মেয়ের নির্যাতনের কারন জানতে চেয়ে বাবাও হলেন জখম
যৌতুকের শিকলে আটকা কালীগঞ্জের গৃহবধু তানিয়া
মেয়ে তানিয়াকে বিয়ে দিয়েছেন ৮ বছর আগে। এরমধ্যে ৩ দফায় জামাইকে যৌতুক হিসেবে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এরপরও টাকার দাবিতে মেয়ের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে জামাইসহ তার পরিবারের লোকজন। সর্বশেষ গত দুই ধরে তানিয়ার পায়ে শিকল বেঁধে তালাবদ্ধ রাখে। খবর পেয়ে তানিয়ার বাবা মেয়ের বাড়িতে গিয়ে মেয়ের পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় দেখেন। কেন এমনটি করা হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে জামাই সোহেল রানা তাকেও মারধর করে আটকে রাখে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাবা মেয়ে উভয়কে উদ্ধার করে।
ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার বাদেডিহী গ্রামে। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার রাতে তানিয়ার বাবা রিপন গাজি বাদি হয়ে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মেয়ের বাবা একই উপজেলার মঙ্গলপৈতা গ্রামের রিপন গাজি সবুজদেশ নিউজকে জানান, তানিয়ার ৩ মাসের শিশুসহ দুইটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে জামাই সোহেল রানা তার মেয়েকে প্রায়ই যৌতুকের জন্য মারধর করতো। যে কারনে মেয়ের ভালো চেয়ে কয়েক দফায় বেশ কিছু টাকাও দিয়েছেন। কিন্ত যৌতুক লোভী জামাই ও তার পরিবারের লোকজনের আচরনের কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং তানিয়াকে আবার টাকা আনতে বলে। এতে সে রাজি না হওয়ায় গত ৬ জানুয়ারি সকালে তানিয়াকে মারধর করে পায়ে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ ঘরে আটকিয়ে রাখে। খবর পেয়ে পরের দিন সকালে জামাই বাড়ি গেলে তাকেও মারধর করে জামাইসহ বাড়ির লোকজন। অবশেষে বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হলে মঙ্গলবার বেলা ১২ টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উভয়কে উদ্ধার করে।
নির্যাতিত গৃহবধূ তানিয়া খাতুন সবুজদেশ নিউজকে জানান, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য স্বামীসহ তার পরিবারের লোকজন আমার ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে। বাবা গরীব মানুষ হলেও মেয়ের সুখের জন্য কয়েক দফা টাকা দিয়েছেন। তারপরও টাকার জন্য নির্যাতন বন্ধ করেনি। সর্বশেষ গত সোমবার আমার শাশুড়ি, স্বামী ও ননদ মিলে মারধর করে পায়ে শিকল দিয়ে বেধে তালাবদ্ধ অবস্থায় আটকে রাখে। খবর শুনে আমার বাবা এসে নির্যাতনের কারন জানতে চাইলে তাকেও মারধর করে। বিষয়টি পুলিশ জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পৌছে আমাদের উদ্ধার করে। তিনি বলেন, এমন যৌতুক লোভী স্বামী ও তার পরিবারের লোকজনদের শাস্তি হওয়ায় উচিৎ।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম সবুজদেশ নিউজকে জানান, কোন এক গৃহবধুকে পায়ে শিকল বেঁধে আটকে রাখা হয়েছে শুনে তিনি পুলিশ পাঠিয়েছিলেন। তারা ঘটনাস্থল থেকে গৃহবধু তানিয়াকে পায়ে শিকল বাঁধা ও তার বাবা রিপন গাজিকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। এ ঘটনায় নির্যাতিত তানিয়ার বাবা রিপন গাজি বাদি হয়ে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
সবুজদেশ/এসএএস