজাম শেখ চাবি এনে গোডাউন খোলেন। মতিয়ার রহমান ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার নিশিকান্ত রায় গোডাউনের ভেতরে প্রবেশ করে দেখেন গত ১৬ এপ্রিল রেখে যাওয়া ৮৫ বস্তা ভিজিডি চাল নেই। গোডাউন খালি। মতিয়ার রহমান গোডাউনের ভেতরে উপস্থিত ইউপি সচিব আফজাল হোসেনকে চাল কি করা হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে পাশে উপস্থিত চেয়ারম্যান মো জার্জিদ মোল্যার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর নিজাম শেখ বলেন, চাল বিতরণ করে ফেলেছেন।
মতিয়ার রহমান চাল বিতরণের সত্যতা নিরূপণ করার জন্য তাৎক্ষণিক পরিষদে উপস্থিত ১১ জন কার্ডধারীর কাছে জিজ্ঞেস করেন। তারা জানান, কোনো চাল পাননি। এমনকি তাদের নামে কার্ড থাকলেও চাল না দিয়ে চেয়ারম্যান বাজারে বিক্রি করে দেন। এজন্য চেয়ারম্যান মো. জার্জিদ মোল্যার নামে দণ্ডবিধি আইনের ৪০৬/৪০৯ ধারায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে।