বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম যুক্তফ্রন্টে যোগ দিচ্ছে—রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন গুঞ্জন অনেক পুরোনো। তবে শেষ পর্যন্ত যুক্তফ্রন্টে গণফোরাম যোগ দিচ্ছে না। পৃথক অবস্থানে থেকেই যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার কথা ভাবছে দলটি।

বছরখানেক আগে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে আ স ম রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। এরপর বিভিন্ন সভা–সমাবেশে যুক্তফ্রন্টের নেতারা বলে আসছিলেন, ড. কামাল হোসেন যুক্তফ্রন্টের যোগ দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন।

ঈদের আগে গত রোববার বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের বাসায় যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের এক যৌথ সভায় বৃহত্তর ঐক্য গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে আমরা জোটভুক্ত হচ্ছি না। আমরা চাইছি যুক্তফ্রন্টে যারা আছে তারা এবং যুক্তফ্রন্টের বাইরে আমরাসহ ব্যক্তিবিশেষ মিলে ঐক্য করা হবে।’ তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন দল মিলে তাঁরা একটি জাতীয় ঐক্য গড়তে যাচ্ছেন।

গণফোরামের যুক্তফ্রন্টে যোগ না দেওয়ার বিষয়ে জোটের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তফ্রন্টের নামে হয়তো যোগ দেবে না, কিন্তু একসঙ্গেই সবাই কাজ করবে। তখন যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম মিলে নতুন একটা নামেও জোট হতে পারে।’

এদিকে মঙ্গলবার ড. কামাল হোসেনের বাসায় ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে গণফোরাম ও যুক্তফ্রন্টের নেতাদের একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এদিনই ‘ভালো কোনো সংবাদ’ আসবে। নতুন ঐক্য হলে সেখানে সরকারপদ্ধতি ও তাঁদের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে।সুব্রত চৌধুরীসুব্রত চৌধুরী নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রথম আলোকে বলেন, একটি প্রক্রিয়া হয়ে থেমে ছিল। তা চালু করার জন্যই এ বৈঠক হবে। ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য দলগুলো কাজ করবে। একটি বড় কোনো জনসমাবেশের মধ্য দিয়ে একসঙ্গে সব নেতা হাজির হয়ে মানুষের সামনে একটি জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা দেওয়া হবে।

নির্বাচন ঘিরে চারদিকেই ছোট–বড় দলগুলো মিলে জোট করার তোড়জোড় শুরু করেছে। সেখানে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি উভয়েই বিভিন্ন দিকে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম মিলে বিএনপির সঙ্গে একটি জাতীয় ঐক্য গড়ার আলোচনা চলে আসছে অনেক দিন থেকেই। এই আগস্টেই তার একটি ঘোষণা আসার কথা ছিল। তবে আসন ভাগাভাগি ও ছোট দলগুলোর নানান শর্তে বিএনপির সঙ্গে পরবর্তী সময়ে আর আলোচনা এগোয়নি।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে হাতে আছে শুধু সেপ্টেম্বর মাস। মাঝে কিছুটা ঝিমিয়ে গেলেও ঈদের আগ দিয়ে বিভিন্ন দল আবার তৎপর হয়ে হয়ে ওঠে। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত আছেন গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সম্প্রতি যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের বৃহত্তর ঐক্য নিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় ঐক্যের একটি ধাপ হচ্ছে এই বৃহত্তর ঐক্য। তিনি ড. কামাল হোসেন ও বি চৌধুরীর কথা উল্লেখ করে বলেন, এই দুই নেতা এক হয়ে গেলে জাতীয় ঐক্য গঠনের কাজ সহজ হয়ে যাবে।

মাহমুদুর রহমান মান্নামাহমুদুর রহমান মান্না গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, যারা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় এবং দেশের শুভ পরিবর্তন চায়, তাদের নিয়েই জাতীয় ঐক্য হবে। বিএনপির ব্যাপারে বলেন, দেশে কার্যকর গণতন্ত্র, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচনসহ ঐক্য প্রক্রিয়ার কথাগুলো যেসব দল মানবে, তারাই এখানে যোগ দিতে পারবে। এসব দাবির সঙ্গে সরকার একমত হলে তারাও আসতে পারে। সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘দেশটা আওয়ামী লীগ বা বিএনপির না। তাদের জোট বেশি থাকতে পারে। কিন্তু দেশটা ১৬ কোটি মানুষের।’

এর আগে গণফোরামের এই নেতা বলেছিলেন, জামায়াত ছেড়ে এলে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য হবে। তবে আজ তিনি বলেন, তারা ২০–দলীয় জোটের সঙ্গে ঐক্য করছেন না। বিএনপি এলে শুধু তাদের সঙ্গে ঐক্য হবে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ঐক্য নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, নিজেরা আরেকটু গুছিয়ে নিয়ে তারা বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় যাবেন।

যুক্তফ্রন্টের অন্যতম শরিক কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। কিন্তু গত মাসেই কাদের সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি আওয়ামী লীগে যাবেন, নাকি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় থাকবেন, সে ব্যাপারে সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘উনি কী করবেন, সেটা ওনার ব্যাপার। উনি তো পাবলিকলি (জনসমক্ষে) বলেছেন, কামাল সাহেবের সঙ্গে কাজ করবেন।’

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here