ঢাকা ১০:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যেসব অবদানে ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড পেলেন ১২ জন

  • সবুজদেশ ডেস্ক:
  • Update Time : ০৮:৪৪:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ২৬ বার পড়া হয়েছে।

 

‘যারা যারা পুরস্কার পেয়েছেন তারা একটু দাঁড়াবেন। আমরা সবাই একসঙ্গে করতালি দিয়ে তাদের সম্মানিত করবো।’

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতে উপস্থিত সবার উদ্দেশে এ আহ্বান জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।

অধ্যাপক ইউনূসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পুরস্কারপ্রাপ্ত ১২ জন উঠে দাঁড়ান। তাদের মধ্যে নয় পুরুষ একই রঙের পাঞ্জাবি-পায়জামা এবং দুই নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের একজন শাড়ি পরিধান করেছিলেন। এ সময় সরকারের একাধিক উপদেষ্টা, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মীসহ সবাই করতালি দিয়ে তাদের অভিনন্দন জানান।

এবার পাঁচটি বিভাগে ১২ জনকে ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।

প্রতিকূলতা জয়ী সুরাইয়া ফারহানা রেশমা
বগুড়ার শেরপুরে প্রতিকূলতা জয় করে রেশমা হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা। অল্প বয়সে বিয়ে ও স্বামীর নির্যাতনের পর অসহায় অবস্থায় পড়লেও হার মানেননি। অদম্য ইচ্ছাশক্তিসহ ২০১৪ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ‘রেশমা কৃষি উদ্যোগ’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এখন তার সমন্বিত খামারে মাসে প্রায় ৩০ টন কেঁচো সার, ট্রাইকো-কম্পোস্ট ও নিরাপদ সবজি উৎপাদিত হয়‌। পশু পালন ও মাছ চাষ মিলিয়ে বছরে প্রায় ৪০ লাখ টাকা আয় করছেন। তিনি ১৬ নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং ৬৮০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

কৃষি বিপ্লবী মো. আক্কাচ খান
মাগুরার এ কৃষক লিখেছেন জীবনসংগ্রামের অনবদ্য কাব্য। মাত্র সাত মাস বয়সে পোলিও তার দুই পা কেড়ে নিলেও থেমে যায়নি স্বপ্ন ও সাহসের সঙ্গে পথ চলা। ২০১৮ সালের মাত্র ৮ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করেন মিষ্টি কুমড়ার চাষ। আজ তিনি প্রায় তিন একর জমিতে নানা ফসলের মিশ্র চাষ করছেন।

করোনার কঠিন সময়ে কালোজিরা চাষ এবং পরে মসলা গবেষণা কেন্দ্রের সহায়তায় চিয়া বীজ উৎপাদন তার পরিশ্রমকে নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেয়। নিজের উৎপাদিত বীজ দিয়ে তিনি দুই শতাধিক কৃষককে চিয়া বীজ চাষে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তার জীবনকাহিনি প্রমাণ করে, শরীর ভেঙে যেতে পারে কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রম মানুষকে বিজয় শিখরে পৌঁছে দেয়।

সাফল্যের অনুপ্রেরণা মো. জাকির হোসেন
দারিদ্র্য ও প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে নোয়াখালীর জাকির আজ সফল উদ্যোক্তা ও সমাজসেবক। সংসারের টানাপোড়েনের কারণে পড়াশোনায় বেশি দূর এগোতে পারেননি কিন্তু সততা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবন গড়ার স্বপ্ন বুকে ধারণ করেছিলেন।

২০০১ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে মৎস্য চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র ২৫ হাজার টাকা ঋণে শুরু করেন কর্মজীবনের যাত্রা। ছোট সেই উদ্যোগ আজ পরিণত হয়েছে নোয়াখালী অ্যাগ্রো কমপ্লেক্সে। যেখানে একসঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে মৎস্য, পোলট্রি ও কৃষি কার্যক্রম। বর্তমানে দেড় শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান ঘটিয়েছেন জাকির। পাশাপাশি ৫০ জনেরও বেশি বেকার যুবককে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করেছেন।

স্বপ্নবাজ তরুণ মো. খালেদ সাইফুল্লাহ
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার স্বপ্নবাজ যুবক খালেদ সমাজে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। ২০১৮ থেকে তার ছড়ানো আলোতে ইতিবাচকভাবে বদলে গেছে ১০ হাজারেরও বেশি তরুণ-তরুণীর জীবন।খালেদ ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘তারুণ্যের নলছিটি’ নামের একটি অরাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, যা হয়ে উঠেছে তরুণদের স্বপ্ন গড়ার বিদ্যালয়। এখানে তিনি আয়োজন করেন বিতর্ক প্রতিযোগিতা, পাবলিক স্পিকিং, নেতৃত্ব ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মশালা। পাশাপাশি কমিউনিটি লাইব্রেরি ও নিয়মিত ম্যাগাজিন প্রকাশের মাধ্যমে তিনি জাগিয়ে তোলেন পাঠাভ্যাস।

খালেদের দিগন্ত শুধু দেশের গণ্ডিতে নয়, বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তিনি রেখেছেন পদচিহ্ন। ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক সংস্থা সিএআরও-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। ‘স্টিম’ শিক্ষা ও ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধির প্রচার থেকে শুরু করে করোনা মহামারিতে নেওয়া উদ্যোগে তিনি প্রমাণ করেছেন মানবতার প্রতি তার অঙ্গীকার।

তরুণ কারিগর মো. শাহাদৎ হোসেন (শহীদ)
গাইবান্ধা সদরের পূর্বপাড়া পুলবন্দি গ্রামের তরুণ কারিগর শাহাদৎ উপলব্ধি করেছিলেন- অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য কেবল প্রচলিত শিক্ষা যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন প্রযুক্তিগত দক্ষতা, যা তরুণদের আত্মনির্ভরশীলতার পথে এগিয়ে দেবে। এ বিশ্বাসকে শক্তি করে তিনি শুরু করেন নানা সেমিনার ও কর্মশালা, যেখানে হাজারো তরুণ-তরুণী গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং ও প্রোগ্রামিংয়ের মতো আধুনিক দক্ষতা আয়ত্ত করার সুযোগ পান।

শাহাদৎ প্রতিষ্ঠিত ‘টেক-হাব ইনোভেশন ল্যাব’ আজ তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এক উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তারা বিনা খরচে নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন। শাহাদৎ কেবল একজন প্রশিক্ষক নন, তিনি এক দূরদর্শী পথপ্রদর্শক, যিনি যুব সমাজকে দেখিয়েছেন নতুন দিগন্তের পথ।

অনন্য দৃষ্টান্ত মোহাম্মদ দ্বীপ মাহবুব
পাবনার কামারদুলিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া দ্বীপ শৈশব থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন নির্ভীক কণ্ঠস্বর। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সেই কণ্ঠস্বর রূপ নেয় নেতৃত্ব ও আন্দোলনের শক্তিতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি ছাত্র-জনতার অধিকার আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। বিশেষ করে ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

কোটা আন্দোলনের একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে দ্বীপ গুরুতর আহত হন। তবুও দমে যাননি। দীর্ঘ পুনর্বাসনের পর আরও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে মাঠে ফেরেন। তার উদ্দীপনামূলক উক্তি ‘পিছিয়ে যাবো না কোনো অজুহাতের কাছে’ গণ-অভ্যুত্থানের সময় তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার মন্ত্র হয়ে ওঠে। তার সংগ্রাম শুধু কোটা আন্দোলন নয়, বরং বাংলাদেশের যুবসমাজের ন্যায়বিচার ও সমতার আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।

উজ্জ্বল অনুপ্রেরণা হাসান শেখ
রাজশাহীর তরুণ হাসান আজ এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণার নাম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী হয়েও তিনি থেমে থাকেননি কেবল পাঠ্যপুস্তকে। মানুষের দুঃখ-দুর্দশাই হয়ে উঠে তার জীবনের পাঠশালা। করোনা মহামারি বা ঘূর্ণিঝড়, বন্যার মতো দুর্যোগ- সবখানেই তিনি ছিলেন অসহায় মানুষের পাশে।

হাসান ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে রাজশাহীর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। ৫ আগস্টের মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে তার সাহসী নেতৃত্ব আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। সরকারের পতনের পরও তিনি শহরের ধ্বংসস্তূপ সরানো, স্থাপনা সংস্কার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বীরত্বের ছাপ রাখেন। বর্তমানে ‘এসো গড়ি যুব সংঘ’-এর সভাপতি হিসেবে তিনি তরুণদের স্বপ্ন দেখান একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও সুন্দর বাংলাদেশের।

উদ্ভাবনী উদ্যোগে মো. জামাল হোসেন
জামালের উদ্ভাবনী উদ্যোগ ‘সেলুন লাইব্রেরি’ এরই মধ্যে তাকে দেশজুড়ে পরিচিত মুখে পরিণত করেছে। ২০১৪ সালে একটি ছোট পাঠাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি যাত্রা শুরু করেন। জামাল লক্ষ্য করেন, গ্রামের সেলুনে অপেক্ষমাণ মানুষ অলস সময় নষ্ট করে। সেই সময়কে তিনি কাজে লাগান এক অভিনব চিন্তায়। তিনি সেলুনে বই রাখা শুরু করেন।

মাত্র ৫০টি সেলুনে শুরু হওয়া উদ্যোগ আজ বিস্তৃত হয়েছে দেশের ৩০টি জেলার ১ হাজার ২৩৪টি সেলুনে। এ পাঠাগার শুধু অবসর সময়ের সদ্ব্যবহারই নয়, গ্রামীণ সমাজে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকা রাখছে। সরকার এরই মধ্যে এ মডেলটি ৬৪ জেলায় বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে।

সমাজসেবার আলোকবর্তিকা নুরুল আবছার
কক্সবাজারের নুরুল দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে স্বেচ্ছাসেবা ও সমাজকল্যাণে কাজ করছেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি বেকার ও সুবিধাবঞ্চিত তরুণদের জন্য কাজ করার স্বপ্ন দেখতেন। ২০০১ সালে তিনি ‘সায়মুন সংসদ’-এর সঙ্গে যুক্ত এবং ২০১৫ থেকে সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।

নুরুল তরুণদের মাদকমুক্ত রাখতে ও খেলাধুলায় আগ্রহী করতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করেন। পাশাপাশি তার নেতৃত্বে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা, শীতবস্ত্র ও খাদ্য বিতরণ, দুর্যোগকবলিতদের সহায়তা এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। ইভটিজিং, মানবপাচার ও বাল্যবিবাহ বিরোধী সচেতনতা কার্যক্রম এবং পরিবেশ রক্ষায়ও তিনি সক্রিয়। তার বহুমুখী কার্যক্রম প্রায় ৫ লাখ ২৭ হাজার মানুষকে উপকৃত করেছে।

সংগ্রাম ও সাফল্যে মো. মুহিন (মোহনা)
সমাজের বৈষম্য ও প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের ক্ষমতায়নের এক উজ্জ্বল উদাহরণ মোহনা। তিনি ২০১৫ সাল থেকে প্রকাশ্যে নিজের পরিচয় নিয়ে সমাজসেবায় নিরলস কাজ করে চলেছেন। এর আগে ২০০৯ থেকে দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

মোহনার নেতৃত্বে তার সংগঠন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। তিনি ১৭ জনকে চাকরির সুযোগ এবং ৫০ সদস্যের জন্য বাসস্থান ও বিনা সুদে আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করেছেন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি তিনি বাল্যবিবাহ রোধ ও নারীর উদ্যোক্তা তৈরিতেও সক্রিয়।

উজ্জ্বল তারকা আফঈদা খন্দকার
সাতক্ষীরা সুলতানপুরের আফঈদা শৈশব থেকে ফুটবলকে জীবনের অংশ করেছেন। বিকেএসপিতে কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি পেশাদার ফুটবলারের মর্যাদা অর্জন করেন। ২০১৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ ভারতের সুব্রত মুখার্জি কাপে শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় নির্বাচিত হন এবং একই বছর ভুটানে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশকে রানার্স-আপ করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। ২০২১ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে হ্যাটট্রিক করে দলকে শীর্ষে পৌঁছে দেন। ২০২২ সালে ৪৩ সেকেন্ডে গোল করে রেকর্ড স্থাপন করেন এবং ২০২৪ সালের সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে তার গোলে দল চ্যাম্পিয়ন হয়।

আফঈদা ২০২৪-২৫ সালে জাতীয় নারী দলের অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশকে এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে নেতৃত্ব দেন। অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি লাভ করেন দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক।

ফুটবল মাঠের উছাই মং মারমা
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা এ ফুটবলার ছোটবেলা থেকে দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন। ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম মোহামেডানে যোগ দিয়ে তিনি পেশাদার ফুটবলে যাত্রা শুরু করেন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের হয়ে খেলেন এবং একই বছর সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের হয়ে মালদ্বীপের বিপক্ষে অভিষেক ঘটান।

উছাই ২০১৮ সালে এএফসি কাপে তাজিকিস্তানের ক্লাবকে তৃতীয় স্থান অর্জনে সাহায্য করেন। ২০১৯ সালে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ভারতের বদৌছা কাপে চ্যাম্পিয়ন হন। ২০২১-২২ মৌসুমে ফোর্টিস এফসি লিমিটেডের হয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে চ্যাম্পিয়ন হন। মাঠের দক্ষতার পাশাপাশি তিনি একজন নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবক। যার ফলস্বরূপ ২০২৫ সালে তিনি বান্দরবান জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত হন।

এ ১২ জনের মধ্যে সুরাইয়া, আক্কাচ ও জাকির যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে; খালেদ ও শাহাদৎ শিক্ষা, বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরিতে; দ্বীপ ও হাসান দেশপ্রেম, বীরত্ব ও সাহসিকতায়; জামাল, নুরুল ও মোহনা জ্যেষ্ঠদের প্রতি আদর্শ সেবা ও সমাজকল্যাণে এবং আফঈদা ও উছাই ক্রীড়া, কলা ও সংস্কৃতিতে ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।

সবুজদেশ/এসএএস

Tag :

যেসব অবদানে ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড পেলেন ১২ জন

Update Time : ০৮:৪৪:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

‘যারা যারা পুরস্কার পেয়েছেন তারা একটু দাঁড়াবেন। আমরা সবাই একসঙ্গে করতালি দিয়ে তাদের সম্মানিত করবো।’

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের শুরুতে উপস্থিত সবার উদ্দেশে এ আহ্বান জানান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।

অধ্যাপক ইউনূসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পুরস্কারপ্রাপ্ত ১২ জন উঠে দাঁড়ান। তাদের মধ্যে নয় পুরুষ একই রঙের পাঞ্জাবি-পায়জামা এবং দুই নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের একজন শাড়ি পরিধান করেছিলেন। এ সময় সরকারের একাধিক উপদেষ্টা, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মীসহ সবাই করতালি দিয়ে তাদের অভিনন্দন জানান।

এবার পাঁচটি বিভাগে ১২ জনকে ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।

প্রতিকূলতা জয়ী সুরাইয়া ফারহানা রেশমা
বগুড়ার শেরপুরে প্রতিকূলতা জয় করে রেশমা হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা। অল্প বয়সে বিয়ে ও স্বামীর নির্যাতনের পর অসহায় অবস্থায় পড়লেও হার মানেননি। অদম্য ইচ্ছাশক্তিসহ ২০১৪ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ‘রেশমা কৃষি উদ্যোগ’ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এখন তার সমন্বিত খামারে মাসে প্রায় ৩০ টন কেঁচো সার, ট্রাইকো-কম্পোস্ট ও নিরাপদ সবজি উৎপাদিত হয়‌। পশু পালন ও মাছ চাষ মিলিয়ে বছরে প্রায় ৪০ লাখ টাকা আয় করছেন। তিনি ১৬ নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং ৬৮০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।

কৃষি বিপ্লবী মো. আক্কাচ খান
মাগুরার এ কৃষক লিখেছেন জীবনসংগ্রামের অনবদ্য কাব্য। মাত্র সাত মাস বয়সে পোলিও তার দুই পা কেড়ে নিলেও থেমে যায়নি স্বপ্ন ও সাহসের সঙ্গে পথ চলা। ২০১৮ সালের মাত্র ৮ হাজার টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করেন মিষ্টি কুমড়ার চাষ। আজ তিনি প্রায় তিন একর জমিতে নানা ফসলের মিশ্র চাষ করছেন।

করোনার কঠিন সময়ে কালোজিরা চাষ এবং পরে মসলা গবেষণা কেন্দ্রের সহায়তায় চিয়া বীজ উৎপাদন তার পরিশ্রমকে নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেয়। নিজের উৎপাদিত বীজ দিয়ে তিনি দুই শতাধিক কৃষককে চিয়া বীজ চাষে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তার জীবনকাহিনি প্রমাণ করে, শরীর ভেঙে যেতে পারে কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রম মানুষকে বিজয় শিখরে পৌঁছে দেয়।

সাফল্যের অনুপ্রেরণা মো. জাকির হোসেন
দারিদ্র্য ও প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে নোয়াখালীর জাকির আজ সফল উদ্যোক্তা ও সমাজসেবক। সংসারের টানাপোড়েনের কারণে পড়াশোনায় বেশি দূর এগোতে পারেননি কিন্তু সততা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবন গড়ার স্বপ্ন বুকে ধারণ করেছিলেন।

২০০১ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে মৎস্য চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র ২৫ হাজার টাকা ঋণে শুরু করেন কর্মজীবনের যাত্রা। ছোট সেই উদ্যোগ আজ পরিণত হয়েছে নোয়াখালী অ্যাগ্রো কমপ্লেক্সে। যেখানে একসঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে মৎস্য, পোলট্রি ও কৃষি কার্যক্রম। বর্তমানে দেড় শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান ঘটিয়েছেন জাকির। পাশাপাশি ৫০ জনেরও বেশি বেকার যুবককে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করেছেন।

স্বপ্নবাজ তরুণ মো. খালেদ সাইফুল্লাহ
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার স্বপ্নবাজ যুবক খালেদ সমাজে আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। ২০১৮ থেকে তার ছড়ানো আলোতে ইতিবাচকভাবে বদলে গেছে ১০ হাজারেরও বেশি তরুণ-তরুণীর জীবন।খালেদ ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘তারুণ্যের নলছিটি’ নামের একটি অরাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, যা হয়ে উঠেছে তরুণদের স্বপ্ন গড়ার বিদ্যালয়। এখানে তিনি আয়োজন করেন বিতর্ক প্রতিযোগিতা, পাবলিক স্পিকিং, নেতৃত্ব ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মশালা। পাশাপাশি কমিউনিটি লাইব্রেরি ও নিয়মিত ম্যাগাজিন প্রকাশের মাধ্যমে তিনি জাগিয়ে তোলেন পাঠাভ্যাস।

খালেদের দিগন্ত শুধু দেশের গণ্ডিতে নয়, বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তিনি রেখেছেন পদচিহ্ন। ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক সংস্থা সিএআরও-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন। ‘স্টিম’ শিক্ষা ও ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধির প্রচার থেকে শুরু করে করোনা মহামারিতে নেওয়া উদ্যোগে তিনি প্রমাণ করেছেন মানবতার প্রতি তার অঙ্গীকার।

তরুণ কারিগর মো. শাহাদৎ হোসেন (শহীদ)
গাইবান্ধা সদরের পূর্বপাড়া পুলবন্দি গ্রামের তরুণ কারিগর শাহাদৎ উপলব্ধি করেছিলেন- অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য কেবল প্রচলিত শিক্ষা যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন প্রযুক্তিগত দক্ষতা, যা তরুণদের আত্মনির্ভরশীলতার পথে এগিয়ে দেবে। এ বিশ্বাসকে শক্তি করে তিনি শুরু করেন নানা সেমিনার ও কর্মশালা, যেখানে হাজারো তরুণ-তরুণী গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং ও প্রোগ্রামিংয়ের মতো আধুনিক দক্ষতা আয়ত্ত করার সুযোগ পান।

শাহাদৎ প্রতিষ্ঠিত ‘টেক-হাব ইনোভেশন ল্যাব’ আজ তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এক উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম, যেখানে তারা বিনা খরচে নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন। শাহাদৎ কেবল একজন প্রশিক্ষক নন, তিনি এক দূরদর্শী পথপ্রদর্শক, যিনি যুব সমাজকে দেখিয়েছেন নতুন দিগন্তের পথ।

অনন্য দৃষ্টান্ত মোহাম্মদ দ্বীপ মাহবুব
পাবনার কামারদুলিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া দ্বীপ শৈশব থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন নির্ভীক কণ্ঠস্বর। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সেই কণ্ঠস্বর রূপ নেয় নেতৃত্ব ও আন্দোলনের শক্তিতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি ছাত্র-জনতার অধিকার আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। বিশেষ করে ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানে যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

কোটা আন্দোলনের একপর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে দ্বীপ গুরুতর আহত হন। তবুও দমে যাননি। দীর্ঘ পুনর্বাসনের পর আরও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে মাঠে ফেরেন। তার উদ্দীপনামূলক উক্তি ‘পিছিয়ে যাবো না কোনো অজুহাতের কাছে’ গণ-অভ্যুত্থানের সময় তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার মন্ত্র হয়ে ওঠে। তার সংগ্রাম শুধু কোটা আন্দোলন নয়, বরং বাংলাদেশের যুবসমাজের ন্যায়বিচার ও সমতার আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।

উজ্জ্বল অনুপ্রেরণা হাসান শেখ
রাজশাহীর তরুণ হাসান আজ এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণার নাম। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী হয়েও তিনি থেমে থাকেননি কেবল পাঠ্যপুস্তকে। মানুষের দুঃখ-দুর্দশাই হয়ে উঠে তার জীবনের পাঠশালা। করোনা মহামারি বা ঘূর্ণিঝড়, বন্যার মতো দুর্যোগ- সবখানেই তিনি ছিলেন অসহায় মানুষের পাশে।

হাসান ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে রাজশাহীর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান। ৫ আগস্টের মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে তার সাহসী নেতৃত্ব আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। সরকারের পতনের পরও তিনি শহরের ধ্বংসস্তূপ সরানো, স্থাপনা সংস্কার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বীরত্বের ছাপ রাখেন। বর্তমানে ‘এসো গড়ি যুব সংঘ’-এর সভাপতি হিসেবে তিনি তরুণদের স্বপ্ন দেখান একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও সুন্দর বাংলাদেশের।

উদ্ভাবনী উদ্যোগে মো. জামাল হোসেন
জামালের উদ্ভাবনী উদ্যোগ ‘সেলুন লাইব্রেরি’ এরই মধ্যে তাকে দেশজুড়ে পরিচিত মুখে পরিণত করেছে। ২০১৪ সালে একটি ছোট পাঠাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি যাত্রা শুরু করেন। জামাল লক্ষ্য করেন, গ্রামের সেলুনে অপেক্ষমাণ মানুষ অলস সময় নষ্ট করে। সেই সময়কে তিনি কাজে লাগান এক অভিনব চিন্তায়। তিনি সেলুনে বই রাখা শুরু করেন।

মাত্র ৫০টি সেলুনে শুরু হওয়া উদ্যোগ আজ বিস্তৃত হয়েছে দেশের ৩০টি জেলার ১ হাজার ২৩৪টি সেলুনে। এ পাঠাগার শুধু অবসর সময়ের সদ্ব্যবহারই নয়, গ্রামীণ সমাজে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকা রাখছে। সরকার এরই মধ্যে এ মডেলটি ৬৪ জেলায় বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে।

সমাজসেবার আলোকবর্তিকা নুরুল আবছার
কক্সবাজারের নুরুল দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে স্বেচ্ছাসেবা ও সমাজকল্যাণে কাজ করছেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি বেকার ও সুবিধাবঞ্চিত তরুণদের জন্য কাজ করার স্বপ্ন দেখতেন। ২০০১ সালে তিনি ‘সায়মুন সংসদ’-এর সঙ্গে যুক্ত এবং ২০১৫ থেকে সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন।

নুরুল তরুণদের মাদকমুক্ত রাখতে ও খেলাধুলায় আগ্রহী করতে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করেন। পাশাপাশি তার নেতৃত্বে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা, শীতবস্ত্র ও খাদ্য বিতরণ, দুর্যোগকবলিতদের সহায়তা এবং দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। ইভটিজিং, মানবপাচার ও বাল্যবিবাহ বিরোধী সচেতনতা কার্যক্রম এবং পরিবেশ রক্ষায়ও তিনি সক্রিয়। তার বহুমুখী কার্যক্রম প্রায় ৫ লাখ ২৭ হাজার মানুষকে উপকৃত করেছে।

সংগ্রাম ও সাফল্যে মো. মুহিন (মোহনা)
সমাজের বৈষম্য ও প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের ক্ষমতায়নের এক উজ্জ্বল উদাহরণ মোহনা। তিনি ২০১৫ সাল থেকে প্রকাশ্যে নিজের পরিচয় নিয়ে সমাজসেবায় নিরলস কাজ করে চলেছেন। এর আগে ২০০৯ থেকে দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

মোহনার নেতৃত্বে তার সংগঠন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে। তিনি ১৭ জনকে চাকরির সুযোগ এবং ৫০ সদস্যের জন্য বাসস্থান ও বিনা সুদে আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করেছেন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি তিনি বাল্যবিবাহ রোধ ও নারীর উদ্যোক্তা তৈরিতেও সক্রিয়।

উজ্জ্বল তারকা আফঈদা খন্দকার
সাতক্ষীরা সুলতানপুরের আফঈদা শৈশব থেকে ফুটবলকে জীবনের অংশ করেছেন। বিকেএসপিতে কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি পেশাদার ফুটবলারের মর্যাদা অর্জন করেন। ২০১৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ ভারতের সুব্রত মুখার্জি কাপে শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় নির্বাচিত হন এবং একই বছর ভুটানে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশকে রানার্স-আপ করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। ২০২১ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে হ্যাটট্রিক করে দলকে শীর্ষে পৌঁছে দেন। ২০২২ সালে ৪৩ সেকেন্ডে গোল করে রেকর্ড স্থাপন করেন এবং ২০২৪ সালের সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে তার গোলে দল চ্যাম্পিয়ন হয়।

আফঈদা ২০২৪-২৫ সালে জাতীয় নারী দলের অধিনায়ক হিসেবে বাংলাদেশকে এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে নেতৃত্ব দেন। অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি লাভ করেন দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক।

ফুটবল মাঠের উছাই মং মারমা
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা এ ফুটবলার ছোটবেলা থেকে দেশের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন। ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম মোহামেডানে যোগ দিয়ে তিনি পেশাদার ফুটবলে যাত্রা শুরু করেন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের হয়ে খেলেন এবং একই বছর সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের হয়ে মালদ্বীপের বিপক্ষে অভিষেক ঘটান।

উছাই ২০১৮ সালে এএফসি কাপে তাজিকিস্তানের ক্লাবকে তৃতীয় স্থান অর্জনে সাহায্য করেন। ২০১৯ সালে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে ভারতের বদৌছা কাপে চ্যাম্পিয়ন হন। ২০২১-২২ মৌসুমে ফোর্টিস এফসি লিমিটেডের হয়ে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে চ্যাম্পিয়ন হন। মাঠের দক্ষতার পাশাপাশি তিনি একজন নিবেদিত স্বেচ্ছাসেবক। যার ফলস্বরূপ ২০২৫ সালে তিনি বান্দরবান জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত হন।

এ ১২ জনের মধ্যে সুরাইয়া, আক্কাচ ও জাকির যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানে; খালেদ ও শাহাদৎ শিক্ষা, বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরিতে; দ্বীপ ও হাসান দেশপ্রেম, বীরত্ব ও সাহসিকতায়; জামাল, নুরুল ও মোহনা জ্যেষ্ঠদের প্রতি আদর্শ সেবা ও সমাজকল্যাণে এবং আফঈদা ও উছাই ক্রীড়া, কলা ও সংস্কৃতিতে ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।

সবুজদেশ/এসএএস