যুক্তরাষ্ট্রে চীনা কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ
সবুজদেশ ডেস্কঃ
হংকং, দক্ষিণ চীন সাগর ও নতুন করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে ওয়াশিংটন-বেইজিং টানাপড়েনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র টেক্সাসের হিউস্টনে অবস্থিত চীনা কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।
শুক্রবারের মধ্যে কনস্যুলেটটি বন্ধ করে দিতে হবে, বলেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মার্কিন ‘মেধাস্বত্ব সুরক্ষিত রাখার স্বার্থে’ এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপকে চীন ‘রাজনৈতিক উসকানি’ এবং ‘নজিরবিহীন স্পর্ধা’ বলে নিন্দা জানিয়ে এর পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। তবে কী পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে তা জানায়নি বেইজিং।
খবরে বলা হয়, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশকে ‘গর্হিত’ কাজ এবং ‘অন্যায়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে অবিলম্বে এ ভুল সিদ্ধান্ত বাতিল করার আহ্বান জানাচ্ছি। তারপরও তারা এই ভুল পথ থেকে না সরলে চীন এর কঠোর পাল্টা জবাব দেবে।”
হিউস্টনের ওই চীনা কনস্যুলেট চত্বরে কয়েক ব্যক্তির বিনের ভেতর নথি পোড়ানোর ভিডিও মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে স্থানীয় গণমাধ্যম। তাতে ধারণা করা হচ্ছে, চীনা কর্মকর্তারা তাদের নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলছেন। তবে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং এই ঘটনার ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মরগান ওর্টেগাস বুধবার বলেছেন, “মার্কিন মেধাস্বত্ব এবং মার্কিনিদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার স্বার্থে আমরা চীনের হিউস্টন কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি।”
ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কোনো দেশের দূতাবাস বা কূটনৈতিক ভবনগুলো স্বাগতিক দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র আলাদা একটি বিবৃতিতে বলেছেন, “চীন বহু বছর ধরেই অবৈধভাবে বড় ধরনের গুপ্তচরবৃত্তি এবং প্রভাব বিস্তারের কাজ করে চলেছে। গত কয়েকবছরে তাদের এই তৎপরতা আরো বেড়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও তারা হস্তক্ষেপ করছে।”
ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত দূতাবাস ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পাঁচটি কনসুলেট আছে; এর মধ্যে কেন কেবল হিউস্টনেরটাই বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হলো, ওর্টেগাস সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলেননি।
কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশের নিন্দা করে চীন ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লংঘনেরও অভিযোগ করেছে।
চীন পাল্টা ব্যবস্থায় উহানে মার্কিন কনস্যুলেট বন্ধের চিন্তাভাবনা করছে বলে জানিয়েছেন বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক কর্মকর্তা। করোনাভাইরাসের কারণে উহানের ওই কনস্যুলেটের স্টাফ ও তাদের পরিবারকে এ বছরের শুরুর দিকেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
তবে কনস্যুলেটটি বন্ধ করা হবে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানায়নি।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং বলেছেন, “একে অপরের দেশে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের যে সংখ্যক দূতাবাস ও কনস্যুলেট আছে, যত কূটনীতিক ও কর্মী কাজ করেন, তা হিসাব করলে চীনে কাজ করা মার্কিনির সংখ্যাই বেশি হবে।”
চীনে যুক্তরাষ্ট্রের কোন কনস্যুলেটটি বন্ধ করে দেওয়া উচিত তা নিয়ে দেশটির রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস জরিপ চালাচ্ছে।
কোভিড-১৯ এর টিকা নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে চীনের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের খবর প্রকাশ্যে আসার অল্প সময়ের মধ্যেই হিউস্টনের চীনা কনস্যুলেট বন্ধের এ নির্দেশ এলো।
তবে দুটো ঘটনার মধ্যে কোনো যোগসাজশ আছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সূত্র : বিবিসি, বিডিনিউজ