যশোর জেলা মহিলা আ’লীগের সম্মেলন: শীর্ষ দুই পদে লড়তে মাঠে ৮ নেত্রী
জাহিদ হাসান, যশোরঃ
দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ পর ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যশোর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। শনিবারের এই সম্মেলন ঘিরে মহিলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে এখন উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। নেতৃবৃন্দও সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছেন।
আর সভাপতি ও সম্পাদক পদের জন্য মাঠের লড়াইয়ে নেমেছেন ৮ নারী নেত্রী। প্রার্থীদের মধ্যে থেকে তৃণমূলের ভোটাভুটিতে মহিলা আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব গ্রহণ করুক এমনটিই প্রত্যাশা অধিকাংশ নেতাকর্মীর।
মহিলা আওয়ামী লীগ সূূত্র জানান, কেন্দ্র থেকে আগামী ১২ অক্টোবর শনিবার যশোর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিন সকাল ১০টায় যশোর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য সাফিয়া খাতুন। প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য।
সূত্র মতে, ১৯৯৭ সালের ২৭ অক্টোবর সম্মেলনের মাধ্যমে যশোর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগে কমিটি গঠন করা হয়। ৭১ সদস্যের এই কমিটি দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে।
এখন এই সম্মেলনকে ঘিরে ইতোমধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সম্মেলনে সভাপতি পদের জন্য প্রচার প্রচারণায় রয়েছেন, বর্তমান সভাপতি ও সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নূরজাহান ইসলাম নীরা, প্রচার সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য লাইজু জামান, শহর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহফুজা খাতুন গিনি এবং জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সম্পাদক নাছিমা আক্তার জলি।
আর সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি জোসনা আরা বেগম মিলি, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও জেলা পরিষদ সদস্য হাজেরা পারভীন, শহর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেহেনা পারভীন এবং তিন নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রিনি বেগম। সম্মেলনে সম্ভাব্য এই প্রার্থীদের মধ্যে থেকে প্রায় ১শ’ কাউন্সিলর তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।
জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সভাপতিপ্রার্থী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নূরজাহান ইসলাম নীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পর সম্মেলনের আয়োজন করায় নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। সম্মেলনের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
তিনি উল্লেখ করেন, দুই যুগ ধরে সামনে থেকে মহিলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছি। তৃণমূলের নেতকর্মীদের প্রত্যাশা প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হোক। তৃণমূলের নেতাদের প্রত্যাশাকে ভরসা করেই আবার সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো।
আরেক সভাপতি প্রার্থী মাহফুজা খাতুন গিনি বলেন, প্রায় দুই যুগ পর সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। এ জন্য সভাপতি পদে লড়াইয়ে প্রস্তুতি নিয়েছি। কাউন্সিলরদের কাছে প্রার্থিতার কথা তুলে ধরছি। কাউন্সিলে ভোটের জন্য কাউন্সিলররা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট দিতে চান। সরাসরি ভোট হলে লড়াই করবো।
তবে সভাপতি প্রার্থী ও বর্তমান প্রচার সম্পাদক লাইজু জামান বলেন, বর্তমান কমিটি গঠিত হয়েছিল ২৪ বছর আগে। দুই যুগে নামমাত্র কয়েকটি সভা করেছে বর্তমান কমিটি। জেলা কমিটি অধিকাংশ নেতাই সক্রিয় নেই। আজ্ঞাবহদের দিয়ে দল পরিচালনা করা হচ্ছে। এই অবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে বাস্তব পরিস্থিত তুলে ধরে নেতৃত্ব মনোনয়নের দাবি রাখবো।
আরেক সভাপতি প্রার্থী নাছিমা আক্তার জলি দাবি করেছেন, তৃণমূলের নেতকর্মীদের প্রত্যাশা প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হোক। তৃণমূলের এই প্রত্যাশাকে সম্মান জানিয়ে সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি।
অন্যদিকে, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জোসনা আরা বেগম মিলি বলেন, দীর্ঘদিন জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতিসহ বিভিন্ন পদে থেকে রাজপথে রাজনীতি করেছি। এখন সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মহিলা আওয়ামী লীগকে আরও সুসংগঠিত করতে চাই। এজন্য সম্পাদক পদে লড়াই করবো। তৃণমূূলের নেতাও আমার সাথে থাকবেন বলে আশা করছি।
তবে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মহিলা আওয়ামী লীগ সদস্য হাজেরা পারভীন দাবি করেন, বিগত কমিটি তেমন কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা দেখাতে পারেনি। বরং বিভিন্ন উপজেলায় পকেট কমিটি করে রেখেছে। এখন হঠাৎ করে সম্মেলনের আয়োজন করে নেতৃত্বকে ধরে রাখতে চাইছে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে এসব বিষয় তুলে ধরে যোগ্যতার ভিত্তিতে কমিটি নির্বাচনের দাবি জানাবো।
যদিও অপর দুই সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রেহেনা পারভীন ও রিনি বেগম জানালেন, সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে বেশ সাড়া পড়ে গেছে। তৃণমূল থেকে দাবি উঠেছে, ভোটাভুটি করে মূল নেতৃত্ব নির্বাচন করার। এজন্যই তারা সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিয়েছেন। ভোট হলে দু’জনেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।